ভাবনাগুলো কোথা থেকে কোথায় গেল! // শেকস্ রাসেল

শাহিদা সুলতানা
আমার হাতে ধরে গড়া একটা পরিবার,
কোথা থেকে কোথায় চলে গেল,
আবার ধ্বপাস করে সব পড়ে গেল!
একটা একটা করে সব মানসিক রোগী হয়ে গেল!
আমার আর কিচ্ছু করার নেই,
ক্লান্ত হয়ে সত্যি আমি একজন ঈশ্বর খুজছিলাম,
পেয়েও গেছি মনের মতো,
কিন্ত আমার সাধ্য নেই
যথার্ত অর্ঘ্য দিয়ে তোমায় ডাকার,
শুধু প্রার্থনাটুকু করতে পারি জোড় হাতে,
শক্তি নেই তোমাকে পাবার,
তবু সারাক্ষণ ভয় হারাবার!
কারো পথ আগলাতে নেই,
ভালোবাসার অজুহাতেও না,
প্রিয় হলে তাকে গন্তব্যের পথে
চুল পরিমাণ হলেও এগিয়ে দিতে পারতে হয়,
না হলে ভালোবাসতে যাবার কি মানে হয়?
ভালোবাসা মানে তো টেনে নামানো নয়,
টেনে তুলতে পারতে হয়।
আমি ভেবে কূল পাই না,
তোমার জন্য আমি কী করতে পারি,
নিতে পারি তো সবই।
সত্য যে আমার লাগেনি এ যাবৎ
কারো কাছ থেকে কিছু,
পরিশ্রম আর পরিকল্পনা দিয়ে উতরে গেছি,
সম্রাজ্য জয় করতে না পারি,
এভাবে বাকী জীবনটাও কেটে যাবে জানি।
তবু তোমাতে এসে থমকে গেছি—
হাতড়ে বেড়াই,
কী দিতে পারি তোমায়!
বিনিময়ে আমার যে তোমার সবটুকু চাই।
নিজেকে আমার
সর্বশেষ অভ্যাগত মনে হয় তোমার বেলায়,
তবু এই অবেলায়
তোমাকে দেখলে আমি ভুলে যাই বাস্তবতা সব,
ভাবতে থাকি
শুধু ইচ্ছেটাই বুঝি আমার মস্ত বড় বৈভব!
আজকাল একটা ছবিও দাও না কোথাও!
খনিতে আটকা পড়া শ্রমিক
কয়েক মাস পর বাইরে এসে যেভাবে
চোখ রগড়ে আকাশ দেখে,
আমি তো ওদের চেয়েও বুভুক্ষুর মতো
ঘুম ভেঙে রোজ খুঁজি তোমায়!
হন্যে হওয়া অনুরাগ নিঃস্ব হবে
তোমার বিরাগ হলে,
সেদিন সত্যি আমি এইসব স্বজন ছেড়ে
দূরে কোথাও যাব চলে।
আমি কি কিছু চাইতে জানি?
দেখো, আমি কেমন না পাওয়ার গল্প বুনি!
তুমি কীভাবে সব সামলাও!
শরীর কিন্তু কিছুটা ভেঙেছো,
ইচ্ছাকৃত, নাকি কাজের চাপ?
একটু ক্লান্ত দেখায়,
তবু দারুণ লাগছে তোমায়।
আমি আশাহত, আবার দুর্নিবার,
এভাবে বেঁচে থাকি বার বার।
কাউকে বলি না,
তোমাকে বলে ফেলেছি
পরিবারের সবাই মানসিক রোগী সে কথা!
তুমি কি এখন আমায় পাগল ভাববে?
সব ইচ্ছাই যে তখন মূল্য হারাবে!
তাহলে আমি আর তোমায় ডাকব না,
বলব না কিছু,
পাগল ভাবলে এই শেষ,
যেমন ছিলাম সেই বেশ!
ঠিকই পারব,
ঘুমাব, খাবদাব,
লেখালেখি আর পড়াশুনার পরিমাণটা একটু বাড়াব।
তোমার কথা ভেবে খুব কষ্ট হলে
এক মগ চা আর একটা সিগারেট নিয়ে চলে যাব বারান্দায়,
দূর আকাশে তাকিয়ে বুঝে নেব—
তারাদের মেলার মধ্যমনি কীভাবে নিঃস্ব আমার হয়!
সত্যি আর ডাকব না তোমায়,
এমন সময় অসময়।
কষ্ট হয়,
তবু এ সত্য আমি চাই—
আমার জন্য তোমার যেন না হয়
এক বিন্দুও অপচয়।
সময় শ্রম আর মেধার ভীষণ অপব্যবহার!
আমার চেয়ে বেশি এ জানা কার আছে আর?
ভালোবাসার দাবীতে পরিবার কেড়ে নিয়েছে আমার সকল,
কখনো আমাকে থাকতে দেয়নি একটুও অবিচল।
তাই ভালোবাসতেও ভয়,
ভালোবাসা পেতেও আমার ভয়।
ভালোবাসা মানে কেড়ে নেওয়া,
এটাই আমার কাছে তার একমাত্র পরিচয়।
এর চেয়ে একটা এন্টারপ্রাইজ যদি হতো
তোমার আর আমার,
কিছু কাজ হত, উপকার হত সবার।
পেতাম তোমার ছোয়া সারাক্ষণ—
মর্মে না হোক, কাজে কর্মে।
কিন্তু তোমার কেন তা চাই?
তোমার তো কোনো অভাব নাই।
তোমার সাথে থাকার
কোনো একটা অজুহাতও কি
অবশেষে আমি খুজে পাই!
কোনো হিসেব মেলে না,
তবু তুমি, তুমি তুমি—
শুধু তোমার জন্য
থাকব না আমি আর এমন নগন্য!
চাই, তোমাকে চাই,
এক মহারাণী,
আমি জানি কতটা নিষ্পাপ,
আর এমন ভীষণ সুন্দর তিনি।
এই শান্ত মধুর শেষ রাতে
কেউ যদি তোমার মতো দেখতে অবিকল—
স্নিগ্ধ চপল, এসে বলত,
জীবন এমনই
হয়ত ঠিক, হয়তবা সবটাই শুধু ভুল,
তাতে কী?
খুঁজে নাও ভুলে ভুলে হেথায় সেথায়
ফুটিয়েছো যত ফুল।
প্রথাগত যুক্তিতে আমাকে নাস্তিক বলতে পারো,
তবে মানুষ সমর্পিত হলে আমার ভালো লাগে,
হোক সে অজানা ঈশ্বরে।
যুক্তিবাদী মানুষ ভালো,
কিন্তু দিনশেষে আধ্যাত্মিকতাই পারে
মানুষকে প্রকৃতপক্ষে মুক্ত করতে।
শেষ রাতের এই আযানটা আমাকে মুগ্ধ করে,
মনে হয় মানুষের সকরুণ নিঃশর্ত সমর্পণ।
আমি সামাজিক ঈশ্বরে অবিশ্বাসী ঠিকই,
কিন্তু যখন গ্রামে যাই
ভোরবেলা বের হই
বৃদ্ধের মসজিদ মুখে হেঁটে যাওয়া দেখতে।
ঈশ্বর কারো লোভের ভাগাড়,
কারো আশ্রয়।
কেড়ে নিলে সন্তান হারা মা যায় কোথায়? 
খুব কড়াকড়ি কিছু আমার তাই ভালো লাগে না,
মানুষ মুক্ত থাকুক—
কেউ যুক্তিতে, কেউ ভক্তিতে।
এই যে তুমি আমার,
বলতে পারো
যুক্তি দিয়ে কে এর করবে বিচার?

কবি: লন্ডন প্রবাসী সাহিত্যিক

পড়তে পারেন: