কাব্যগ্রন্থঃ অশ্রাব্য গালিগালাজ
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০১৫
প্রকাশকঃ রতন চন্দ্র পাল
প্রকাশনীঃ গ্রন্থকুটির
উৎসর্গঃ দুবৃত্তের বিষবৃত্তে বন্দী যারা
সাধারণ মানুষ ওদের যেভাবে থুথু ছিটাচ্ছে, শাপশাপান্ত করছে, বাপবাপান্ত করছে, সে কথাই বলা হয়েছে ‘অশ্রাব্য গালিগালাজ’ কাব্য গ্রন্থটিতে। লুটেরাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং ঘৃণা কী রূপ ধারণ করেছে, তাই-ই বইটির মূলভাব এবং ভাষা। সাধারণ মানুষের লোভের আগুনের আঁচ দুবৃত্তদের গায়ে লাগে না। জনগণ হতে তারা বহুদূরে, নিরাপদে। ওদের প্রতারণায় মানুষ ক্ষুব্ধ, একইসাথে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করতে না পারার বেদনায় ক্লান্ত। গণমানুষের পাশে দাড়াতে বইটি, ক্লান্ত মানুষের ক্ষীণ আওয়াজ বজ্র নিনাদে পরিণত করার অভিপ্রায় থেকে বইটি। কাব্য চর্চা এখানে গৌণ বিষয়।
যে কথা বলতে মানা
আমি সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে
টয়লেটে গিয়ে দেখি
একটি কুকুর টয়লেট দখল করে বসে আছে।
টয়লেট করার কষ্ট নিয়ে
প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দেখি
পথটি খেঁক শিয়ালের দখলে।
নাস্তার টেবিলে এসে দেখি
সেটি শকুনের দখলে।
ক্লাসে গিয়ে দেখি
একটি ভেড়া ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছে।
পল্টন ময়দানে এসে দেখি
এক পাল ছাগল দুই পা সামনে তুলে লাফাচ্ছে।
অফিসে গিয়ে দেখি
টেবিলে টেবিলে ইঁদুর, বাদুর আর সজারু।
চিড়িয়াখানায় না গিয়ে
অবশেষে গিয়েছিলাম শেরেবাংলা নগরের সূরম্য ভবনে,
আশা ছিল ষাঁড়ের লড়াই দেখব।
দেখলাম
একপাল শুয়োরের গুতোগুতি!
বাইরে বেরিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি
আমরা কি সব তাহলে শুয়োরের বাচ্চা?
ধাঁধা
১
ও দেশের নামে দিশাহীন
একেবারেই নেশাহীন।
ধুমপান করে না
রঙ্গালয়ে যায় না (?)
তেষ্টা পেলে বিয়ার খায়
ক্ষুধা পেলে কাবাব খায়।
দেশপ্রেমের ডাঙ্কা বাজায়
কলম দিয়ে অসভ্যদের শাঁসায়।
ভালোবাসে কথায় কথায়।
দশের কথা বলে
ট্যাক্সি ক্যাবে চলে।
ওর পরের ধনে কেরামতি
ভাব করে সে কোমলমতি।
ও চুষে চুষে হাসি দেয়
তরুণদের উৎসাহ দেয়।
ছাত্ররাজনীতি ঘৃণা করে
সময় পেলেই বঙ্কিম পড়ে।
পথের পাঁচালীর দুর্গার জন্য
ওর চোখ হতে দরদর
করে পানি পড়ে,
বুকটা তার ফেটে যায়!
ও হলো বইয়ের পোকা
লেখাপড়া ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।
চকলেট আইসক্রিম খায়
দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করে
সকাল সকাল ঘুমায়
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে।
ঘুম থেকে উঠে ভাবে,
এইসব শ্রমিকরা কেন যে
বঙ্কিম পড়ে না!
বঙ্কিম পড়লে ওরা নিশ্চয়ই
বেতন বেশি চাইত না!
কেন যে ওরা পথে নেমে ভাঙচুর চালায়!
ইস! যদি রবি ঠাকুরের
একটা কবিতা ওরা পড়ত।
[আমি তো পড়ি কোট করার জন্য, ওরা কেন পড়বে? পড়বে, পড়তেই হবে, পড়লে সব মানুষ হবে, আর ভাঙচুর করবে না, বেতন বেশি দাবি করবে না। আমি মালিকদের পরামর্শ দেব ওদের সবাইকে কালকেই যেন অখণ্ড রবীন্দ্র রচনাবলী কিনে দেয়। সব অজপাড়াগাঁয়ের ভূত! বই পড়ে না, আলোকিত হয় না, পথে পথে নেমে লাইট টাইট সব ভেঙেচুরে অন্ধকার করে দেয়!]
২
ও যখন ছাত্র ছিল
চিত্র তখন একই ছিল।
ওর মতো কিছু স্বার্থপর
পড়ে আর খায়।
মুখস্থ করে আর এর ওর পিছনে ঘুরঘুর করে।
ফ্রি পেলে প্রেম করে
রেজাল্ট পেলে বড়াই করে।
ওদের ভারেই ছাত্রলীগ বোকা,
ওদের জন্যই ছাত্রদল যাচ্ছেতাই।
চাপাতি সন্ত্রাস সহজে চোখে পড়ে,
চর্বিত সন্ত্রাস চোখে পড়ে না।
পড়ে সে প্রয়োজনে,
বলে ভালো লাগে।
গাইতে গাইতে ও এখন গায়েন,
এখন তাই কিছু লিখতে টিকতেও পারে।
মিলিয়ে ঝিলিয়ে লেখা,
অধ্যবসায়ে শেখা।
এখানেই শেষ নয়—
বয়সও ওর খুব বেশি নয়।
ও এখন বুদ্ধিজীবী
সত্য হলো সে পরজীবী।
কলম দিয়ে দাও মারে,
সুযোগ পেলেই বিদেশ ঘোরে।
বলো তো তোমরা সে কে বা কারা?
কপটতা
আহারে উহারে করো
পাছে নাও যতো পারো।
তোমরা এনামুল হক ভীষণ কপট,
তোমাদেরই এখন একচ্ছত্র দাপট।
তোমরা হিমালয়ে যাও কোর্মা-পোলাও খাও
গোড়ায় বসে চূড়ায় চড়ার স্বাদ নাও,
সুযোগ বুঝে গীত গাও
ধন-দৌলত, প্রীতি-খ্যাতি
সবই তোমরা পাও ফাও।
নিমতলীর পোড়া বাড়িতেও বেড়িয়ে আসো
এসে দু’কলম লিখে দুঃখে ভাসো।
লিখেছ
আবৃতার শরীরটা দুঃখের কাফনে আবৃত।
লেখনি
তোমাদের অসভ্যতা কীভাবে ও করেছে অনাবৃত।
লিখেছ
ঢাকা একটা মরণফাঁদ।
লেখনি তোমাদের ইস্ফাত কঠিন কপটতা কীসের ফাঁদ?
লিখেছ
আবৃতার জন্য আকাশ কাঁদছে।
লেখনি
আবৃতারা যখন পুড়ছে তোমার স্ত্রীরা তখন
স্টার সিনেপ্লেক্সে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছে,
তোমার আদরের সন্তানেরা শুধু প্রস্থে বাড়ছে।
দশ বছরের কাজের মেয়েটি সবার জন্য
একের পর এক আইটেম রান্না করে চলেছে।
লিখেছ
তোমাদের শব্দগুলো নাকি কাঁদে।
লেখনি
আবৃতারা পুড়ছে তোমাদের শব্দ কাঁদার ফাঁদে।
কবিতাটির প্রেক্ষাপটঃ ২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর একটি বাড়ীতে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। নিচে রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। কয়েকটি বাড়ীতে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় দেড়শো মানুষ সেদিন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। ঐদিন আবৃতা নামে একটি ছোট্ট শিশুও মারা যায়। দেখতে গিয়েছিল বাংলাদেশের একজন ‘বিখ্যাত’ সাহিত্যিক, দেখে এসে তিনি পত্রিকায় একটা কলাম লিখেছিলেন। সে প্রেক্ষিতেই কবিতাটি লেখা হয়েছিল।
সুতোর সরাইখানা
ওরা রক্তচোষা নরখাদক
ওরাই আবার সৌন্দর্যের বাদক!
ওরা নারীকে নগ্ন করে
ওরা নারীকে নগন্য করে।
উলম্ব নিতম্ব, উর্বর উরুতে
ওরা ঘণ্টায় খরচ করে
পাঁচ হাজার, দশ হাজার বা এক লাখ।
দিনে মাত্র এক ঘণ্টার বদৌলতে
ওদের বাঁধা বেশ্যারা পায়
বাড়ী গাড়ী সব।
কারণ, ওদের উরু বক্ষ উর্বর
কারণ, ওরা হতে পারে বর্বর।
রেঁস্তোরায় একবার খেতে
ওরা খরচ করে হাজারে হাজার
কুলির মাথায় টুকরি তুলে দিয়ে
ওরা করে
বড় ইলিশ, গলদা চিংড়ী বাজার।
পাতায়ায় প্রেমে, সিংগাপুরে চিকিৎসায়
খরচ করে কোটি কোটি,
এই এরাই কিন্তু
মধ্যরাতের টকশোতে ভীষণ খাঁটি!
গার্মেন্টস্ শ্রমিক!
কঙ্কালসার, যেন একেকটা জীবন্ত জীবাষ্ম—
উরু নেই, বক্ষ নেই
হাঁটায় ছন্দ নেই, গাঁয়ে গুমোট গন্ধ।
সারাদিন খেঁটেখুটে মাসে পায় পাঁচ হাজার,
যুক্তরাষ্ট্রে খাটলে
বেতন পেত টাকার অঙ্কে এক লাখ।
ধরলাম না হয় পঞ্চাশ হাজার,
কোথায় গেল বাকী পয়তাল্লিশ হাজার?
হিসেব দে বুশ, হিসেব দে ব্লেয়ার।
হিসেব দে খালেদা, হিসেব দে কাদের।
হিসেব দে,
নইলে বারুদে বোমায়
সব করে দেব ছারখার।
বাম-ডান-মধ্যম,
তোরা যেমন সব মিলেমিশে এখন একাকার।
তখন দেখব আওয়ামীলীগ-বিএনপি,
কে তোরা কার?
ওরা আওয়ামী লীগ, ওরা জামায়াত-বিএনপি,
ওরা শ্রমিকের
ন্যায্য পাওনা পকেটে ভরে
কোটি কোটি টাকার গাড়ীতে চড়ে,
ব্যাংককেও বাড়ী করে।
এসবের
ভাগ পেয়েছে মালিক
ভাগ পেয়েছে মন্ত্রী।
ভাগ পেয়েছে আমলা
ভাগ পেয়েছে বুদ্ধিজীবী-ষড়যন্ত্রী।
ভাগ পেয়েছে ক্লিনটন
ভাগ পেয়েছে ক্যামেরুন।
ভাগ পেয়েছে সাংবাদিক
ভাগ পেয়েছে সাহিত্যিক।
ভাগ পেয়েছে বরুণ দাস
ভাগ পেয়েছে বদরুল শেখ।
শীর্ণ হাতে শক্ত সুতোয়
বানানো কাপড় পরে শারাপোভা,
গোপন কাপড় পরে শাকিরা।
শাকিরার বক্ষ দোলে
শারাপোভার উরু,
কী নির্মম!
দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য
বিউটিদের বুক
আজও করে দুরু দুরু।
ওরা নরখাদক, ওরা গার্মেন্টস্ মালিক,
ওরা মন্ত্রী, ওরা গার্মেন্টস্ মালিক,
ওরা গার্মেন্টস্ মালিক, ওরা সরকার।
অযথা এত দরকষাকষির কি দরকার?
ওরা শ্রম শোষে, শ্রম বেঁচে।
ওরা দালাল ওরা দস্যু,
সরকার ওদের শশুর, নয়তো জামাই,
না হয় দাদাভাই।
ওরা গার্মেন্টস্ শ্রমিকদের রক্তজ্বলা শ্রম খায়,
বৈশ্য ওরা রোজ রাতে
টাকার বান্ডিল নিয়ে ওদেরই মতো বেশ্যার বাড়ি যায়।
রক্ত শুষে শুষে সম্পদের ভারে ওরা টইটুম্বুর,
দুনিয়তেই আছে ওদের বায়াত্তর হুর।
ওরা গার্মেন্টস্ মালিক,
ওরা মিনিস্টার, ওরা সরকার।
এত দর কষাকষীর কী দরকার?
কে বলেছে বেতন দেবে না বিশ হাজার?
গুড়িয়ে দে সব জারজ আভিজাত্য,
সদ্যজাত গ্রেনেডে গুড়িয়ে দে সব বিএম ডব্লিউ।
গুড়িয়ে দে গুলশান, গুড়িয়ে দে বনানী,
গুড়িয়ে দে সব সুতোর সরাইখানা।
কে বলেছে বেতন দেবে না বিশ হাজার?
আলবৎ দেবে।
বিউটি, বেলাল নিত্যদিন না মরে
মরবি যদি তোরা একবার মর।
দিয়ে যা সুকান্তের শিশুদের জন্য
বাসযোগ্য সেই আবাসভূমি।
ক্রস ফায়ার
১
ছেলেটা আমায় কখনো কাছে যেতে দিল না,
আমার নাম ধরে পর্যন্ত ডাকতে জানে না,
একটা চোর ডাকাত গুণ্ডা বদমাসের এত অহংকার!
আমার নামটি সে মনেও রাখতে চায় না,
ওরা সাথে দেখা হয়েছে বহুবার, কথা হয়েছে অনেক,
সুখ দুঃখের কথা না, সম্ভোগের কথা না,
যন্ত্রণার কথা না, জীবনযাপনের কথাও না।
অথচ কত কথা!
তন্দ্রাচ্ছন্ন রাতের ফিনফিনে বাতাস
কান পেতে শুনেছে সেসব অর্থহীন কথা।
আবার ও উধাও, কোথাও নেই,
ফোন করি, ও চিনতে পারে না,
কথা বলতে চায় না।
মাঝে মাঝে ফোন করতাম,
কিন্তু কখনই ও আমাকে চিনতে পারে না।
আবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে,
কথায় কথায় ক্লান্ত হয়েছি,
কখন যে হঠাৎ চাঁদটা ডুবে গেল!
ও চলে গেল!
কোথায় গেল? বলে তো গেল না।
আর আমার সাথে দেখা হলো না।
২
কেউ খবর রাখে না,
কেউ ওর ঠিকানা জানে না,
আসলে ওদের তো ঠিকানা থাকেও না।
আমি হন্যে হয়ে খুঁজে
অবশেষে ওকে পেয়েছি পত্রিকার পাতায়।
আমি মরুভূমির মাঝে মরূদ্যান খুঁজে ফিরি,
ঐ সামাজিক অমানুষটার মাঝে মিলেছিল একটা মানুষ।
সমাজের সভ্য সুন্দর মানুষগুলো সেখানে
সামান্য, ম্লান, অনেক বেশি মলীন।
আমি বিস্মিত হইনি, এটাইতো হওয়ার কথা,
ওর পরিণতির কথা সবচেয়ে বেশি ও নিজেই জানত।
“মারব, মরে যাব,
এই বিস্তীর্ণ সাগরে জীবন বিপন্ন করাই তো আমাদের জীবন”
সোমালিয়ার জলদস্যুদের মতো
এই হয়েছিল ওর জীবন দর্শন।
তবে তা নিজের জন্য নয়,
ও ভেবেছিল
এভাবে হয়ত দূর করা যাবে সামাজিক সব অনাচার।
ভীষণ দুঃখ পেয়ছিলাম আমি।
সময়ে, সম্ভোগে আবার সব ভুলেছি।
ওর একটি আস্তানা আমি চিনতাম,
সেখানে কয়েকটি রাত আমি কাটিয়েছিও।
ওর একটি ছোট্ট খাতা সেখানে পেয়েছি,
কাটাকুটি করে তাস খেলার হিসেব লেখা,
তারই এক পৃষ্ঠায়
‘বন্ধু’ সম্মোধনে নিচের লেখাটুকু পাই—
বন্ধু, তুমি আমায় চিনেছিলে,
আমিও তোমায় চিনতে ভুল করিনি,
ক্ষমা করো,
আমার ফেরার আর কোনো পথ নেই,
আমি ফিরতে চাইও না,
আমাকেও কেউ চায় না আর,
তোমাদের মতো কিছু দলছুট মানুষ ছাড়া।
ফিরতে হলে
আমাকে একটা বোঝা হয়ে ফিরতে হয়,
তোমাদের করুণায় বাঁচতে হয়।
তাও মেনে নিতাম,
কিন্তু তোমাদের সুস্থ সুখের
এক চিলতেও আমি কেড়ে নিতে চাই না।
জীবনের আলো আধাঁরির খেলায়
আধারই এখন আমার একমাত্র পথ,
তোমাদের কখনই আমি জড়াতে চাইনি।
হয়ত ঘৃণা করেছো,
মুর্খতার পরিচয় পেয়েছো।
তোমাদের সাথে একসাথে চলিনি,
নানান অজুহাতে তোমাদের এড়িয়ে চলেছি।
দাঁতে দাঁত চেপে
আমাদের ভালোবাসা ভুলতে হয়, ভুলেছিও সব।
কখনো কখনো মনে পড়ে,
ক্ষণে ক্ষণে কার কথা ভেবে যেন
এখনো আমি আনমনা হই,
অনুমানে কিছু কষ্ট পাই,
অনুভবে এখনো আমার কিছু শিহরণ জাগে।
নাগাল পাই না,
নেশার ঘরে আবার সব ভুলে যাই।
বন্য হয়েছি, বিপন্ন হয়েছি,
সবচেয়ে বেশি তো ভালোবেসেছি।
পৃথিবীর একজন মানুষও তা জানলে
আমার মতো বুনো মানুষের পূর্ণ প্রাপ্তি হয়।
বন্ধু, ভালোবাসি বলেই তো তোমাদের এত ভুলি।
পুনশ্চঃ ওর লেখাটুকু আমি এখানে হুবহু তুলে দিয়েছি, তবে কিছু কিছু ব্যক্তিগত কথা বাদ দিয়েছি। বর্ষাকালে অলস দাঁতে ডাঁটা পিষে রস খেয়ে ছোবড়া ফেলে দেওয়ার মতো এদেশ, এদেশের রাজনীতি শাওনকে (ছদ্মনাম) হত্যা করেছে।
সাপুড়ে
ওদের জীবনে টান পড়ে না,
যৌবনে টান পড়ে না,
তবু ওরা দেশপ্রেমিক!
ওরা হয়ে গেছে জনপ্রিয়,
উঠে গেছে উপরে,
জনগণ হয়েছে সাপ,
প্রতারক হলেও ওরাই সাপুড়ে,
ওদের কথাতেই
জনগণ এখন নাচে দিনদুপুরে।
বানর-কুকুর-শিয়াল-ওরাংওটাং
১
ওটা কীসের প্রতীক?
গোপনিয়তার।
ওটা কীসের প্রতীক?
স্বার্থপরতার।
ওটা কীসের প্রতীক?
বর্বরতার।
ওটা কীসের প্রতীক?
প্রার্থনার।
২
তুমি কে?
বৌদ্ধ।
তুমি কে?
হিন্দু।
তুমি কে?
খ্রিস্টান।
তুমি কে?
মুসলমান।
তোমরা কে?
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান।
৩
ওটা কী?
বানর।
ওটা কী?
শিয়াল।
ওটা কী?
কুকুর।
ওটা কী?
ওরাংওটাং।
ওগুলো কী?
বানর-কুকুর-শিয়াল-ওরাংওটাং।
মাঝ রাতের পাখি
রাম আমার বন্ধু, রাবণ হলো ভাই
কোনদিকে যাব ভেবে না পাই।
রাম দিয়েছে দৌলত, রাবণ দিয়েছে ধন।
গোপন কথা জানে না জনগণ।
বাংলাদেশকে ভালোবাসি
পাকিস্তানের পাশে থাকি।
আমার মতো নিরপেক্ষ কেউ আছে নাকি?
ধরি মাছ না ছুঁই পানি
কিছু আমি লিখতেও জানি।
রাম রাবন রাম রাবন
মজায় মজায় চলছে জীবন।
অর্থ আছে খ্যাতিও আছে
ঘুরতে হয় না আর কারো পিছে পিছে।
মাঝ রাতের পাখি
সবাইকে দিয়ে ফাঁকি
এখন আমি নদীর পাড়ে থাকি।
যাদুর ঘুড়ি
কথার খেলায় ফুল ফোঁটাই
চেনে না কেউ আসল নাটাই।
আকাশের রঙিন ঘুড়ি
প্রজাপতির মতো নাচে
তা দেখে ওরা আসে আমার কাছে।
যাদুর ঘুড়ি,
ঘুড়ির ফাঁদে ওদের গড়াগড়ি।
আমার ঘুড়ির সাথে উড়ছে
গাড়ী, বাড়ী, তরুণীর শাড়ী।
সো সরি
আমি তো প্রগতিশীল, রুচীশীল এবং সুশীল
আমাকে হতে হয় বসন্তের কোকিল।
আমি হতে চাই রাজা,
কিন্তু করিনি এতদিন কোনো কাজ
তাই তো অর্থ এবং খ্যাতির মোহে
বিসর্জন দিয়েছি সকল লাজ।
আমার তো শুধু বাঁচলে চলে না, চাই বিলাসিতা,
আমি এক উন্নত মানুষ, আমার আছে আদব-কেতা।
আমি চিবিয়ে চিবিয়ে সাদা মগে কফি খাই
পিছনে বাঁশ মারি, সামনে সবাইকে বলি ভাই।
আমি বক্তব্য দিই, বিবৃতি দিই, টক শো করি
রাতে বাসায় না ফিরলে বউকে বলি, ‘সো সরি’।
দাওয়াই
ধর্ম ভাই এমন দাওয়াই
তোমার নামে আমায় খাওয়াই।
ধর্ম হলো এমন রোগ
তোমার নামে করি ভোগ।
ধর্মের নামে এখন আমি
নকল বউয়ের হয়েছি স্বামী।
ধর্ম যদি মান ভাই
দিন দুনিয়ায় আর অভাব নাই।
ধরা শিকার
রাগে আমার মাথা ঘোরে
দাঁত করে কড়মড়।
শিয়ালে মুরগী ধরে
আমি বলি ধর ধর।
আমার কোনো দোষ নাই
ধরা শিকার আমি খাই
হাত ধুয়ে গান গাই।
মাখন চাটি
ঘোড়ার রোগে ছাগল খোড়া
যাচ্ছ কোথায় একটু দাড়া।
বিড়াল ডাকে ঘেউ ঘেউ
ভাবছি আমায় দেখে না কেউ।
কথা খাঁটি রিক্সায় হাঁটি
পাইপ দিয়ে মাখন চাটি।
বিষবৃত্তে বন্দী
১
ওরা ভাবে আমরা কিছুই বুঝি না,
ওরা ভাবে আমরা কলের পুতুল,
ওরা ভাবে ঈশ্বর আমাদেরকে
যন্ত্র বানিয়ে ওদের হাতে সঁপে দিয়েছে!
ওরা আমাদের শ্রম শুষে নেয়,
কৃতজ্ঞ থাকে ঈশ্বরের কৃপায়,
এভাবে ওরা ঈশ্বরের বান্ধা হয়ে রয়।
২
শোন তোরা শোন,
ঘরে রয়েছে অভুক্ত আপনজন,
সারাক্ষণ সামনে ভাসে
ওদের ক্ষুধার্ত এবং ভয়ার্ত চেহারা,
এজন্য
হতে পারি না একটুও বেপরোয়া!
লম্পট-কপট-বর্বর, তোদের সামনে
আমরা পেটের দায়ে সুহাসিনী।
আর কত?
শোধ নেব এবার হারিয়েছি যত,
তোদের হাতের পুতুল
শিকল ভেঙে ঠিকই হব দুর্গতিনাশিনী।
তোমরা প্রতারক
আমৃত্যু পরাজিত তুমি।
তৈরি হও,
জনতার বিচারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নরঘাতক
এবার প্রায়শ্চিত্ত করো।
এটা নয়
আর কোনো
ইসা-মুসা বা রাম-রাবণের ভূমি।
চার ছক্কা তোমরা যতই মারো
ওসব এখন গোল্লাছুট,
সবাই জেনে গেছে
তোমরা প্রতারক, তোমরা ঝুট।
তবু বাঁচি
আমাদের জীবনের সকল আহ্লাদ
কেড়ে নিয়েছে রাষ্ট্রের ছদ্মবেশে
ভদ্রবেশী শয়তানেরা।
আমাদের জীবনের সকল স্বাদ
কেড়ে নিয়েছে সুশীল, রুচিশীল
এবং পরিশীলিতরা।
আমাদের সুখগুলো শুষে নেয়
অন্ধকারের হায়েনারা।
আমাদের সুখগুলো শুষে নেয়
দেবতার ছদ্মবেশে ওরা।
আমাদের সুখগুলো শুষে নেয়
রূপ লাবণ্যের ফেরিওয়ালারা।
আমরা বাঁচি, তবু বাঁচি,
হলুদ চালের দু’মুঠো ভাত,
আর কর্মক্লান্ত
কিছু অচেতন ঘুমের বিনিময়ে আমরা বাঁচি।
দেহের সব গোপনিয়তা
আমাদের মন নেই?
আমাদের মাথা নেই?
আমাদের ব্যথা নেই?
আমাদের দেহ নেই?
আমাদের ক্ষুধা নেই?
আমাদের ঘুম নেই?
তোমাদের কাছে আমরা মানুষ কি?
আমরা তো মানুষ নই,
এই সেলাই মেশিনটার মতো আরেকটা মেশিন।
ভ্ররররররররররররররররররররররররভ্র,
আমরা সেলাই করি সারাদিন,
হাত কাঁপে, চোখ কাঁপে,
হাড় জিরজিরে দেহ কাঁপে,
মুমূর্ষু যৌবন কাঁপে,
কেঁপে ওঠে সবটুকু জীবন।
তবু সেলাই করি সারাদিন।
বাসায় ফিরে
রাতে দুর্বোধ্য ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ি,
ঘুমিয়ে পড়ে নিস্তরঙ্গ যৌবন,
ঘুমিয়ে পড়ে
দেহের সব গোপনিয়তা।
ঘুমিয়ে পড়ে দুঃস্বপ্ন,
ঘুমিয়ে পড়ে সকল স্বপ্ন।
আর কতকাল
তোমরা সুস্থির,
তোমাদের রহস্য জানা ভার।
ওরা অস্থির,
ঘুরে বেড়ায় এপার ওপার।
তোমরা লক্ষ্যে নিবিষ্ট,
কষ্ট ক্লিষ্টরা তোমাদের কাছে নিকৃষ্ট।
মানুষেরা পিছন ফিরে চায়,
মানুষেরা মানুষের জন্য লক্ষ্য হারায়।
অমানুষেরা অবিচল,
ওরাই অবশেষে জয়ী হয়।
তোমরা কৃতজ্ঞ থাকার ভাণ করো ঈশ্বরে,
পাছে যাতে কিছু না দিতে হয় মানুষেরে।
কাল্পনিক ঈশ্বরকে দিতে হয় না কিছু
অজুহাতে তোমরা
দুঃস্থদের ছুটিয়েছো তোমাদেরই ক্রীড়নক ঈশ্বরের পিছু।
আর কতকাল?
কেউ না কেউ এবার ধরবে হাল।
৫ ফেব্রয়ারি ভোরে
মনুষ্যতে বিকশিত স্বলক্ষ্যহীন
মানুষের একটি দল গণজাগরণ হতে
করেছে যাত্রা প্রতিজ্ঞা প্রত্যয়ে,
ওরা হারাতে দেবে না কিছু আর
এই বাংলা হতে অবিচার অন্যায়ে।
তাঁর খোজে
নানান রঙের কলম নিয়ে
প্রতিদিন আমি লিখতে বসি।
কত কী যে লিখি!
হাজার বইয়ের
লাখো পৃষ্ঠায়ও ধরবে না সে লেখা।
রামায়ণ, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক
শেষের কবিতা, পথের পাঁচালি—
সবই আমি লিখি।
কিন্তু কিছুতেই আমি
ঐ বইটি লেখার কথা বলতে পারি না।
সংস্করণ করে বের করতে পারি না।
কিছুতেই ওটা লেখা যাবে না,
লিখলেও বলা যাবে না।
ভুল করে প্রকাশ করে ফেলেছিলাম দু’চার পাতা।
ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি জীবন বাঁচাতে,
তবু পিছু ছাড়ে না ওরা,
রোজ নিয়ম করে দেখে নেয় আমার লেখার খাতা।
কিছুতেই তাঁর সাথে পাল্লা দেওয়া চলবে না!
অবশেষে একটা আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে
হাতে তলোয়ার নিয়ে
বেরিয়ে পড়েছি তাঁর খোঁজে।
ওরা দলবেঁধে এখন আমাকে অনুসরণ করছে।
আমি ভুলে গিয়েছি আমাকে।
কীর্তণ করতে পারছি
এখন
হিংসা বিদ্বেষ আর হিংস্রতার সংমিশ্রণে।
ওরা আমায় বাহবা দিচ্ছে,
ছেলে বুড়ো সবাই ওরা ধাক্কাধাক্কি করে
আমার পায়ে লুটিয়ে পড়ছে।
অন্য নীতি
টাইগার আর লায়ন মিলে হয় লাইগার।
ঘোড়া আর গাধা মিলে হয় খচ্ছর।
প্রাণের সাথে প্রাণের যৌনমিলনে
সৃষ্টি হয় অতিকায় অল্পপ্রাণ।
আদর্শের সাথে আদর্শের সংগম,
এ পথ বড়ই দুর্গম।
সৃষ্টি হয় ক্ষীণকায় মহাপ্রাণ।
বামের সাথে ডানের মিলনে
এখানে এখন এক অন্য নীতি।
এ নীতি গাভীন গরুর পিছনে ঘুর ঘুর করে।
বাচ্চা হলে তবেই সোচ্চার হয়।
১৫ ফ্রেবুয়ারি
আজ একজন মানুষেরে মেরেছিলি তোরা
বিশ্বাসের ভণিতায় উদ্ধত হয়ে।
১৫ ফেব্রুয়ারি—
দিনটি তোদের শঠতার চিহ্ন,
তোদের হিংস্রতার স্মারক,
দিনটি তোদের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক।
হিংস্রতা আর বর্বরতায় পরিপূর্ণ
রক্তস্নাত একটি দিন।
আমরা জেগে আছি, থাকব।
ঋজু হয়ে তোদের সাথে লড়ব।
দাঁড়াও পথিক
ওখানে যেওনা পথিক।
ওখানে ভগবানের বসবাস।
ওখানে সৃষ্টি নেই, ওখানে অলীক স্রষ্টা।
ওখানে কেবল বারণ, কিছু কিছু বিবরণ।
ওখানে স্বপ্ন নেই, শুধুই সুখ।
ওখানে কেবল পাওয়া, আরো চাওয়া।
ওখানে ভয়, ওখানে ভণিতা।
ওখানে ভোগের নির্লজ্জ্ব আয়োজন।
ওখানে যেওনা পথিক।
ওখানে দানব আর দেবতা।
ওখানে মানুষ নেই।
দাঁড়াও পথিক,
তুমি না মানুষ ছিলে?
তদন্ত কমিটি
তদন্ত কমিটি হয়েছে, ওরা একটা কাজ পেয়েছি।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি,
একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব, একজন সেনা কর্মকর্তা,
আরেক জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল,
সময় পার হয়ে গিয়েছে,
খুব কঠিন তদন্ত!
ওরা সাত দিন সময় বাড়িয়ে নিয়েছে, অর্থ বরাদ্দও বেড়েছে।
খুউব কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
আজকে ওদের একটা বৈঠক,
হাতে আর মাত্র ছয়দিন সময় আছে,
জলদি জলদি একটা রিপোর্ট তৈরি করে দিতে হবে।
রূপসী বাংলা হোটেলে ওদের গোপন বৈঠক বসেছে আজ।
প্রথম সদস্যঃ আমার মনে হয় এটা এই কারণে ওরা করেছে।
দ্বিতীয় সদস্যঃ সরাসরি এভাবে বলা কি ঠিক হবে?
আমাদের কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই।
তৃতীয় সদস্যঃ তাহলে আমরা একটু ঘুরিয়ে বলি।
বিষয়টা তো আমরা আন্দাজ করতে পেরেছি, তাই না?
এখন একভাবে বললেই হলো।
প্রথম সদস্যঃ সকল আলামত অবশ্যই নষ্ট হয়ে গিয়েছে,
ওসব খুঁজে আর কোনো লাভ নেই।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটা কোনো পেশাদার প্রতারক চক্রের কাজ,
খুবই বাজে কাজ হয়েছে এটা।
দ্বিতীয় সদস্যঃ আলামত সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে,
আমরা এটা কীভাবে জানলাম?
প্রথম সদস্যঃ কেন আপনি পত্রিকা পড়েননি?
তৃতীয় সদস্যঃ পত্রিকায় পড়েছি লিখলে হবে?
প্রথম সদস্যঃ পত্রিকায় পড়েছি লিখব কেন?
লিখব আমরা তদন্ত করে পেয়েছি।
কবিতাটির প্রেক্ষাপট: আবু বকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে এক দিন পর মারা যান। ওই সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। আইন বিভাগের আহত ছাত্র ওমর ফারুক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। আবু বকর ছিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামে। আবু বকর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় গ্রামে গিয়ে কৃষিখেতে কাজ করতেন, প্রতিবেশীদের বাচ্চাকে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ জোগাতেন। তাঁর বাবা রুস্তম আলী দিনমজুর। আবু বকরের মৃত্যুর ৪২ দিন পর তাঁর চতুর্থ সেমিস্টারের ফল প্রকাশ হয়েছিল। তাতে তিনি যুগ্মভাবে প্রথম হন। আবু বকর ছিদ্দিক হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতা-কর্মীর সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। মামলায় খালাস পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হলেন হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক, মফিদুল আলম খান (তপু), রকিব উদ্দিন (রফিক), মনসুর আহমেদ (রনি), আসাদুজ্জামান (জনি), আলম-ই-জুলহাস, তৌহিদুল ইসলাম খান (তুষার), আবু জাফর মো. সালাম, এনামুল হক (এরশাদ) ও মেহেদী হাসান (লিয়ন)। এঁরা সবাই ঘটনার সময় এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারি এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত আবু বকর পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তাঁর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ওই দিনই সহ-উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রতিবেদনে আবু বকরের মৃত্যুর জন্য এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুককে মূল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওই দিনের ঘটনার জন্য এফ রহমান হল প্রশাসনও দায় এড়াতে পারে না। প্রতিবেদনে ওই দিন পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছিল। (প্রথম আলো, ৪/৩/২০১০ এবং ২৬/১/২০১৮)
চলে যাচ্ছি
আরব দেশে যাচ্ছি।
ওখানে গিয়ে
খাবদাব আর ফুর্তি করব।
থাকব মক্কা হিলটন হোটেলে।
মাঝে মাঝে মক্কার পাশ দিয়ে
হেঁটে গিয়ে
আবু নুহাসের কবরে
ফুল দিয়ে আসব।
কুলসুম কে নিয়ে
কোথায় যাব, কী করব,
কাউকে বলব না।
সেসব করব, বলব না।
সুরমা টানা কুলসুমও
পরতে পরতে কাপড় পরে।
তাতে কী?
কাপড় তো আর পাথর নয়,
গিঁট খুলে দিলে সব কাপড়ই গড়িয়ে পড়ে।
স্বর্গ লোভে
স্বর্গ লোভে ভেস্তে যাচ্ছে মর্তের সব-ই
তবু বেঁচে আছি আমি এক নির্লজ্জ্ব কবি।
নিজেরে সাজিয়ে মিথ্য প্রতারণার বাদ্য বাজিয়ে
ওরা কেড়ে নিল আমাদের শেষ সম্বল,
আজ তুমি ‘ভালো সরকার’ জানতে চাও
কেন আর আমরা করি এ আন্দোলন।
চারপাশে দেখি ঈশ্বরের কত শত আকার,
তবু তোমরা বলো
ঈশ্বর নাকি থাকে নিরাকার!
চাপাতি-ছুরি-গ্রেনেড-বন্দুক হাতে
বর্বরতায় পরিপূর্ণ উদ্ধত মস্তকে
বিশ্বাসে
তোমরা গড়েছো যে ভগবান
সেখানেই তোমাদের ধন-দৌলত
সেখানেই তোমাদের মান।
মানুষকে বাঁচাতে হলে
এসব ভেঙেচুরে করতে হবে খান খান।
শোষকের শয্যা
কোমল শয্যায় ঘুম আসে না,
স্বৈরিণী সিক্ত হয় কামাতুর কল্পনায়,
তুলতুলে-দুলদুলে দেহ অতৃপ্ত হতে চায়
আরও কোনো গোপনীয় পুলকের প্রত্যাশায়।
অর্থকারী স্বামী নিরর্থক গল্প সাজিয়ে
কাল বিলম্ব করে না স্ত্রী-শয্যায়,
চিন্তা কী? স্ত্রী তো আছে পর্দায়।
ভাবে, সবকিছু ঠিক আছে অর্থের কব্জায়।
জায়ার অতৃপ্ত মন মোহচ্ছন্ন হয় অসহ্য অবসরে,
মেয়াদ উত্তীর্ণ মদের বোতলের মতো ফেনিয়ে ওঠে,
ছিপি ছিটকে কৃত্রিম যৌবন
বেরিয়ে আসে ছলকে ছলকে।
গন্ধ পেয়ে ওঁত পাতে পরাভৃতরা,
ক্ষুধার্ত কিছু বুড়ো হায়েনা ঝাপিয়ে পড়ে।
আস্তিক নাস্তিক সবাই এখন একই জনান্তিকে,
ওরা সমাজ গড়ে, ওরাই নাকি দেশ গড়ে!
চুমুকে চুুমকে শেষ করে নেয়
কোষে কোষে ফেনিয়ে ওঠা শোষকের অতৃপ্তির কোলাহল।
পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ —ওদের এখন
একই গোপন দরজায় অন্ধকারে চলাচল।
মদ-মাৎসর্য-মিথ্য আর অন্যায়ের মহোৎসব
হররোজ চলে শোষকের বাড়ীতে, গাড়ীতে,
পর্দাণশীল ওদের
মায়াবি পোশাকের আড়ালে, অস্থিতে মজ্জাতে।
জীবন্মৃত
নিত্য অভাবে নিষ্পেশিত, হতাশায় অশান্তিতে জর্জরিত,
সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনিতে কষ্টক্লান্ত,
তবু বাঁচে ওরা!
অধিকার হারিয়ে, দু’পয়শায় জীবন চালিয়ে
বৈশ্যদের জন্য অহেতুক বাঁচে ওরা।
পসারিণীদের জন্য দৈনিক নৈবেদ্য সাজিয়ে যায়
বিনা কৈফিয়তে দুবৃত্তের বিষবৃত্তে বন্দী হয়ে।
অস্থি-চর্মের মাঝখান দিয়ে বাধ্য হয়ে বয়ে চলা
ওদের কিছু অনিবার্য রক্ত
প্রতিবাদের রসদ জোগায় না।
দেহের ভার দ্রষ্টব্য নয়, সৌষ্ঠব অনাকাঙ্ক্ষিত,
কিছু নেই তবু
নিষ্পেষিত-নির্যাতিত-সর্বহারা ওরা
হারাবার ভয়ে অহেতুক সবসময় থাকে শঙ্কিত।
[মরতে জানে না। স্বাধীন ভূখণ্ড পেতে
পঞ্চাশ লক্ষ জীবন দিয়েছিল যে বাঙালি
দুবৃত্তের বিষবৃত্ত হতে মুক্ত হতে
আজ তারা ত্রিশটি জীবনও বিলিয়ে দিতে পারে না!]
শোষকের লোভের ভবন ধ্বসে
একদিনে ঝরে যায় কয়েক হাজার শ্রমিক,
তবু ওরা শান্ত নিরস্ত্র থাকে!
যেন কতশত ধন ফেলে এসেছে
জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে!
নেই কিছু নেই,
তবু ওরা হারাবার ভয়ে ভীত,
নিষ্পেসিত ওরা ক্রন্দনরত,
বাঁচার নেশায় ওরা জীবন্মৃত।
ওরাই এখন রাষ্ট্র
রাষ্ট্র তুমি নির্লজ্জ্ব,
রাষ্ট্র, তুমি কাপুরুষ বর্বর,
তোমার হাতে দেশটা পতিত, অনুর্বর।
রাষ্ট্র তুমি নিষ্ঠুর, রাষ্ট্র তুমি দানব,
রাষ্ট্র তুমি হয়েছো ভীষণ লোভী।
তোমার কাছে নেই আর কোনো দাবী।
বেহায়া রাষ্ট্র
তোমার কিছুতেই হয় না কোনো অপমান,
বেঈমান রাষ্ট্র,
আর নয় তোমার জন্য কোনো দেশাত্মবোধক গান।
এবার লড়াই,
ভাঙতে হবে অসভ্যের বড়াই।
শিশু জিহাদের অবিরাম কান্না,
রাষ্ট্র শোনে না।
স্বেচ্ছাসেবী বশিরের ছাড়া লাথি
রাষ্ট্রের উদোম পাছায় লাগে না!
অবশেষে ফারুক, বকর, আনোয়ারের থাপ্পড়
দুই গালে খেয়ে রাষ্ট্র পালায়।
আশঙ্কায় থাকি
কালো পোশাকে রাষ্ট্র যদি আজ রাতে
আমার ঘরেও হানা দেয়।
কবিতাটির প্রেক্ষপটঃ ঢাকার শাহজাহানপুরে ২০১৪ সালে খোলা নলকূপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যু হয়েছিল। মাটি থেকে ৩০০ ফুট গভীরে, ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভিতর আটকে পড়েছিল শিশুটি তখন। দীর্ঘ এগারো বারো ঘণ্টা অভিযানের পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, পাইপের ভিতরে শিশুর কোনো অস্তিত্বই নেই! গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, বিষয়টি গুজব হতে পারে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরায় শিশু জিহাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এরপর রানা প্লাজার উদ্ধারকর্মী স্বেচ্ছাসেবী বশির আহমেদসহ দুজন পাইপের ভিতরে ঢুকবেন বলে নিজে থেকেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, কিন্তু নিরাপত্তার জন্য তাদের পাইপে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। অবশেষে ১০-১৫ জন উদ্যমী তরুণ-যুবকের একটি দল বিশেষ লোহার খাঁচা বানিয়ে টেনে তুলে আনে জিহাদের দেহ। এই দলে ছিলেন, শফিকুল ইসলাম ফারুক, আবু বকর সিদ্দিক, আনোয়ার হোসেন, কবির মুরাদ, নূর মোহাম্মদ, আবদুল মজিদ, শাহজাহান আলী, ইমরান, রাকিব, মুন ও রাহুল।
মানুষের পথে
আমাকে হাঁটতে হয় অনেক পথ,
তবু প্রতিটি ধুলিকণা মাড়িয়ে এসেছি,
ডিঙোয়নি কিছুই।
জানি গন্তব্যে তুমি আমি সমান,
বরং তুমিই বেশি ভাসমান।
তুমি যখন বিজয়ের সিঙ্গা বাজাও,
তখনও আমাকে ফিরতে হয় আবার পথে,
যে পথে মানুষেরা হামাগুড়ি দেয়,
যাদের পিঠে সওয়ার হয়ে
তুমি সকল দুর্গমতা ডিঙিয়েছিলে।
শুরু
নামটা পড়ে যন্ত্রণা হয়,
বইটা পড়ে আরও।
সবে তো কেবল শুরু,
কাব্য কথায় জানিয়ে দেব
কার পিছনে কে গুরু।