রাইহান রনোঃ আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিতব্য ভোটযুদ্ধকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় দলীয় প্রার্থী এবং সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে দারুন উত্তেজনা। অপরদিকে সাধারণ ভোটাররা রয়েছে নিরাপদ অবস্থানে কারণ দলীয় প্রার্থী ও সমর্থকরা সবার সাথে ভাল আচরণ করছে। এ পর্যন্ত ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সদর উপজেলায় কোন সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে আদাজল খেয়ে নেমেছে প্রার্থীর আত্মীয়-স্বজনরাও। সাদাকালো পোস্টার ছাড়াও মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে বড় বড় দলীয় প্রতীক। একটা উৎসব মুখর পরিবেশে সবাই অপেক্ষা করছে আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিতব্য ভোটযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কার গলায় বিজয়ের মালা শোভা পায় সেই ফলাফলের জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুণছে তারা। এবার সদরের ৮ ইউনিয়নে একজন নারী প্রার্থীসহ মোট ৪৭ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৭ জন প্রার্থী। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু; তৃণমূল ভোটে মনোনয়ন প্রার্থীতায় অংশ গ্রহণ না করা; পরবর্তীতে তৃণমূলের রায়কে উপেক্ষা করে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়া ইত্যাদি কারণ কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি করলেও জেলা আওয়ামীলীগের ১নং যুগ্ম সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বিরা দলীয়ভাবে ভোট টানলেও তা জেতার জন্য যথেষ্ট নয় বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। তবে এবার নিজের খোলস ভেঙে তাকে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হচ্ছে। দলীয় লোকজন বিরোধীতা না করলে নির্বাচনে জয়ী হতে তার কো্নো সমস্যা থাকবে না কিন্তু বিরোধীতা করলে ফলাফল উল্টেও যেতে পারে। এখানে তার প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থী মোস্তফা গোলাম রব্বানী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আইয়ুব আলী।
বেলগাছা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুর রহমান। গত তিনবার থেকে তিনি এই ইউনিয়নে প্রায় কোনো প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় এই ইউনিয়নে নিজের একটা আলাদা অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন এই প্রার্থী। এবার তার দূর্গে আঘাত হানতে জেলা আওয়ামীলীগ একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি দাঁড় করিয়েছে। ফলে সব হিসেব ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক একজন স্বজ্জন ব্যক্তি। তার পরিবারের রয়েছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আর ক্ষেতমজুর আন্দোলনে রয়েছে বিরাট ত্যাগী ভূমিকা। ফলে সাধারণ মানুষ এবার যার দিকে মুখ ঘোরাবে, সেই পাবে কাঙ্খিত জয়। তবে বিএনপি’র দুর্দশার সময় ছাত্রদল নেতা মাহবুব দলকে শুধু আকড়ে ধরেনি; দলের জন্য তিনি থেকেছেন নিবেদিত প্রাণ। ফলে দু’শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি নিরবে নিভৃতে ভোটের আগে ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। এই ইউনিয়নের ফলাফল নিয়ে সবার রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
হলোখানা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একমাত্র এই ইউনিয়ন থেকে নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবা বেগম। তিনি স্বতন্ত্র পদে লড়ছেন। এই ইউনিয়নে ত্রিমূখী লড়াই হবে বলে সবাই ধারণা করছেন। এই ইউনিয়নে পরপর দুবারের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক। তার রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। তার প্রতিবেশী সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরনবী সরকার। তিনি এবার লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। অপরদিকে সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম আওয়ামীলীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তারও রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। ফলে ত্রিমূখী লড়াইয়ে লাভ হতে পারে নৌকার।
মোগলবাসা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন। ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান নুরজামাল বাবলু। এখানে ত্রিমূখী লড়াই হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক শীর্ষ দুই দলের প্রার্থীর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে্ন। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনো্নীত প্রার্থী আহম্মদ আলীরও রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। ফলে এই ইউনিয়নে কি হবে তা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। তিনি পরপর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগের মহিউল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর আড়ালে জামায়াত নেতা আব্দুল মতিন। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের হাফিজুর রহমানের রয়েছে নিজস্ব কিছু ভোট। এখানে বিএনপি প্রার্থীর সাথে অপর দু’জনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
ঘোগাদহ ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে এবার বিএনপি’র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক; তিনি পরপর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন; তার রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। জামায়াতের সাথে সখ্যতার কারণে প্রার্থী হিসেবে এবারো তিনি ভাল অবস্থান ভালো তবে এদানিং তার কিছু দুর্নীতি ও চুরির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় তিনি ব্যাপক বেকায়দায় রয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম মিয়া একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তার পরিবারের রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তারও রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী থাকলেও তার সাথে রয়েছে জাপা’র বড় একাংশ তাই সবকিছু ঠিকমতো থাকলে নির্বাচনে জয়ী হতে তার কো্নো সমস্যা থাকবে না বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা। এখানে মুল লড়াই হবে নৌকার সাথে ধানের শীষের।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত হয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহাজামাল সরকার প্রার্থীও হয়েছেন। এছাড়াও বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার। এখানে নৌকার সাথে ত্রিমূখী লড়াই হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আমির হোসেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী। এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তিনি পড়েছেন বেকায়দায়। এই ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছামছুল আলমের সাথে ত্রিমূখী লড়াই হবে।