একুশে হল-এর সামনে দিয়ে হেঁটে আসতেছিলাম, হঠাৎ বছর তিনেকের একটি শিশুর দিকে চোক আটকে গেল। লাইট পোস্ট ধরে ও বসেছিল। আমি ছবি তুলতে উদ্যত হলাম। পরিত্যক্ত, পিঁপড়াযুক্ত খাবারের কিছু অংশ আমি পা দিয়ে ঠেলে দিতে গেলেই ও চিৎকার দেয়–“আমি খাব!”
নিমিষেই ও ছবি তোলার কথা ভুলে যায়। পিঁপড়াযুক্ত ঐ খাবার তুলে খেতে থাকে। আমি দেখতে থাকি, করুণ চোখে, অক্ষমের আস্ফালনে। খাওয়া শেষে আবার ও ছবি তুলতে প্রস্তুত হয়। ছবি তুলছি— দিগ্বিদিক হারিয়ে, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত ও দেখছে।
ওর ইচ্ছা শেষ হয় না, আমারও এ দৃশ্য আর সয় না। ওর মাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। ওদূরে পেয়েও যাই। ধুলো-কালি মেখে মলিন হয়ে পড়ে আছে। সবাই বলছে পাগল, আমার তো তা মনে হল না।
দীর্ঘদিন পথের মানুষের সাথে আমার ওঠা বসা, ওদের চোখের ভাষা আমি বুঝি, ওদের আঁকুতি আমি বুঝি, ওরাও বোঝে আমাকে। যুবতী নারী— ধুলো-কালি মেখে পাগল বেশে পড়ে না থাকলে কিছু পুরুষেরা ছিঁড়ে খাবে না তাকে? মনে হয় পাগল, আসলে পথে পড়ে থাকা সবাই পাগল নয়।
সব হারানো অভিজ্ঞতা নিয়ে পথে বসেছে, এই সমাজের মানুষদের ওদের চেয়ে ভালো আর কে বুঝবে? ছবি তুললাম, শিশুটির মায়ের সাথেও স্বতস্ফুর্ত হলাম। ওরা থাকে ওখানেই, পথেই বাসা, পথেয় খায়, গোসল/প্রাতঃকর্ম কীভাবে হয় জানি না, এসব প্রশ্ন করারও তো কোনো মানে হয় না।
ওদের কাছে আবার যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে আসলাম নিজের কর্মব্যস্ততায়। মনে থেকে সরছে না শিশুটি। বারে বারে ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, ছবি তোলার আগেই ছুটে এসে ছবি দেখতে চেয়েছে। ইতোমধ্যে দর্শকও হাজির হয়েছে অনেক।
বুকের মধ্যে শেল বিঁধছে, কিন্তু চলে তো আসতেই হয়। শিশুটিকে কথা দিয়ে এসেছি— আবার যাব। আমার ফুসরত মিলতে মিলতে ততক্ষণে ওরা থাকবে তো? থাকে তো? থাকবে তো এই পৃথিবীতে শেষ পর্যন্ত টিকে?
থেকে থেকে ভাবছি— কত মানুষ মাড়িয়ে যায় ওদের, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ধার্মিক, কারো কিছু যায় আসে না এতে। ধর্মগুলোও নিশ্চয়ই মান সম্মতই থাকে তাতে। থাকে না?