সংসদে ‘আজহারী-মাজহারীদের’ এক হাত নিয়েছেন লোক-সঙ্গীত শিল্পী মমতাজ

Momtaz Begum

আমরা দেখেছি, আগের যে আমলগুলো, আমরা কিন্তু ভুলে যাইনি, ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে সকল শিল্পীদের গানবাজনা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল, মাননীয় স্পিকার। তারা এমনভাবে করেছিল— প্রত্যেকটা আসরে, প্রত্যেকটা মাজারে, সিনেমা হলে, উদিচিতে, রমনা বটমূলে— একসাথে সিরিজ বোমা হামলা করেছে ৬৪টি জেলায়। কোথায় তারা বোমা না মেরেছে? প্রত্যেক জায়গায় এই শিল্পীদেরকে আঘাত করা হয়েছে, মাননীয় স্পিকার। কারণ, শিল্পীরা অসাম্প্রদায়িক, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে, মানুষের কথা বলে, মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবার কথা বলে। আর তাদেরকেই ঠেকানো জন্য একদল— আমি নাম বলব না, তারা কিন্তু উঠে পড়ে লেগেছে।


ধর্ম ব্যবসায়ী দল জামায়াত এবং ধর্মান্ধদের কাছে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. শেখ মো. আব্দুল্লাহর এক বক্তব্যের (আজাহারী জামাতের প্রডাক্ট) উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করেছেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে বক্তাদের ঘরে ঘরে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জন্মের আহ্বান জানানোর বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান মমতাজ।

গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মমতাজ বেগম এসব কথা বলেন।

মমতাজ বলেন, ‘এই সরকার দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করে আমাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, কিছু কিছু জায়গায় বেকায়দায় আছি। কারণ ইউটিউব, ফেসবুক খুললে কী যে একটা অবস্থা। কোরআনকে সামনে রেখে, আল্লাহ-রাসুলকে সামনে রেখে অশালীন ও অকথ্য ভাষায় আজকাল ওয়াজ করা হয়।’

মমতাজ বলেন, ‘এসব বক্তাদের ওয়াজ শুনতে গেলেই দেখি একজন আরেকজনকে গালিগালাজ করছেন। ভালো কথা ছাড়া, খারাপ কথাই সেখানে বেশি শোনা যায়। সরকারকে বিষয়টি আমলে নিতে হবে। আমাদের প্রশাসনকে এগুলো দেখতে হবে।’

ড. মিজানুর রহমান আজহারীর নাম উল্লেখ না করে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের ধর্মমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি একটি বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার সেই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত জানিয়ে তা আর পুনরাবৃত্তি করব না। তবে আমি বলতে চাই– এ ধরনের বক্তা যারা আছেন, তারা সুবিধার জন্য একেক জায়গায় একে রকমের বক্তব্য দেয়।’

উদাহরণ দিয়ে মানিকগঞ্জের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এক জায়গায় তারা বলে– আল্লামা কোনো মানুষকে বলা যাবে না। আল্লামা একমাত্র আল্লাহকে বলা হবে। আবার আরেক জায়গায় বলে ঘরে ঘরে আল্লামা সাঈদীর জন্ম হোক। ওখানে আল্লামা বলতে আর কোনো ঝামেলা নেই তাদের। এসব বিষয়ে সরকারকে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।’

আওয়ামী লীগে সুবিধাবাদীদের ঠাঁই নেই জানিয়ে মমতাজ বলেন, ‘আমাদের কালোকে কালো বলতে হবে, সাদাকে সাদা বলতে হবে। কোনো গ্রুপ অনেক বড় তার পক্ষে থাকব, আর যারা দুর্বল তার পক্ষে থাকব না। এ কথা অন্তত আওয়ামী সরকার বিশ্বাসী না।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে গানে গানে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া চেয়ে মমতাজ বলেন, ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা তুলনা যার নাই/আপনার আমার নেত্রী যিনি জাতির পিতার কন্যা তিনি/আমরা সবাই তারে চিনি যার তুলনা নাই/আমার নেত্রী শেখ হাসিনা এই বিশ্ব যারে করে গণ্য/তার কারণেই আমরা ধন্য। এমন একজন নেত্রীর জন্য আমি দোয়া চাই/সবার হাতে তালি চাই।’

ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, সরকারি দলের সংসদ সদস্য আলী আশরাফ, জিল্লুল হাকিম, মেহের আফরোজ, নুরুন্নবী চৌধুরী প্রমুখ। 

https://www.facebook.com/nirmulcommittee/videos/706979249709179/?modal=admin_todo_tour