পৃথিবীর সকল দেশেই দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে, তবে দেশভেদে দিনটি উদ্যাপনে ভিন্নতা রয়েছে। অনেক দেশে আজকে রয়েছে সরকারি ছুটি। যেমন- আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া।
চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার এবং নেপালে শুধু নারীরাই আজকের দিনে সরকারি ছুটি ভোগ করে থাকেন।
সর্বপ্রথম নারী শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে ১৮৫৭ সালে আমেরিকায়। মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। মিছিলে সরকারি বাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। সেখান থেকেই নারী অধিকারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৫৯ New York textile industry ‘র নারী শ্রমিকেরা প্রথম ইউনিয়ন গঠন করে। এরপর দীর্ঘদিন বিষয়টি আর সামনে আসেনি। বা বড় কোন আন্দোলন সংগঠিত হয়নি।
৮মার্চ ১৯০৮ সালে হাজার হাজার নারী নিউইয়র্কের রাস্তায় সংগঠিত হয় কর্মঘণ্টা কমানো, মজুরী বাড়ানো এবং ভোটাধিকারের দাবিতে।
প্রথম নারী দিসব উদ্যাপিত হয় ১৯০৯ সালে আমেরিকায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান তৎকালীন সমাজতান্ত্রীক দলের নেতৃত্বে দিনটি উদ্যাপিত হয়েছিল ‘নারী দিবস’ হিসেবে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত একইভাবে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রবিবার নারী দিবস উদ্যাপিত হয়েছে।
১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে নারী দিবস আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যাপনের বিষয়টি সামনে আনা হয়। জার্মান সমাজতন্ত্রী ক্লারা জেটকিন বিষয়টি সর্বপ্রথম উত্থাপন করেন।
১৯১১ সালের ১৯ মার্চ জার্মান, সুইডেন, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডের হাজার হাজার মহিলা দিবসটি পালন করেন।
রাশিয়া প্রথম দিবসটি পালন করে ১৯১৩ সালে। ইউরোপেও ১৯১৩ সালে দিনটি গুরুত্বের উদ্যাপিত হয়। এবং নারী অধিকারের বিষয়টি বিশেষভাবে সামনে আসে।
১৯১৭ সালে (প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে) রাশিয়ান মহিলারা যুদ্ধে বিশ লক্ষ লোক মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে ‘রুটি এবং শান্তি’ শিরোণামে দিনটি উদ্যাপন করে।
১৯৭৫ সালে নারী দিবস জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ জাতিসংঘ নারী দশক ঘোষণা করে।
১৯৮২ সালে ইরানের কয়েকজন নারী জনসমক্ষে বোরখা খুলে ফেলে দিনটি উদ্যাপন করে। এটি ছিল তাদের জন্য বিশেষ সাহসী কাজ, কারণ, ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানে বোরখা পরে জনসমক্ষে আসতে হয়।
৮ মার্চ ২০০৫ বিশ্বব্যাপী মিছিল আয়োজন করা হয় “World Carta for Women” বাস্তবায়নের জন্য।
যদিও নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অনেক কিছুই করা হয়েছে, তবু যেন কিছুই হয়নি। তাই দিবসটির গুরুত্ব আজও সেই একই রয়েছে। এখনও কল-কারখানায় নারী শ্রমিকেরা পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় কম মজুরী পান। এখনো নারীর গৃহকর্মের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৈষম্য রয়েছে। তাই আজকের দিনে পুরুষের শপথ হওয়া উচিৎ- “আমরা নারীর অধিকার হরণ করব না।”