Headlines

স্বাস্থ্যকর্মীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি প্রদানের অভিযোগ

চরভদ্রাসন উপজেলা

ফরিদপুর পুলিশ লাইনের পুলিশের এক উপ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম্বুলেন্স চালক এবং করোনা স্যাম্পল গ্রহণকারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

আজ (২ জুন ২০২০) সাড়ে বারোটার দিকে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন স্থানে ফরিদপুর থেকে আগত সোনালী ব্যাংকের টাকাবাহী গাড়ী ও করোনা ভাইরাসের স্যম্পল সংগ্রহ করে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি এম্বুলেন্স সংকীর্ণ রাস্তায় মুখোমুখি অবস্থানে পড়ে।

এমতাবস্থায় ব্যাংকের গাড়ীতে থাকা ফরিদপুর পুলিশ লাইনের উপ পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার ও টাকার গাড়ীর চালক এম্বুলেন্স চালক ও স্যাম্পল সংগ্রহ দলের সদস্যদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন এবং এম্বুলেন্স সরাতে বলেন। কিন্তু পেছনে জায়গা না থাকায় এম্বুলেন্সের চালক অনুরোধ করেন যেন ব্যংকের গাড়ীটা পেছনে সরায় কেননা সে গাড়ীর পেছনে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।

এ বিষয়ের জের ধরে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে এসআই আনোয়ার এম্বুলেন্স চালককে বেধড়ক মারধর ও লাঠিচার্জ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এম্বুলেন্স চালকের ডান হাতের কব্জির উপরের হাড় মচকে যায় এবং গুরুতর জখম হন তিনি। পরিস্থিতি শান্ত করতে নমুনা সংগ্রহকারী মোঃ আসাদুজ্জামান এগিয়ে গেলে প্রকাশ্য রাস্তার উপর এসআই আনোয়ার স্বাস্থ্যকর্মী আসাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে গুলি করার হুমকি দেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী (করোনা রোগীর স্যাম্পল কালেকশনের দায়িত্ব পালন করেছেন)  ভুক্তভোগী মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমার সহকর্মী মোঃ কবির হোসেন আমাকে ফোন দেয়। এম্বুলেন্স চালককে মারধর করা হয়েছে এ ঘটনাটি আমাকে জানালে আমি চরভদ্রাসন থানার ওসি (তদন্ত) কে ফোন দিই। তিনি আমার কাছে ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যের নাম জানতে চান। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞের করি, “ওনার নামটা কী”। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে আমার মাথায় পিস্তল ধরে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আমি দ্রুত এম্বুলেন্সে উঠে আশ্রয় নিই। এরপরও তিনি আমাকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এসময় এসআই আনোয়ার এই বলেও হুমকি প্রদান করেন যে, আমরা এম্বুলেন্স নিয়ে ব্যাংকের টাকা লুট করতে গেছি এবং আমরা সন্ত্রাসী। এসময় পাশে থাকা এক কাঠমিস্ত্রী তার মোবাইল ফোনে ঘটনাটি ধারণ করতে গেলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকেও বেধড়ক মারধর করে আহত করেন।

তবে এম্বুলেন্সের চালক মোঃ কবির খান বলেন, আমাকে মারধর করা হয়েছিল সত্য, ঘটনাটি মীমাংসা হয়ে গেছে, আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।

এ বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও  ডাঃ হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী মাথাভাঙ্গা থেকে একটি এম্বুলেন্সে সন্দেহজনক করোনা রোগীর স্যাম্পল কালেকশন করে নিয়ে ফিরছিল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটু আগে বাজারের কাছে ড্রেনের কাজ চলতেছে —এজন্য রাস্তাটা খুব সংকীর্ণ। ওখানেই ঘটনাটি ঘটে। এম্বুলেন্সের পিছনে অনেক গাড়ী জমে যাওয়ায় চালক ব্যাংকের গাড়ীর চালককে অনুরোধ করে তাদের গাড়ীটি পিছিয়ে গিয়ে রাস্তা করে দেওয়ার জন্য, যেহেতু তাদের গাড়ীর পিছনে একটি স’মিল রয়েছে, ফলে ফাঁকা জায়গায় তারা সাইড করে দাঁড়াতে পারত। এরপর বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে  ‍আমাদের এম্বুলেন্স চালককে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে আমি আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী আসাদকে পাঠাই। আসাদ চরভদ্রাসন থানার ওসিকে ফোন করলে তিনি সংশ্লিষ্ট এসআই-এর নাম জানতে চান, আসাদ নাম জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি আরও খেপে যান এবং এক পর্যায়ে আসাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেন। ঘটনার জন্য আমরা মামলা করার উদ্যোগ নিই এবং পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানাই। তিনি খুব দ্রুত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাঠিয়ে ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করেন। এবং জড়িত এসআইকে প্রত্যাহার করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেন। জড়িত উপপরিদর্শক এসআই আনোয়ার ইতোমধ্যে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এবং তদন্তকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমাদের জানিয়েছেন যে এরপরও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

চরভদ্রাসন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানার সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, আমি আজকে ছুটিতে আছি। নরসিংদীতে আমার শশুর বাড়ি এসেছি। ঘটনাটি আমি শুনেছি। ইউএইচএফপিও সাহেব আমাকে জানিয়েছেন। আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলে ঘটনাটি একইভাবে আমি জানতে পেরেছি। আপনি মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন যে, ইতোমধ্যে ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনাটি তদন্ত করতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে পাঠিয়েছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। 

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামানের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। জড়িত উপ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত চলছে। 

বিষয়টি নিয়ে চর ভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রকারী এবং স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।