আটজন মিলে ধর্ষণের পর খুন করে শিশু মিমকে
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে মিরাজ জানিয়েছেন-ঘটনার দিন স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রামের বাড়িতে রেখে ফেরার পথে মোবাইলে মনুর সঙ্গে তার কথা হয়। এসময় মনু তার খালি বাসায় মিমকে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলে মিরাজ রাজি হন।
ওইদিন বিকেলে মনু মিমকে নিয়ে ওই বাসায় যায়। সেখানে আগে থেকেই মিরাজ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বাসায় প্রথমে মনু, এরপর বিজয় তাকে ধর্ষণ করে। পরে লিটন, হাসান, রুবেল, সৈকত, মিরাজ ও সুজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর মনু ও বিজয় মিলে মেয়েটির গলা টিপে ধরে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মিম মারা যায়। তারপর লোডশেডিংয়ের সুযোগে মিমের মরদেহ বাসার বাইরে সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়। এরপর মিরাজ পালিয়ে যান বলে জবানবন্দিতে এসেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারী আকবর শাহ থানার ‘বিশ্ব ব্যাংক কলোনির’ আয়শা মমতাজ মহল নামের একটি পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার সিড়ির পাশ থেকে মিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
“এরকম ঘটনা প্রতিদিন প্রায় ঘটছে, কিন্তু কেন? একটি ধর্মভিত্তিক দেশে, যে দেশের মানুষ নাস্তিক দাবড়িয়ে কুপিয়ে মারে, সে দেশে এমন শিশু গণধর্ষণের ঘটনা কেন ঘটছে? ধর্ম কেন পারছে না তা থামাতে, নাকি ধর্মের ছদ্মবেশে এগুলো আরো বাড়ছে?” বলছিলেন, লন্ডন প্রবাসী সাহিত্যিক শেকস রাসেল।
রাসেলের কথার সত্যতা প্রমাণ করা খুব কঠিন নয়। গুগল সার্চ দিলে এরকম অনেক ঘটনাই বেরিয়ে আসছে:
উপরের ঘটনাগুলো উল্লেখ করে রাসেল ফলোআপনিউজকে বলছিলেন, “আপনি দেখাতে পারবেন যে কোনো মুক্তমনা লোক এরকম শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে কখনো? মুক্তমনা বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি—যাদের পিছনে ধর্মজীবীরা ধর্মান্ধদের লেলিয়ে দিয়ে হেনস্থা করে থাকে, মেরে ফেলে, সরকারও বিভিন্ন ধারায় তাদের আটক করে ধর্মাবমাননার নাম দিয়ে।”
নবারুণ (ছদ্মনাম), নরওয়ে প্রবাসী এই লেখক বলছিলেন, “সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তাটি নিয়ে যাওয়া দরকার যে প্রাচীন ধর্ম বা রীতিগুলো মানুষকে মানুষ করতে ব্যর্থ হয়েছে, এখন নতুন কিছু করার সময় এসেছে, আসলে সময় চলে যাচ্ছে। সাহিত্য-দর্শন, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় নিয়ে যেতে হবে, না হলে শিশুধর্ষণকারী ধর্ষণ শেষে সময় মেনে গিয়ে প্রার্থণায় বসে আবার পাক পবিত্র হয়ে উঠবে। সুযোগ পেলে একই কাজ করবে, করছে।”
অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) একটি সংস্থা জানিয়েছে বিদায়ী বছরে (২০১৭) ৯৪৯জন শিশু হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৬ জন।
নিশ্চয়ই প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি, কারণ, সংস্থাগুলো পরিসংখ্যানের জন্য সংবাদপত্রের উপর নির্ভর করে থাকে, কিন্তু সব ঘটনা পত্রিকায় আসে না।
২০১৬ সালের শেষের দিকে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল এ বিষয়ে:
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে কেন?
“শিশুটির মা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারেন তার মাত্র আট বছরের শিশুটিকে প্রতিবেশী বৃদ্ধ ধর্ষণ করেছে।”
কিছুদিন আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি আবাসিক মাদ্রাসার ছাত্রটি তার নিজের শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় পুলিশ ওই শিক্ষককে আটক করেছে।
… সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকল্পটির পরিচালক আবুল হোসেন বলছেন, নির্যাতনের ঘটনাগুলো আগের মতই ঘটে চলেছে। তবে তা প্রকাশ পাচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, আমাদের হিসেব মতে, সংখ্যা আসলে বাড়েনি, বরং মানুষের প্রকাশ বেড়েছে। সাম্প্রতিক কারণে মিডিয়ার কারণে খবরগুলো আসছে। বিষয়গুলো ঘটার সাথে সাথে মানুষ কমিউনিটিতে সেটা জানাচ্ছে”।
বিগত কয়েক শো বছরে মূল্যবোধ তৈরি হয়েছে মানুষের সামাজিক বিবর্তনের মাধ্যমে, সেখানে সবচে বড় ভূমিকা রেখেছে দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান। দেশের সাধারণ মানুষ, বেশিরভাগ মানুষ আধুনিক সভ্যতার স্তম্ভগুলোর সাথে পরিচিত নয়, বাল্যকাল থেকে তারা এগুলো চর্চা করে আসেনি, ফলে এরা ভয়ঙ্কর প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, বিকৃত হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। একসাথে ভয়ঙ্কর কাজগুলো করা যায়, তা এদেশের মানুষ প্রথমত পিতা-মাতারা সাথে থেকেই পরিবার থেকে শিখছে, কারণ, আমাদের দেশে পিতা-মাতার ছেলেমেয়েদের সামনে বিভিন্ন দুবৃত্তায়নে জড়িত, ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়েই তাঁরা এগুলো করে থাকে। ফলে গণধর্ষণের প্রথম পাঠ পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে তাঁরা।
প্রাচীন বিশ্বাস বা ধর্ম এদেরকে কিছু ভয় দিলেও তা তারা কাটিয়ে উঠেছে আবার ওসব ধর্মেরই অজুহাতেই, অপরাধ করে আবার ধুয়েমুছে ওঠা যায়, ফলে বিবেকবোধ জাগ্রত হচ্ছে না, স্বাভাবিকভাবে মানুষ নৈতিক এবং মানবিক হতে পারছে না। তাই শেষ পর্যন্ত ধর্ম দিয়ে কোনো লাভ হয়নি রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। সময় এসেছে সাহিত্য দর্শন এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের। বলছিলেন, প্রবাসী লেখক, নবারুণ।