পুলিশের দাবি, খাদেম হাবিব একাই মুয়াজ্জিন বেলালকে হত্যা করে। তবে এ হত্যা মিশনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেয় পাঁচজন। কেরানীগঞ্জের একটি মসজিদে বসে বেলালকে হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেন খুনিরা। গত দুই বছর আগে থেকেই মূলত বেলালকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর এর জন্য ইতঃপূর্বেও বেলালকে বিভিন্ন উপায়ে দুইবার খুন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। বেলাল হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ জোনের ডিসি মফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ঝব্বু খানম মসজিদের ৩৩টি দোকান আছে। ওই দোকান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ভাড়া উঠতো। মসজিদের দানবাক্স থেকেও আয় হতো কয়েক হাজার টাকা। এ ছাড়া, বেলাল বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েও বাড়তি রোজগার করতেন। মসজিদের স্টাফদের বেতন দেয়ার পর অতিরিক্ত টাকা বেলাল নিজের অ্যাকাউন্টে জমা রাখতেন এবং বাইরের লোকের কাছে লাভে খাটাতেন। খাদেম হাবিব ও দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন মোশাররফ মসজিদে বেলালের এই একক আধিপত্য মেনে নিতে পারছিলেন না। এ কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তবে বেলালকে খুনের পেছনে তার বন্ধু সারোয়ার হালিমের ইন্ধন ছিল। কারণ বেলাল তার বন্ধু সারোয়ারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা লাভে রেখেছিলেন। বেলাল মরে গেলে তার টাকা পরিশোধ করা লাগবে না এবং কিছু টাকা সে হাবিবকে দেবে। এই ইচ্ছা সে হাবিবের কাছে প্রকাশ করে। হাবিব টাকা পাবে, মূল মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পাবে, মসজিদের আর্থিক কর্তৃত্ব পাবে এসব বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেলালকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
মফিজ উদ্দিন বলেন, হাবিব, মোশাররফ ও তোফাজ্জল কেরানীগঞ্জের একটি মসজিদে বসে বেলালকে হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেন।
গ্রেফতারকৃত মোশাররফ পুলিশকে বলেছেন, ছয় মাস আগে ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতনে তিনি ওই মসজিদে চাকরি নেন। আর খাদেম হাবিব ওই মসজিদে কাজ করছিলেন তিন বছর ধরে। তার বেতন মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। হাবিব খাদেমের কাজ করলেও তাকে, বেলাল ও মোশাররফকে এলাকার মানুষ মুয়াজ্জিন হিসেবে চিনতেন। পড়ালেখা শেষ না করায় হাবিবের পে কখনো প্রধান মুয়াজ্জিন হওয়া সম্ভব ছিল না। এ কারণে তার মধ্যে হতাশা ছিল। তাই বেলালকে হত্যা করতে পারলে মোশাররফকে মুয়াজ্জিন বানানো হবে, মসজিদের আয়ের টাকা তারা ভাগ করে নেবেন। এমন লোভ দেখানোর পরই মোশাররফ ওই পরিকল্পনায় রাজি হন। তিনি জানান, মোশাররফ ও হাবিবের সাথে বেলালের ধর্মীয় মতাদর্শেরও বিরোধ ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তবে অর্থ ও মতার লোভই এ হত্যার পেছনের মূল কারণ।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিসি মফিজ বলেন, মসজিদের খাদেম হাবিব অন্য আসামিদের সাথে পরামর্শ করে দুই মাস আগে চকবাজার থেকে ধারালো চাকু কিনে আনেন। পরিচয় গোপন রাখতে তারা মুখোশও কেনেন। হত্যা ঘটনার দুই দিন আগে হাবিব মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে নড়াইলের নড়াগাতিতে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী এক দিন পর তিনি ঢাকায় ফিরে কেরানীগঞ্জে অবস্থান নেন। ঘটনার রাতে হাবিব ঝব্বু মসজিদে এসে বেলালের ফেরার জন্য অপো করতে থাকেন। রাত ১১টার দিকে বেলাল এলে হাবিব তার সাথে সিঁড়ি দিয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠেন। দোতলায় ওজু করে বেলাল তিনতলায় নিজের ঘরে যাওয়ার সময় সিঁড়ির মাঝখানে হাবিব তাকে এলোপাতাড়ি ছুরি মারেন। এতে তার প্রচুর রক্তরণ হয়।
মোশাররফ জানিয়েছে, বেলালকে ছুরিকাঘাত করলে তার চিৎকার তিনি শুনতে পান। কিন্তু তিনি এগিয়ে আসেননি। হাবিব খুনের পর বেলালের পকেট থেকে ছয় হাজার টাকা, রুমের চাবি ও মোবাইল ফোন নেন। পরে তিনতলায় ওঠে মোশাররফকে দুই হাজার টাকা দেন। এরপর রাত ১১টার দিকে বের হয়ে বাবুবাজারসংলগ্ন ড্রেনে ছুরিটি ফেলে দেন। এই হত্যা পরিকল্পনায় আরো একজনের নাম এসেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা পারভেজ জানালেও গ্রেফতারের আগে তার পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।