“এই অধম ম্যজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে খোলা হলো একে একে ছয়টি দানবাক্স” -প্লাবন ইমদাদ

মাজারের টাকা গণনা
মাজারের দান বাক্স
মাজারের দানবাক্স খোলা হচ্ছে।

সরকারের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের চাকরিতে প্রবেশ করেছি। প্রত্যেকটা দিন নতুন, প্রত্যেকটা মুহূর্ত অভিনব। এমন জীবনই তো চেয়েছিলাম। চাকরির প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা আর সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের পালস উপলব্দির এক দূর্দান্ত পেশা আমার!

আজ গিয়েছিলাম এমনই এক অভিনব দায়িত্ব পালন করতে। এক মাজার শরিফের দানবাক্স (সিলগালা করা) খুলে কড়া নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার সাথে পাবলিকের দানকরা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

এই অধম ম্যজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে খোলা হলো একে একে ছয়টি দানবাক্স। নিজেকে তখন আলীবাবা মনে হচ্ছিল। চিচিং ফাক। গনণায় মিললো সাড়ে তিন লক্ষ টাকার মত। কয়েক মাসে এই টাকা!

মাজার
ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গণনার জন্য টাকা এনে ঢালা হচ্ছে।

এর বাইরেও শুনলাম খাদেমগণ (!) হাতে হাতেও নানান কিছু নিয়ে থাকেন, যার হিসেব এই নাদান ম্যজিস্ট্রেটের নাগালের বাইরে।
আমার উপস্থিতিতেই অনেক ভক্ত আসলেন। এক মহিলা এলেন তার নবজাতক নাতিকে নিয়ে। আমি জানতে চাইলাম আগমনের হেতু।

তিনি বললেন, নাতিটার অসুখ কয়দিন ধরে। আমি বললাম, ডাক্তার দেখান না? উত্তরে উনি বলেন, দেখাই স্যার মাঝে মইদ্যে। তয় মাজারে আইলে অসুখ সাইরা যায় এমনিতেই। স্বচক্ষে দেখলাম প্লাসিবো ইফেক্ট কারে কয়।

এমন অনেকেরই দেখা মিলল। দেখলাম, বুঝলাম, বললাম না কিছু।

টাকার বস্তা সিল গালা করে চলে এলাম।

গাড়ীর লুকিং গ্লাসে ফেলে আসা ‘লালসালু-২০১৭’ এর প্রতিচ্ছবি। মজিদদের এই সমাজে আমি কোন ছার!

হায় প্লাসিবো, হায় লালসালুঘেরা আমার মানুষেরা—

পুনশ্চ: অনেকে টাকা দেবার সময় ছোট চিরকুটে মনোবাসনা, প্রার্থনা লিখে যান। অমন দুটো প্রার্থনা/মনোবাসনার ছবিও দিলাম। দেখে নিবেন।

মাজার-২

চিরকুট


প্লাবন ইমদাদ

সহকারী কমিশনার

ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট