“প্রাণির ছবি আঁকা, রাখা ইত্যাদিকে পবিত্র হাদিস শরিফে কঠোরভাবে নিষেধ করা হইয়াছে”

ধর্মাবমাননা অভিযোগে মামলা হয়েছে আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনারের বিরুদ্ধে।

জঙ্গিবিরোধী লিফলেট ও বক্তব্যে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ–কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় শিক্ষা মিশন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা আবু বকর সিদ্দীকের পক্ষে আইনজীবী মো. আব্দুল হালিম এই লিগ্যাল নোটিশটি পাঠান। নোটিশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবরও পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে আপনি (আইজিপি) ১নং নোটিশ গ্রহীতা বলেন যে, ‘যে ঘরে টিভি নাই তারা জঙ্গিবাদের সহিত সম্পৃক্ত’। যাহা পরেরদিন ‘দৈনিক আমাদের অর্থনীতিতে ‘ভাড়াটিয়ার টিভি না থাকলে পুলিশকে জানান’ শিরোনামে এবং অনলাইন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। অপরদিকে ডিএমপির গুলশান বিভাগ থেকে একটি লিফলেট ছড়ানো হয়। ‘জঙ্গি ভাড়াটিয়া চিহ্নিত করার উপায়’ শীর্ষক ওই লিফলেটটি আমার মক্কেলের দৃষ্টি গোচর হইয়াছে।’

নোটিশে আরও বলা হয়, ‘আমার মক্কেল ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং তিনি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী। পাশাপাশি যারা ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করে তাহাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু আপনাদের উক্ত মন্তব্য এবং লিফলেটের বক্তব্য আমার মক্কেলকে মর্মাহত করেছে। আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ প্রত্যেকেই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অবগত আছেন এবং আপনাদের মধ্যে অনেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমান বটে। আপনারা ভালোভাবে অবগত আছেন যে ইসলামের প্রত্যেকটি অনুসঙ্গ, নিয়ম-কানুন যাহা কোরআন, হাদিস, ইজমা এবং কিয়াসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। তা প্রত্যেক মুসলানদের জন্য পালন করা আবশ্যকীয়। ক্ষেত্রবিশেষ ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নত বটে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ অবগত আছেন যে, পর্দা পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ। কিন্তু আপনাদের দ্বারা প্রচারিত উক্ত লিফলেটের বক্তব্য যেমন ‘বাসার মধ্যে মহিলা/নারী থাকলে তারা বাইরে আসে কম’ বক্তব্য দ্বারা পর্দা পালনকারীদেরকে জঙ্গি চিনার উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ পবিত্র কোরআনে সূরা আহযাব, সূরা নিসা, সূরা নূর, সূরা মোমতাহিনাহ’ চারটি (সূরায়) স্বয়ং আল্লাহ পর্দা পালনকে ফরয করেছেন। সেহেতু ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহিলাগণ স্বাভাবিকভাবেই পর্দা পালন করেন এবং প্রয়োজন ব্যতীত বাহিরে বের হন না। কিন্তু আপনাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা বাহিরে কম আসেন বলে ধর্মপ্রাণ সকল মহিলাই জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত হয়, যা সুস্পষ্ট ধর্মীয় অবমাননা। পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকার পালনের সাংবিধানিক অধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।’

নোটিশে বলা হয়, ‘আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ আরও অবগত রহিয়াছেন যে, প্রাণির ছবি আঁকা, রাখা ইত্যাদিকে পবিত্র হাদিস শরিফে কঠোরভাবে নিষেধ করা হইয়াছে এবং আপনারা আরও জানেন যে, টিভি মূলত ছবির একটি চলমান রূপ। অর্থ্যাৎ অসংখ্য ছবির দ্বারা টিভির প্রত্যেকটি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সুতরাং ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্র পবিত্র হাদিস শরিফ দ্বারা নিষেধকৃত ছবি আঁকা, রাখা, তোলা এবং দেখা হইতে বিরত থাকিবে। কিন্তু আপনাদের বক্তব্য দ্বারা প্রতিভাত হয়, যে ঘরে বা যাহারা টিভি রাখবে না বা দেখবে না তাহারা জঙ্গিবাদের সহিত সম্পৃক্ত। যাহা স্পষ্ট হাদিস শরীফের সরাসরি বিরোধীতা করার শামিল। যাহা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার শামিল।’

নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়- ‘এসব বক্তব্য, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তা অত্র নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে আমার মক্কেলকে জানাবেন। অন্যথায় আপনাদের বক্তব্য ও কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। যাহার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে আপনাদের উপর বর্তাবে।’


সূত্র: অনলাইন নিউজ