ছোটগল্প: মৃত ইঁদুর

follow-upnews
0 0

একটি ক্ষুধার্ত ভালো ইঁদুর সন্ধ্যায় গিয়েছিল মাঠে ধান খেতে। গিয়ে দেখে মালিক পাকা ধানে ওষুধ ছিটাচ্ছে। ইঁদুরটা ছিল অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। হতাশ হয়ে সে গর্তে ফিরে আসে। তার আশে পাশে বাস করত অনেক মন্দ ইঁদুর। মন্দ ইঁদুরেরা রোজ পেট পুরে খেতো এবং অবসরের জন্য অনেক ধান জমিয়ে রাখতো । এই ভালো ইঁদুরটা একেবারে অন্যরকম। সে কখনো জমায় না।

দেখতে দেখতে রাত গভীর হয়ে আসে। ফুর্তিবাজ চোর ইঁদুরগুলো  ধানের শীষ কেটে নেয়। মাটির নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ বানিয়ে মণকে মণ ধান আস্তানায় নিয়ে আসে। ভালো ইঁদুরটা ওদের অনেক বলেছে, “ভাই, খাচ্ছ খাও, কিছু ধান শীষ থেকে ঝরিয়ে নিয়ে যাও। এভাবে মানুষের সর্বনাশ করো না। ও ব্যাটারও নিশ্চয় ছেলে পুলে আছে।” কে শোনে কার কথা। ভালো ইঁদুরটা ভাবে, বাঁচার জন্য কিছু না নিয়ে তো পারিনে, কিন্তু একেবারে সাবাড় করে কেন নেব?

মন্দ ইঁদুররা খুব সুখেই আছে। গভীর রাত্রে সবাই ধান ক্ষেতে যাবে, এখন আমোদ ফুর্তিতে মেতে আছে। গতবারের রেখে দেওয়া গম দিয়ে তারা আজকে ওয়াইল্ড ব্রিউ তৈরি করেছে। সেগুলো খেয়ে সবগুলো মাতাল হয়ে এখন ঢুলছে।

ভালো ইঁদুরটাকে দেখলেই সবাই মস্কারা করে। দ্যাখ্ দ্যাখ্ সাধু বাবা আসছেন। আসুন আসুন খালি পেটে এক ঢোক মেরে যান। আরেকটা মন্দ ইঁদুর গলা চড়িয়ে বলে, আরে খালি পেটে মদ গিললে বমি হয়ে যাবে তো! আমরা আজকে অনেক মজার তুষের হালুয়া করেছি। দে! দে! বেচারাকেও খানিকটা দে।

ও খুব কষ্ট পায়। অপমানে কুঁকড়ে থাকে। তবু ক্ষুধার যাতনায় খায়। খেজুরের রসের তুষের হালুয়া। খেয়ে ও খুব তৃপ্ত হয়। ওদের দেখাদেখি ও গমের ব্রিউও খায়। একটু বেশিই খায়। ও এখন ভাবছে, যদি ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে তো সর্বনাশ। ওরা সব মাঠে গিয়ে মরবে।

সন্ধ্যায় লেদা পোকা মারার জন্য মালিক ধানে ওষুধ দিয়েছে। খুব কড়া ওষুধ। ও কিছু বলার চেষ্টা করছে— তো…মরা আজ…কে মা…ঠে যে….ও না। ধানে বিষ দি…য়ে…ছে। বলতে বলতে ও ঘুমিয়ে যায়। মন্দ ইঁদুররা ওকে দেখে হাসে। বলে দ্যাখ্! কেমন ধরেছে। শালা, এক ঢোক গিলেই একেবারে সেঁটে গিয়েছে! সব আবোল তাবোল বকছে।

ওরা দল বেধে মাঠের দিকে রওনা হয়। ফুর্তিতে হৈ হুল্লোর করছে। ওদিকে ভালো ইঁদুর স্বপ্ন দেখছে— মন্দ ইঁদুররা সবাই বিষ মাখানো ধান খেয়ে মারা যাচ্ছে। ও ধড়ফড় করে উঠে পড়ে।

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গিয়ে মাঠের কাছে ওদের ধরে ফেলে। হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, “তোমরা। আজকে। মাঠে। নেমো না। সন্ধ্যায় মালিক ধান ক্ষেতে বিষ দিয়েছে।”

মন্দ ইঁদুররা ভুল বোঝে। ওরা খুব ক্ষেপে যায়। বলে, তোকে আমরা খেতে দিলাম, আর তুই এখন আমাদের ধোঁকা দিচ্ছিস! নিজে মদের নেশায় বুঁদ হয়ে আছিস বলে আমাদের আটকাচ্ছিস। শালা, দেখাচ্ছি তোকে মজা— এই বলে সবাই ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওর কোনো কথাই কারো কানে যায় না। মারতে মারতে ওকে মেরে ফেলে।

মন্দ ইঁদুররা এবার দ্বিগুণ উল্লসিত হয়ে সবাই এক সাথে ক্ষেতে নামে। হৈ হুল্লোড় করে ধান খেতে থাকে। এবং একে একে সবগুলো ইঁদুর মারা যায়।

সকালে মালিক এসে দেখে মাঠে অসংখ্য মরা ইঁদুর। মালিক ইঁদুরগুলো মাঠ থেকে অপসারণের জন্য তুলে নেয়। একই সাথে রক্তাক্ত ভালো ইঁদুরটাকেও তুলে নেয়। মালিকের কাছে সবই এখন মৃত ইঁদুর। ভালো মন্দের কোনো তফাৎ নেই।


গল্পটি দিব্যেন্দু দ্বীপ-এর গল্পগ্রন্থ জবানবন্দী থেকে গৃহীত।

Next Post

জীবন সায়াহ্নে

  দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। জন্মহার কমেছে। জন্ম হার ক্রমান্বয়িকভাবে কমতে থাকতে একটি ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড তৈরি হয়, ঐ সময়টাতে দেশে কর্মক্ষম (যুবক) মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে। বিষয়টাকে ডেমগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বলে। সময়টা ধরতে পারলে এবং কর্মক্ষম মানুষদের কাজে লাগাতে পারলে এটি ডেমগ্রাফিক বোনাসে পরিণত হয়, নইলে বোঝায় পরিণত হতে পারে। […]