আর্জিনা এখন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে।
মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় আর্জিনার সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে আর্জিনা কেঁদে ফেলে।
প্রথম প্রথম তারা সবাই ভাল ব্যবহার করত; কিন্তু গত এক বছর থেকে কাজ করতে সামান্য ভুল হলেই গৃহকর্ত্রী আমেনা বেগম ও তার মেয়ে লাভলী গরম খুনতি দিয়ে ছ্যাঁকা দিত শরীরের বিভিন্ন স্থানে। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের আঙুল চেপে ধরত। নির্যাতন করার সময় তার মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দিত বলে অভিযোগ করে আর্জিনা।
আর্জিনার মা আনজু বেগম বলেন, তিন মেয়ে ও এক ছেলের ঠিকমতো ভরণ-পোষণের সামর্থ্য ছিল না তাদের। আর্জিনার বাবা আনছার আলী দিনমজুর। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় আরজিনা।
“সাড়ে ছয় বছর বয়স থেকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নে আমার বোন রুবিনা বেগমের কাছে থাকত আর্জিনা,” বলেন আনজু।
আনজু বলেন, ২০০৯ সালে পূর্বপরিচিত নীলফামারীর ডিমলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের সুটিবাড়ী গ্রামের শাহানুর ইসলামের সহায়তায় টাঙ্গাইলের বিশ্বাস বেতকার শিবনাথ পাড়ার ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামের বাড়িতে মেয়েকে পাঠান গৃহকর্মী হিসেবে।
“ওই সময় গৃহকর্তা তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, আর্জিনা শুধু কাজের মেয়ে নয় আমার নিজের মেয়ের মতো থাকবে। সে আমার মেয়ের সাথে পড়ালেখাও করবে এবং বড় হলে তাকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেব।”
প্রথম দিকে ভালোই ছিল। প্রতিদিন ফোনে কথা বলত। তাজুল ইসলাম প্রতি ঈদে আর্জিনাকে দিয়ে নতুন জামাকাপড় পাঠাতেন বলে জানান আনজু।
“কিন্তু গত এক বছর থেকে মেয়ের সাথে কথা বলতে দিচ্ছিল না তারা।”
আনজু বলেন, গত বৃহস্পতিবার আর্জিনার দাদা নূর মোহাম্মদ নাতনিকে আনতে টাঙ্গাইল গিয়ে তার অসুস্থতার খবর পান। শনিবার ওই বাড়ি থেকে তাকে আর্জিনার খালা রুবিনার বাড়িতে আনেন তার দাদা।
রোববার আর্জিনাকে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিমলা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনুপ কুমার রায় বলেন, আর্জিনার শরীরে থাকা ক্ষত দেখে মনে হচ্ছে তার উপর র্দীঘদিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে। তার ডান হাতের হাড় ভাঙ্গা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত রয়েছে। মাথার পিছন দিকেও ক্ষত রয়েছে।
তাকে যখন ভর্তি করা হয়েছিল তখন গুরুতর অসুস্থ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসা শুরু করায় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
মেয়েকে নির্যাতনকারীর শাস্তি দাবি করেছেন আর্জিনার বাবা আনছার আলী।
ডিমলা থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন এবং মেয়েটির শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
তার বাবা-মাকে মামলা দায়েরর জন্য থানায় আসতে বলা হয়েছে। মামলা দায়ের হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে আর্জিনার উপর এমন নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে নীলফামারী জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভানেত্রী ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী বলেন, নৃশংস এই ঘটনার বিচার না হলে সমাজে এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে।
এ ব্যাপারে গৃহকর্তা তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
#ছবি, লেখা বিডিনিউজ থেকে কপি করা হয়েছে।