আঠার মতো লেগে থেকে সামাজিক আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হবে

follow-upnews
0 0

একজন সোনা চোরাকারবারীর ছেলে অভিযুক্ত না হলে কি মানুষের এমন দৃষ্টিভঙ্গি হত? এটা তো একটা রটে যাওয়া ঘটনামাত্র। বাংলাদেশে টাকা হয়েছে যাদের তাদের বেশিরভাগই তো এই ধরনের। এদেশে নিম্নোক্ত শ্রেণি মূলত সম্পদশালী—

১। ’৭১-এর লুটপাটের টাকায় (নগদ টাকা, জমি, গয়নাগাটি ইত্যাদি);
২। চুরি ডাকাতির টাকায় (সোনা চোরাকারবারী, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি বিবিধ ব্যবসা);
৩। এনজিওর টাকা; এবং ঘুষ খেয়ে খেয়ে।

অনেকের মনে ধারণা হতে পারে সরকারি চাকরিতে ঘুষ খেয়ে খেয়ে কত টাকার মালিক আর হওয়া সম্ভব। ঘুষের টাকা হচ্ছে একেবারে লটারির টাকার মতো। কোনো কষ্ট নেই, কোনো বিনিয়োগ নেই, টাকা চাইতেও হয় না, শুধু কাজটা করতে গড়িমসি করলে হয়, ফাইল আটকায়ে দিলে হয়, কৌশলে জিম্মি করলে হয়। ধরা খাওয়ার কোনো কারণ নেই। ধরা খায় তারা, যারা খুব বেশী বোকামী করে ফেলে। একজন অজ্ঞ-মুর্খ-অসভ্য চোর ব্যাংকের জিএম পর্যন্ত হয়ে যায়, একজন কেন, ভুরি ভুরি আছে এমন। সচিব হওয়া উদাহরণও আছে।

একজনের খবর আমি জানি বলে একজন বললাম, ব্যাকিং সে করেনি, সারাজীবন ধর্মকর্মের ভণিতা করেছে, আর চুরি করেছে। শেষ পর্যন্ত জিএম হয়ে অবসরে গেছে। ধারণা করতে পারবেন তিনি কত টাকার মালিক? কোনো অনুসন্ধান হয় অবসরপ্রাপ্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তার উপর?

আলবৎ সম্ভব। ঘুষ খেয়ে টাকা করা সম্ভব, এক কোটি দুই কোটি শত শত কোটি টাকা করা সম্ভব। শুধু জমানোর বিষয় তো না, তাদের রাজকীয় জীবনের খোঁজও তো রাখতে হবে। চাইলে একজন এসিল্যান্ডও অনেক টাকা ঘুষ খেতে পারে। অনেকে খায়ও। ট্যাক্স, কাস্টমস, পুলিশ, রাজউক, খাদ্য অধিদপ্তর, ব্যাংক, পাসর্পোর্ট অফিশ— কোথায় লুটপাট চলছে না?

সরকারি চাকরিতে ঘুষ খেয়ে শতকোটি টাকা করে বেরোনো মানুষ পাওয়া যাবে অনেক। কিন্তু এরা তো বোঝে টাকাটা কীভাবে কোথায় কার নামে রাখতে হয়, কীভাবে বিনিয়োগ করতে হয়।

সরকারির চাকরির এই অবৈধ টাকা আবার ঢোকে বেসরকারি খাতের অবৈধ ব্যবসায়। অথবা ঝকমারি কোনো ব্যবসায়। এই ঢাকা শহরে অনেক দোকান দেখবেন, যা দেখলে মাথা বিগড়ে যায়, কিন্তু বেঁচাকেনা তেমন নেই, তাহলে ঐ দোকানে এত খরচ করে লাভটা এমন কী হয়?

আসলে লাভ হওয়ার দরকার নেই, ওটার মাধ্যমে পাঁচ লাখ (ধরি) ঘুষের টাকা সাদা করে তো নেওয়া যায়। তদন্ত করে দেখলে দেখা যাবে দোকানটি হয়ত কোনো ঘুষখোর সরকারি চাকুরের বউ বা শালির নামে।

ধর্ষক সাফাত সোফাতের এইসব ঘটনা আসবে, ঘটনা যাবে; দরকার আঠার মতো লেগে থেকে সামাজিক আন্দোলনটা চালিয়ে যাওয়া, না হলে কিছুই বদলাবে না। দরকার আরেকটা গণজাগরণ— সে গণজাগরণটা দরকার দুর্নীতি এবং দুবৃত্তায়নের বিরুদ্ধে।

Next Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ।। শামসুর রাহমান

এখানে এসেছি কেন? এখানে কি কাজ আমাদের? এখানে তো বোনাস ভাউচারের খেলা নেই কিম্বা নেই মায়া কোনো গোল টেবিলের, শাসনতন্ত্রের ভেলকিবাজি, সিনেমার রঙিন টিকিট নেই, নেই সার্কাসের নিরীহ অসুস্থ বাঘ, কসরৎ দেখানো তরুণীর শরীরের ঝলকানি নেই কিম্বা ফানুস ওড়ানো তা-ও নেই, তবু কেন এখানে জমাই ভিড় আমরা সবাই? আমি দূর […]