বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি তারকা আর্জেন্টিনার ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা আজ (২৫ নভেম্বর ২০২০) ৬০ বছর বয়সে মারা গেছেন।
তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে জানা যায়। বুয়েনাস আয়ার্সে তার বাসভবনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আর্জেন্টিনার সাবেক এই ফুটবল মিডফিল্ডার এবং ম্যানেজার ম্যারাডোনার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে চলতি মাসের গোড়ার দিকে তার মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ম্যারাডোনা অ্যালকোহলিক ছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়।
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ফুটবলারের অধিনায়কত্বে আর্জেন্টিনা ১৯৮৬’র ফুটবল বিশ্বকাপ জেতে। সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এই তারকার মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: “আপনার আসন চিরকাল আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে থাকবে।”
আমার ম্যারাডোনা
আমার বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার শুরুটাই হয়েছে ম্যারাডোনার খেলা দেখার মধ্য দিয়ে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরু হওয়ার আগেই ম্যারাডোনকে নিয়ে হইচই। হইচই আগে থেকেই ছিল, কিন্তু আমার বুঝে এসেছে ঐ প্রথম। রিলের কথা বাদ দিলে লাইভ ম্যারাডোনার খেলা দেখেছি আমি ঐ একটা ম্যাচই (১৯৯৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা এবং গ্রিসের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচটির কথা বলছি)। ম্যারাডোনা একটি গোল করেছিলেন। খেলা শেষ হওয়ার কিছু আগে ম্যারাডোনা মাঠ ছাড়েন, বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ওর্তেগা। এরপর ইউটিউবের যুগে এসে ম্যারাডোনার খেলা অনেক দেখেছি। আমি খেলোয়ার ম্যারাডোনাকে যে খুব পছন্দ করার সুযোগ পেয়েছি তা যেমন নয়, আবার ব্যক্তি ম্যারাডোনাকেও যে খুব চিনি তাও তো নয়। তবে লোকটার মধ্যে এক ধরনের কবিত্ব আছে বলে মনে হয়, এই জিনিসটাই ভালো লাগে। মেধার অপচয় আছে, অস্থিরতা আছে— এটাই আমাকে টেনেছে। খেলোয়াড়ি জীবনে আরেক গ্রেট ফুটবলার পেলের মতো অধ্যবসায়ী যেমন ম্যারাডোনা নন, আবার ক্রিকেটের টেন্ডুলকারের মতো ব্যক্তি জীবনে নিষ্কলুসও তিনি নন, বা অন্যদের মতো লুকাতে তিনি পারেন না। শিশুর মতো গায়ে কাঁদা লাগানোর মতো ভুল না করলে তাকে যেমন শিল্পী বলা চলে না, আবার মেধার শতভাগ কাজে লাগিয়ে যে শীর্ষে পৌঁছায় তাকেও কেমন জানি শিল্পী বলতে বাধে। এদিক থেকে ম্যারাডোনা শিল্পী। খেলোয়াড় হিসেবে যেমন মেধার অপচয় করেছেন, আবার জীবনের মাপেও শিশুর মতো গায়ে কালি মেখেছেন, “লোকেদের তা দেখিয়ে হো হো করে হেসেছেনও”। তবে এমন কোনো অপরাধ করেননি যাতে তাকে কাঠগড়ায়ই দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়, ফলে তাকে শিল্পী বলতে হলে ফুটবল বোদ্ধা না হলেও ক্ষতি নেই। বিদায় শিল্পী! বিদায়! দিয়েগো ম্যারাডোনা।