পাট থেকে তৈরি এক ধরনের অর্গানিক পানীয় আবিষ্কার করেছেন পাট গবেষণা কেন্দ্রের (বিজেআরআই) বিজ্ঞানীরা। বহু আগে আমাদের দেশে পাট থেকে পানীয় তৈরির প্রচলন থাকলেও কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গিয়েছিল। এর সাথে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নতুনভাবে আবিষ্কার করা এই পানীয় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাবে।
পাট থেকে বানানো এই পানীয়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘জুট গ্রিন টি’। বিজেআরআই এর বিজ্ঞানীরা জানান, পানীয়টিতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। পালং শাকের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ক্যালরি রয়েছে এতে।
বিজেআরআই এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নাসিমুল গনি বলেন, “জুট গ্রিন টি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়।” কোষ্ঠ কাঠিন্য, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও বার্ধক্য রোধ করে এটি। তার আশা, এসব ভেষজ গুণের কারণে জনপ্রিয় হবে জুট গ্রিন টি।
চায়ের মতোই খুব সহজেই তৈরি করা যায় জুট গ্রিন টি। এক গ্লাস ফুটন্ত পানিতে পরিমাণমত গুড়ো উপকরণ মিশিয়ে মিশ্রণটি সবুজ রঙ না হওয়া পর্যন্ত নাড়াতে হবে। স্বাদ বাড়াতে মেশানো যেতে পারে চিনি।
বিজেআরআই এর মহাপরিচালক ড. মো. কামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র পাটের আঁশের গুরুত্ব ছিল। কিন্তু সেই দিন আর নেই। এখন আমরা পাটের ব্যবহারে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছি। উচ্চ মানসম্মত হওয়ায় পাট থেকে তৈরি ভেষজ পানীয় বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করবে।”
তিনি আরও জানান, সরকার পাটের বহুমুখী ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়ার পর পানীয় তৈরির বিষয়টি বিজেআরআই এর কর্মকর্তাদের মাথায় আসে।
এখানকার কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জুট গ্রিন টি পান করেছেন। তিনি নিজেও এর প্রশংসা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাগরময় বড়ুয়া জানান, অন্যান্য শাকসবজির মতোই পাটের পাতাতেও আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ফাইবার, শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন রয়েছে।
নতুন রেসিপিটি জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের কর্মকর্তাদের দিয়েছেন বিজেআরআই এর কর্মকর্তারা। প্রমোশন সেন্টারের পরিচালক মইনুল হক বলেন, “বিভিন্ন অর্গানিক পণ্য জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পাট থেকে তৈরি পানীয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের আশা দ্রুত এগিয়ে যাবে এই ক্ষেত্রটি।”
বাণিজ্যিকভাবে পাট থেকে পানীয় তৈরির ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ারসি অ্যাকুয়াটেক লিমিটেড। বিজেআরআই এর তৈরি করা রেসিপির ভিত্তিতে অর্গানিক গ্রিন টি তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইসমাইল খান জানান, নতুন পণ্যটির বিএসটিআই ল্যাব পরীক্ষার ফলাফল ইতোমধ্যে তাঁরা পেয়েছেন। ‘মিরাকেল অর্গানিক গ্রিন টি’ নামে এর পেটেন্টের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তাঁরা।
ইসমাইল খান আরও জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ২০০ কেজি গ্রিন টি জার্মানি পাঠিয়েছেন তারা। প্রতি কেজি গ্রিন টি সেখানে ১২ ডলার দরে বিক্রি করা হবে। তার আশা খুব শিগগিরই দেশীয় বাজারে পাওয়া যাবে ‘জুট অর্গানিক গ্রিন টি’।