প্রাণতোষ তালুকদার, ঢাকা
রাজধানী ঢাকার ওয়ারী থানাধীন ৩৬, ৩৬/১ নং নবেন্দ্রনাথ বসাক লেনে আদর্শ লিপি বই এর রচয়িতা সীতানাথ বসাকের বাড়িটি ইজারাদারদের দখলে চলে গেছে। বলা হচ্ছে, বাড়িটি ঢাকার জেলা প্রশাসক থেকে ইজারা নিয়েছে ইজারাদাররা। বাড়িটির সামনে কয়েকজন ইজারা সূত্রে মালিক সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। ইজারাদাররা স্থানীয় লোকজনদের বলে বেড়াচ্ছে— সীতানাথ বসাকের বাড়িটি তারা ইজারা নিয়েছে। বাড়ির সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ইজারা সূত্রে মালিক সৈয়দ আহম্মেদ মল্লিক, পিতা-হাজী মোঃ বিল্লাল হোসেন, ৩৬, ৩৬/১ নং নবেন্দ্রনাথ বসাক লেন, থানা-ওয়ারী, জেলা-ঢাকা। ভি.পি. কেস নং-৭৩৩/৬০। মোঃ ফারুক আহম্মেদ গং, পিতা-মৃত হেলাল উদ্দিন, সাং-৩৬, ৩৬/১ নং নবেন্দ্র নাথ বসাক লেন, থানা-ওয়ারী, জেলা-ঢাকা, ভি.পি কেস নং-৭৩৩/৬০। ইজারা সূত্রে মালিক মোছাঃ নাজমা রহমান, স্বামী-কাজী মশিউর রহমান, সাং-৩৬, ৩৬/১ নং নবেন্দ্র নাথ বসাক লেন, থানা-ওয়ারী, জেলা-ঢাকা, ভি পি কেস নং-৭৩৩/৬০। ইজারা সূত্রে মালিক নিতীশ চন্দ্র ধর গং, ইহা সরকারী অর্পিত সম্পত্তি, জেলা-প্রশাসক, ঢাকা-এর কার্যালয় হতে একসনা ভিত্তিক লীজ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতীত দখল হস্তান্তর আইনানুগভাবে নিষিদ্ধ। তফসিল-জেলা-ঢাকা, থানা-সূত্রাপুর, মৌজা-ওয়ারী, এস.এ. খতিয়ান নং-০১, দাগ নং-৫২০৩, ৫২০৪, ৫২০৫, হোল্ডিং নং-৩৬, ৩৬/১ নং নবেন্দ্র নাথ বসাক লেন, ভি পি কেস নং-২২/৬৭। আদেশক্রমে জেলা প্রশাসন, ঢাকা।
জানা যাচ্ছে যে, এই বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি, আবার অনেকে বলছে দেবোত্তর সম্পত্তি। বাড়িটির সি.এস. পর্চা এবং এস.এস. পর্চাগুলো দেখলেই বোঝা যাবে আসলে এটা কী সম্পত্তি? স্থানীয় জনগণ বলছে— এটি ‘পাঠাগার’ হলে খুব ভালো হতো। আবার অনেকে বলছে— সরকারিভাবে মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার হলে ভালো হতো।
আদর্শ লিপি বইয়ের রচয়িতা সীতানাথ বসাক এত বড় মাপের একজন মানুষ, যার আদর্শ লিপি বই পড়ে অনেকেই মানুষ হয়েছে এবং শিক্ষা নিয়েছে। এখনও বাজারে বিভিন্ন প্রকাশক সীতানাথের আদর্শ লিপি বই ছাপাচ্ছে এবং দেদারচ্ছে বিক্রি করছে। সীতানাথ বসাকের বাড়িটি একটি ঐতিহ্যবাহী বাড়ি এবং একটি ইতিহাস। এলাকার জনসাধারণের দাবী— সরকারই এটা সংরক্ষণ করুক।
এ বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, অনেকেরই ছোটবেলায় বর্ণ পরিচয় হয়েছে সীতানাথ বসাক-এর ‘আদর্শ লিপি ও সরল বর্ণ পরিচয়’ বইটির মাধ্যমে। শিশুরা খুব জোরে জোরে শব্দ করে এখনও পড়ে অ-তে ‘অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো’ আ-তে ‘আলস্য দোষের আকর’। সীতানাথ বসাকের শিশুপাঠ্য বইটি শিশুদের সরল বর্ণ পরিচয়ের জন্য অপরিহার্য। শুধু বর্ণ পরিচয় নয়, আদর্শ চরিত্র গঠনেও ছিল সহায়ক। এ বইটির মাধ্যমে “অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো, আলস্য দোষের আকর, ইক্ষু রস অতি মিষ্ট” ইত্যাদি আরও অনেক নীতি-আদর্শিক বাক্য শেখানো হয় শিশুদেরকে। সীতানাথ বসাক রচিত আদর্শলিপিতে মেধা বিকাশ, আত্মশক্তির জোগান, মানবিক গুনাবলি অর্জনের বিষয়গুলো আছে, যা শিশুদের পরবর্তীকালের পাথেয় হিসেবে কাজ করবে।
আদর্শ লিপি বইয়ের রচয়িতা সীতানাথের বাড়িটি কীভাবে ঢাকা জেলা প্রশাসক ইজারাদারদের হাতে হস্তান্তর করলেন, অথবা আসলেই হস্তান্তর করেছেন কিনা তা জানা যায়নি। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারেননি। তবে এলাকাবাসী ইজারার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ভয়ে এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কথা না বললেও সবাই চায় বাড়িটি সংরক্ষণ করে সীতানাথ বসাকের নামে একটি শিশু পাঠ্যশালা বা এরকম কিছু সরকার করবে।
ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটিতে বহুদিন যাবৎ অনেকে বসবাস করতেন। বাড়ীর ভিতরের বসবাসকারী কয়েক ঘরের বাসিন্দাদের ইজারাদাররা টাকা দিয়ে উঠিয়ে দেয়। জনগণ বলছে যে, একটা গং স্বনামধন্য এই বাড়িটি নাকি ডেভলপারকে দিয়ে নীচে মার্কেট করবে ও ফ্ল্যাট তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা করবে।
স্থানীয় জনগণ মনে মনে ক্ষুব্ধ, কিন্তু দখলদারদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। ফলোআপনিউজ.কম পত্রিকার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্থানীয় জনগণ বাড়িটি সংরক্ষণের দাবী জানাচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি ৩৬, ৩৬/১ নং নবেন্দ্রনাথ বসাক লেনে অবস্থিত ‘আদর্শ লিপি’ বই-এর রচয়িতা সীতানাথ বসাকের বাড়িটি সরকারিভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পাঠাগার’ নির্মাণের উদ্যোগ নেন, তাহলে অত্র এলাকার ছেলে-মেয়েরা এই পাঠাগার থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই, বঙ্গবন্ধু ওপর লিখিত পাঠ্যপুস্তক পড়ে অনেক শিক্ষা নিতে পারবে এবং মানুষ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।