সমুদ্রের সুখ // দিব্যেন্দু দ্বীপ

follow-upnews
0 0

কাব্যগ্রন্থঃ সমুদ্রের সুখ

প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০১৫

প্রকাশকঃ রতন চন্দ্র পাল

প্রকাশনীঃ গ্রন্থকুটির

উৎসর্গঃ নির্মলেন্দু গুণ

সমুদ্রের কেন লাজ থাকবে? সমুদ্র কেন লুকাবে? দানবীয় ঢেউ না থাকলে তার সার্থকতাই বা কোথায়? অথৈ সাগরে জীবনের আয়োজন, সেখানে মৃত্যুরও আমন্ত্রণ। সাগর উন্মুক্ত এবং অবারিত। তীরে সে তটিনী, কখনো উন্মদিনী, গভীরে শান্ত-সাবলীল। নাবিক, জেনে নাও সাগর সংগমের সকল কৌশল। নাবিক, তুমি দক্ষ হও। আবহাওয়া বুঝে যাত্রা করো। প্রয়োজনে তীরে তরী ভিড়াও। অন্ধকারে অসতর্ক হইও না, অজানাকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করো। প্রেমিক হও, সাগর সংগমে পরিপূর্ণ হও। বিশাল জলরাশিতে সহস্র জনের চলাচলে ঈর্ষান্বিত হইও না। বহুগমনে সাগরের কিছু কমে না। ক্রোধে দিকভ্রষ্ট হইও না। সমুদ্রের বিশালতার তুলনায় তুমি একটি বিন্দুও নয়। তাকে বন্দী করার ধৃষ্টতা দেখিও না। সমুদ্র অবিনশ্বর, তাকে নষ্ট বলো না। দূষণে সে দূষিত নয়। দানবের তর্জন গর্জন থেমে যায় সমুদ্রের সর্পীল সলিলতায়। দস্যু নির্জিত হয়, নির্ধন আশ্রিত হয়। কতজনে কত কী ফেলে যায়। সমুদ্রে সবই মিলিয়ে যায়। সমুদ্রের কি রং বদলায় তাতে? সমুদ্রই নীলই থাকে, জন্ম থেকেই সে নীল। তুমি কেন নির্বোধ ক্রোধে রক্তিম হও?

১.

সমুদ্রের সুখ
সমুদ্র কখনো স্বপ্ন দেখে না, সমুদ্র স্বপ্ন দেখায়।
সমুদ্রের শীত গ্রীস্ম বর্ষা নেই, সে সদা উত্তাল;
সমুদ্রের কোনে সংকল্প থাকে না, সে কখনো শিল্পী না, সমুদ্র একটা লেলিহান শিল্প; সমুদ্র দেখে শ্রেষ্ঠ শিল্পীরও চোখ কক্ষান্তরে যায়।
সে ভাসায় সে হাসায় সে কাঁদায়, সুখের নিমিত্তে তার জন্ম।
জলদস্যুতেও সে সুখী, মাঝিতেও সে সুখী;
কিন্তু স্বল্পতে সে কখনো সুখী নয়।
অবিচার করো আর বিচার করো- সমুদ্র কখনো বিবেচক নয়,
সে পইপই পূর্ণতা চায়।
অস্পন্দ অক্ষিতেও সে পুলকিত,
কর কাপট্যেও তার সীমাহীন সুখ হয়;
সমুদ্র কখনো সংগমে ক্লান্ত হয় না।
সমুদ্রের নেই জাত বিচার, বয়স বিচার, সৌন্দর্য বিচার।
সমুদ্র তীরে কবি চায় না, ত্বরিত কর্ম চায়;
সমুদ্র চায় সংগমের অমিত শক্তি,
ত্রৈবিদ্য সাঁতার শিল্পীর বিরামহীন অবগাহনই
সমুদ্রের জন্মের শ্রেষ্ঠ উপার্জন।
সবার কাছেই রয়েছে তার সুখ পাওনা-
নৌকার চলাচলে তার স্বল্প সুখ,
জাহাজের চলাচলে সমুদ্রের স্বতঃসিদ্ধ সুখ।
কলার ভেলাও সেখানে ভাসে, মরা লাশও ভাসে;
কেউ আজলা ভরে অজু করে,
কেউবা সুখ সাগরে অবিরাম অবগাহন করে।
কেউ শুধু পা ভিজিয়ে পুলকিত হয়,
কেউ আবার কৃত্রিম দুঃসাহসে সমুদ্রের অতলে তলিয়ে যায়।
হারিয়ে গেলো তবু তো সে জানলো সমুদ্র সংগমের সম্পূর্ণ সুখ।

২.

আলেয়ার আলো
সে সব চোখের বোবা চাহনি আমি দেখেছি।
ও চোখগুলোর আকার প্রকার এক নয়
অথচ লক্ষ্য ওদের একই!
কোথাও কেউ নেই
শুধু আমি একা ছুটে চলেছি ঐ চোখগুলোর পিছে পিছে।
দেখছি জোড়ায় জোড়ায় চোখগুলো ধেয়ে চলেছে
সহস্র জোড়া লক্ষ জোড়া-
বৃদ্ধরা ঝাপশা চোখে হাল ছেড়ে দেয়।
বৃদ্ধের জন্য
করুণার অশ্রু বাঘের থাবায় আমার সদ্য রক্তিম
স্তনের কালো দাগগুলো ধুইয়ে দেয়।
সম্বিত ফিরে পাই সুখের বেদনায়।
দেখি
সে আমার সম্মুখে
বৈঠা হাতে ভালোবাসার অভিনয়ে দাঁড়িয়ে।
আবার আমি ঘুমিয়ে পড়ি সেই চোখগুলোর নেশায়।
এবার ধেয়ে আসছে জোড়ায় জোড়ায় হাত।
চেনা, স্বল্প চেনা, অচেনা; ওরা।
বুঝেছি
আমি থাকি রঙ্গালয়ে, তোমরা থাকো রঙ্গমঞ্চে।

৩.

কাঠ ঠোকরা
কোথায় যেন একটা কাঠ ঠোকরা
ঠক ঠক করে ঠোকর মারছে দিনরাত
একটু থামে আবার ঠক ঠক ঠক…
দৃষ্টিতে কিছুতেই সে ধরা পড়ে না
ঠোঁট উঠতেই সে ঠক ঠক ঠকরিয়ে চলেছে…
ঠোকরে ঠোকরে সে শাল সেগুনও চূর্ণবিচূর্ণ করে।

৪.

কুমারী নদী
তোমরা সেখানে উজান দেখেছো,
জোয়ার ভাটা দেখেছো,
আমিতো দেখিনি।
নব্যপ্রস্তর যুগের ঐ নদীটাও
আমার জন্য কুমারী নদী,
যে নদীতে নাও বেয়ে
বালক বৃদ্ধ হয়েছে,
বৃদ্ধ ফের যুবক হয়েছে।

৫.

বন্দীশালা

এ বন্দীশালায় কত বাবর বৈরাগী হলো! নটবরের যত নাটক সবই হয়েছে এ বন্দীশালায়। তুমি আজ ভগবান এ তোমার আর নতুন কী ভান? এসবই করে রাবণ, এসবই করে রাম। এ হলো সব গল্পের শেষ অঙ্ক, এখানে রামের চিতাও জ্বলে, রাবনের চিতাও জ্বলে। বৃদ্ধের ঈশ্বর, যুবকের ঐশ্বরিয়া। সে যুগের লীলা কীর্তনে রাই দুর্লভ, এ যুগের চলচ্চিত্রে কারিনা কল্পতরু। এ বন্দীশালায় আসে কৃষ্ণ, এ বন্দীশালায় আসে কংস, এ বন্দীশালায় আসে শিব, এ বন্দীশালায় আসে শয়তান। এ বন্দীশালায় আসে মুয়াজ্জিন, এ বন্দীশালায় আসে মহারাজ। এ বন্দীশালায় সকল মানুষের গল্প। কোরান-ত্রিপিটক-বাইবেল-বেদ; এ বন্দীশালায় বসে পাঠ করে বিষ্ণু, পাঠ করে বুদ্ধ, পাঠ করে যিশু, পাঠ করে হযরত। এ বন্দীশালায় হয় মানুষের রোজ কেয়ামত।

৬.

কল্পতরু
ইন্দুমতী অপ্সরা সতী
কোমর কুন্তল হরিণী
শীরীন অধর অদ্রব্য, গৌরী,
শক্য পয়োধরে চুচুক শাণিত,
কোমর তনু, নাভিতে পদ্মরাগ,
নির্বিদার গিরি নিতম্বে দেহাত্বপ্রত্যয়,
পরাগে পরাগত নিতল যোনী রক্তোৎপল।
নিরুব্দেগ যোগীনী, প্রণায়াশাক্ত নিলম্বন।
দস্যু নির্জীত, নির্ধন আশ্রিত, নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রী।

৭.

পরম সুখ
গোপনে গভীর প্রণয়
সত্যের চেয়ে সতী আর কে বা হয়?
রাত্রী হলে অন্ধকার নামে
সূর্য কি ডোবে?
এভাবেও ঠিক ঠিক অর্ধেক মেলে।
চাঁদের চুরিতে সে
কতটুকুইবা ঠকে?
দৃশ্য নতুন হয়,
আবহ বদলে যায়,
এর চেয়ে আনন্দ
কিছুতে কি বেশি হয়?

৮.

প্রয়োজন
কারো কিছু হারাবার নেই,
শুধু দিতে পারি আর নিতে পারি।
হৃদয়ের রোদন নেই,
আমাদের দ্বৈত শক্তি
প্রয়োজনে পাশাপাশি।
নেই অর্থহীন ভালোবাসাবাসি।
এ এক অব্যক্ত প্রেম।
এ সকাল ফুল হবার নয়,
ফুল ফোটাবার।

৯.

অভিসার
আমি দেখেছি
অন্ধকারে আলোকের অভিসার,
আমি দেখেছি
মরুভূমিতে মহাসমুদ্রের সংগম,
আমি দেখেছি
অমাবস্যার চাঁদের সূর্যস্নান,
আমি একটি হরিণীকে
ব্যাঘ্র শাবক প্রসব করতে দেখেছি।
[তোমাতেই তোমার উপহার]
শুকনো কাঠ নিংড়ে নিংড়ে
বের করে এনেছি
এক পেয়ালা মনমাতানো মহুয়া।
নাও নারী,
তোমার জন্য ভালোবাসার প্রথম উপহার।

১০.

ভালোবাসো
কোথায় নীলাকাশ, কোথায় মহাকাশ
সবই তুমি জানো
তবু আমায় ভালোবাসো।
উত্তাল উন্মত্ত পারাবার,
কী এক দুঃখভরা নেশায়
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে আসো।
[ফুল নিয়ে ফুলের স্বপ্ন]
ফুল হাতে নিয়ে ফুলের স্বপ্ন!
বাসর ঘরে এসেছে প্রেমপত্র।
চারিদিকে ভাঙনের প্রতিধ্বনি,
তবু বিশ্বাস করি,
প্রস্তর হিমালয় গলে গলে
তুমি আজ স্রোতস্বিনী।

১১.

অসমতা
যে ভালোবাসা নৈমিত্তিক, বপুতে সে বল নৈবচ।
কী দিয়ে তাকে ভোলাবে বলো?
উলুখড় বাহুতে ভালোবাসার সে শক্তি অসম্পূর্ণ।
হৃদয়ের রাশভারিতে দিগম্বরীর আরাধনা হয় না।
মুণ্ডপাত ব্যতীত মৃন্ময়ীর মৃত আত্মার সাথে আসক্তি হয় কখনো?
মন্ত্রের বাণী তন্ত্র মানে না।
হৃদয়ের দেনা-পাওনায় সে অপূর্ণ।
স্বপ্ন দিয়ে কি সংকল্প পূরণ সম্ভব?
বন্যতায় যে বিপন্ন হবে ভালোবাসা দিয়ে তাকে কতটুকু ভোলানো যায়?

১২.

একটি গল্প
সংবহনযোগ্য সংকল্পই কি তবে ভালোবাসার সর্বশেষ গল্প?
কত কী আয়োজন, চুপিসারে কথা বলা,
কাজ ফেলে ছুটে চলা, সবই কি ষড়তন্ত্রের ষড়যন্ত্র?
মিছেমিছি হৃদয়ের দহন,
কী তার দাম সব ব্যাকুলতার লক্ষ্য যখন একই হয়?
সে এক সন্ধ্যার গল্প,
আমরা দুই ব্যাকুল ভীরু ভালোবাসার কত গল্প যে বানিয়েছি এতদিন!
একটি হিম হিম সন্ধ্যা অবশেষে আমাদের বুঝিয়েছে
লক্ষ লক্ষ বছর গল্পে গল্পে ভালোবাসার চেয়ে
একটি অকপট সন্ধ্যার সওগাতই বেশি সত্য।
সে সত্য আজও খেলা করে আমার অন্তর-আত্মায়,
আমার সমগ্র অস্তিত্বে।

১৩.

একটি বাড়ি এবং আমি
তার কোনো দলিল নেই,
এই বাড়িটার দলিল আছে।
আমার নামে দলিল হয়েছে।
একজন সাধারণ মেয়ের নামে একটা পুরো বাড়ি!
এই বাংলাদেশে!!
মানুষের চোখ ঠাটিয়ে ওঠে।
হিংসায় জ্বলে যায় নারী পুরুষ, সবাই।
সত্যিই বাড়িটা আমার নামে,
দলিলে কোনো ঘাপলা নেই,
পৈতৃক সম্পত্তি নয়,
অষ্টাদশী আমি নিজের উপার্জনে একটি অট্টালিকা বানিয়েছি,
মানুষ তো বিস্মিত হবেই।
বিস্মিত আমিও; বাড়ি দেখে নয়,
বিস্মিত হয়েছি আমাকে দেখে।
কেমন বদলে গেলাম!
তিন বছরে হয়ে গেলো মস্ত বড় একটা বাড়ি।
সেসবের কোনো দলিল নেই;
বাড়িটার দলিল আছে।
দলিলের বদৌলতে বাড়িটা আমার।

১৪.

কল্পিত খাদ্য
রংহীন গন্ধহীন বর্ণহীন
কল্পিত একটি খাদ্য আমি খেতে চাই।
চিবিয়ে চিবিয়ে চেটে চেটে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
অতল তমসাচ্ছন্ন
কল্পিত একটি নদীতে সাঁতার কাটতে চাই।
দু’হাতে দু’পায়ে, প্রজাপতির মতো
আলতো করে ডানা মেলে
অসীম শূন্যে
কল্পিত একটি আকাশে উড়ে যেতে চাই।

১৫.

সাগর সংগমে
হঠাৎ মেঘের ডাক শুনে চমকে উঠি,
শিশুর মায়ের কোলে লেপ্টে যাওয়ার মতো
ছেঁড়া তোষকটুকু আকড়ে ধরি,
বজ্র নিনাদ শব্দে ঘুম ভাঙে,
ফ্যাল ফ্যাল করে বাইরে তাকিয়ে দেখি
ভোরের রোদ্দুর যাযাবরের মতো
মুহূর্তে মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করছে।
তখন তুমি চলেছো
নদীর কথা ভুলে সাগর সংগমে।

১৬.

প্রত্যাবর্তন
দরজায় ঠক ঠক করে নক করে যাচ্ছি
কোনো সাড়াশব্দ নেই, কেউ খুলছে না।
রাগের মাথায় দিলাম সজোরে ধাক্কা
কড় কড় করে কড়া নড়ে উঠলো
দরজা তালাবদ্ধ।
সময়ের দু’দিন আগে চলে এসেছি বৈকি,
তাই বলে মাঝরাতে দরজায় তালা!
চারপাশে সুনসান অন্ধকার,
দরজার নিচ থেকে অনবরত বিজলী আলো
পালিয়ে এসে আমাকে বলে গেলো
অপেক্ষা করো।
দীর্ঘদেহী একটা বিষন্ন ছায়া
দেয়ালে ঠেস দিয়ে
ঠোঁটে একটা কাচা সিগারেট নাড়াতে নাড়াতে আমায় বলে,
নিষ্ঠুর হইও না।
“মানুষ গোপনে যা করে সবই মানবিক,
পশুরা গোপন করে না।”

১৭.

অবশেষে
কোথায় নীলাকাশ, কোথায় মহাকাশ
সবই তুমি জানো
তবু আমায় ভালোবাসো।
উত্তাল উন্মত্ত পারাবার,
কী এক দুঃখভরা নেশায়
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে আসো।
[জন্মাবো আমি কারবালায়]
জন্ম নিও তুমি সিন্ধুতীরে
না হয় জন্মাবো আমি কারবালায়।
হিন্দু বলে মুসলিম অপভ্রংশ,
মুসলিম বলে হিন্দুরা কাফের।
আমি মাটির মানুষ।
আমার মসজিদে মন্দিরা বাজে মন্দিরে মুয়াজ্জিন।
আমার পূজা সৃষ্টিতে ওদের স্রষ্টায়।
জন্ম নিও তুমি সিন্ধুতীরে
না হয় জন্মাবো আমি কারবালায়।

১৮.

স্মৃতির পাতা
মাঝরাতে হৃদয়টাতে হাত বুলিয়ে দেখি সে রক্তাক্ত
ছোপ ছোপ কালো কালো জমাট বাঁধা রক্ত।
মনটাকে নাড়া দিয়ে দেখি সে ক্লান্ত,
ফিসফিসানির শক্তিটুকুও তার নেই।
এই নির্জন রাতে একটু মায়া হয় ওদের জন্য।
মস্তিষ্ক হাতড়িয়ে খুঁজে ফিরি কিছু,
পেয়েছি একটা চড়ুই পাখির ডিম,
একটা পঁচিশ পয়শা দামের লজেন্স
আর দুপুরের ঘুম পালানো মেঠো রোদ্দুর।

১৯.

আশ্রয়ের খোঁজে
আসবো নাকি তোর কাছে?
এক পলকে যেটুকু পারি দেখে নেবো।
তোর রাঙা দু’টি ঠোঁট ছুঁয়ে মনের কথা বুঝে নেবো।
লজ্জ্বা দিলে তোর বুকেই মুখ লুকাবো।
[অন্ধ আয়োজন]
ঘন অমাবশ্যায় কল্পিত প্রেমে
লুব্ধ লেহনের চুম্বনস্রোতে
তোর গোলাপকুঞ্জের সজল ক্রন্দন।
তৃপ্তির ঢেকুর তুলে কেঁপে কেঁপে ওঠে নাভি পদ্মরাগ।
তোর শক্য দু’টি পয়োধর আবীর আভায়
আমাকে ভাসায়, আমাকে হাসায়।

২০.

অবুঝ আমি
কিছু একটা হারিয়েছে আমার,
খুঁজে ফিরি বার বার।
বিশ্ব চরাচরে অহেতুক আমার ঘোরাঘুরি,
সবাই এ ধরায় যে যার মতো খেলছে লুকোচুরি।
আমিই শুধু কানামাছি,
অন্ধ হয়ে আছি তোমাদের কাছাকাছি।

২১.

ভালোবাসতে চাও
আমাকেও তুমি ভালোবাসতে চাও?
শিকারী যেমন ফাঁদে পড়া সাদা বক ভালোবাসে।
আমাকেও তুমি ভালোবাসতে চাও?
আমি যেমন পোষা কুকুর ভালোবাসি।
আমাকেও তুমি ভালোবাসতে চাও?
মালিক যেমন নির্বোধ শ্রমিক ভালোবাসে।
কীভাবে তুমি আমায় ভালোবাসতে চাও?

২২.

ভালো লাগে, ঘোর লাগে
তুমি কত সুন্দর করে আমায় মিথ্যা বলো, আমার ভালো লাগে।
রাত দুপুরে পাশ ফিরে তোমায় হারিয়ে আমার ভালো লাগে।
তোমার দেহের কালো কালো ছোপ ছোপ দাগগুলো আমার ভালো লাগে।
আমার ভালো লাগে, ঘোর লাগে।

২৩.

শুনবে তুমি
হতে হবে না সবটুকু, বেশিটুকুও নয়,
জীবনের একটি জানালা যদি হও,
আমি উতল হাওয়া হবো।
তোমায় উড়িয়ে নিয়ে যাব দূরদেশে,
অক্লান্ত নির্জনতা শেষে তোমায় একটি কথা কবো,
শুনবে তুমি কানে কানে?

২৪.

আমি এবং মাছেরা
অ্যাকুরিয়ামের বর্ণিল মাছ আমায় নান্দনিক ভাবে,
ক্ষুধার্ত দিনে হাতড়ে পাওয়া
সুযোগের ভেটকি মাছ আমায় রাক্ষস ভাবে।
ঐ মাছটি নেড়েচেড়ে আমি ভেজে খেতে চাই
কড়মড় করে।
মানুষ ভুল বোঝে,
ভদ্র দিনের জন্য অপেক্ষারত আমায় উদাসীন ভাবে।

২৫.

এবার সত্যি সত্যি ভালোবাসো
তোমার অপেক্ষায় অভিমানী শিশিরবিন্দু
কখন বৃষ্টি হয়ে ঝরেছে
মেঘমালা জানে।
অবেলায় ফিরে
কেন তুমি তাকিয়ে রও শুদ্ধতার আশায়
আকাশ পানে?
জানা-অজানায়
মিশে গিয়ে লবণাক্ত হয়েছি
উত্তাল তরঙ্গের টানে।
এখানে সবার সমান ভাগ,
থাকে না কারো কোনো অভিমান,
কেউ তো করে না কখনো রাগ।
তুমিও তরঙ্গে ভাসো,
এভাবে যতটুকু পারো কাছে আসো।
এবার তুমি সত্যি সত্যি ভালোবাসো।

২৬.

তুমি কেন নির্বোধ ক্রোধে রক্তিম হও?
সতীত্ব মানে কি ছাই মন দেওয়া নেওয়ার দোহাই?
সতীত্ব মানে কি ছাই শুধু কুমারিত্ব ধরে রাখার লড়াই?
কিছুই না এসব,
দাহ্য হলে জ্বলে, না হলে জ্বলে না।
অহেতুক ভালো সাজার বাহানা।
পানিতে সলতে ফেলে বলো সতী!
কেরোসিনে জ্বলে উঠলে বলো অসতী!
মনে একগাদা মিথ্যা পোষো,
কেন এত হিসেব কষো?
কে কোন গগনে ওঠে,
কোন গগনে অস্ত যায়,
তাতে তোমার কী ফুরায়?

samudrer sukh mail

Next Post

বইমেলার আগাম আয়োজন : "অশ্রাব্য গালিগালাজ"

Asrabbo Galigalac সাধারণ মানুষ ওদের যেভাবে থুথু ছিটাচ্ছে, শাপশাপান্ত করছে, বাপবাপান্ত করছে -সে কথাই বলা হয়েছে ‘অশ্রাব্য গালিগালাজ’ কাব্য গ্রন্থটিতে। লুটেরাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং ঘৃণা কী রূপ ধারণ করেছে -সেটাই এ বইটির মূল ভাব এবং ভাষা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আগুনের আঁচ দুর্বৃত্তদের গায়ে লাগে না। জনগণ হতে তারা […]