জান্নাতুল এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন

%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0

নয় বছরের জান্নাতুল ফেরদৌস। একটি খেলনার সেট হাতে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামে। মাথার তালুতে অনেকটা জায়গাজুড়ে ঘা। গরম ইস্তিরি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছিল সেখানে। শুধু মাথা নয়, সারা গায়ে অসংখ্য পোড়া দাগ।
গাজীপুরের জয়দেবপুরে এক বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয় সে।
জান্নাতুলের বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল শিশুটি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে জান্নাতুলকে ঢাকায় আনা হয়। ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। প্রথম আলো ট্রাস্ট তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছে। এ ছাড়া চিকিৎসা শেষে পুনর্বাসন ও আইনি পরামর্শ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে এই ট্রাস্ট।
জান্নাতুলকে গতকাল প্রাথমিকভাবে দেখার পর বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটগুলোর জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর আঘাতের জায়গায় অস্ত্রোপচার করে নতুন করে চামড়া লাগাতে হবে।’
প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, জান্নাতুলকে ঢাকায় আনার ক্ষেত্রে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামছুন্নাহার ও সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রদীপ কুমার দত্ত বিশেষভাবে সহায়তা করেন। এসপির নির্দেশে একজন পুলিশের তত্ত্বাবধানে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে বোন বৃষ্টি ও মা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে চাঁদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বার্ন ইউনিটের গেটে নামে জান্নাতুল। হাতের খেলনা কে দিয়েছে—জানতে চাইলে জান্নাতুল হেসে জানায়, চাঁদপুরে হাসপাতালের একজন কিনে দিয়েছেন। সে জানায়, বাড়ি যেতে তার মন চাইত। গৃহকর্তা ওমর ফারুক ও তাঁর স্ত্রী মণি বেগমের কাছে এ নিয়ে আবদার করত। আর এই আবদারের ‘অপরাধে’ তাকে নির্যাতন করা হয়।
জান্নাতুল বলে, ‘কাজকাম করলেও মারত, না করলেও মারত। এক দিন পরপর বাসি খাবার খাইতে দিত। ল্যাট্রিনের দুয়ারে ঘুমাইতে দিত। গরম ইস্তিরি দিয়া ছ্যাঁকা দিছে। একদিন মাথা দেয়ালের সঙ্গে ঠাইস্যা ধরে।’
বার্ন ইউনিটে ভর্তির প্রক্রিয়া চলার সময় জান্নাতুল মায়ের কাছে ভাত খাওয়ার বায়না ধরে। হাসপাতালের দেওয়া মাছের ঝোল দিয়ে মা ফিরোজা ভাত মুখে তুলে দেন।
ফিরোজা বলেন, তাঁর খালাতো ভাই মোস্তফা সরদার মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন বলে এক বছর আগে নিয়ে যান জয়দেবপুরে তাঁর ভায়রা ওমর ফারুক ও মণি বেগম দম্পতির বাসায়। তারপর থেকে মেয়ের খোঁজ নিতে গেলেই মোস্তফা বলতেন, মেয়ে ভালো আছে। হাসিখুশি আছে। গত এক বছরে ওমর ফারুক ও মণি বেগম টাকাপয়সাও দেননি। অভাবের কারণে জান্নাতুলের কখনো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ মেলেনি।
মোস্তফা সরদার গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে গাজীপুরের ওই বাড়ি থেকে জান্নাতুলকে হাইমচরে নিয়ে যান। অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজন জান্নাতুলকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এলাকাবাসীই মোস্তফা সরদারকে পুলিশে সোপর্দ করেন। জান্নাতুলদের প্রতিবেশী চাঁদপুরের হাইমচর এলাকার শাহজাহান ভূঁইয়া বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় ওমর ফারুক, তাঁর স্ত্রী মণি বেগম ও মোস্তফা সরদারকে আসামি করা হয়। নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত তিনজনই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি শিশু গৃহশ্রমিক নির্যাতনের কয়েকটি মামলায় আইনি সহায়তা দিচ্ছে। গতকাল এ সংস্থার কেস ম্যানেজার ফাহমিদা আক্তার বার্ন ইউনিটে জান্নাতুলকে দেখতে যান এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা জানান।

# সংবাদটি প্রথম আলো থেকে সরাসরি তুলে দেওয়া। শুধু শিরোণাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথম আলোর লিংক।