ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্ট সাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহ মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজিকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায়। হামলাকারীদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। কি কারণে হামলা চালানো হয়েছে তাও এখনো পরিষ্কার নয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, পূজার ফুল তোলার জন্য ভোরে মঠ থেকে বের হন শ্যামানন্দ। তার বাড়ি নড়াইলের সদর উপজেলার মশুরিয়া গ্রামে। গত ৩ বছর ধরে শ্যামানন্দ উত্তর কাষ্ঠসাগরা মঠের সেবায়েত ছিলেন।
রাধামদন মঠের সভাপতি সুবোল চন্দ্র ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার ভোরে মঠের গেটের কাছে পূজার জন্য ফুল তুলছিলেন শ্যামানন্দ। এ সময় ডিসকভারি ব্র্যান্ডের ১০০ সিসির একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত মঠের গেটের পাশে যায়। পরে তারা শ্যামানন্দকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় শ্যামানন্দকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রুমন তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কাস্টসাগরা গ্রামের রাধামদন মঠের সাধারণ সম্পাদক মলিন কুমার কুন্ডু জানান, নিহত শ্যামানন্দ দাস ভাল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি পরিবার ত্যাগ করে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়ে মন্দিরে মন্দিরে পূজা-অর্চনার কাজ করে বেড়াতেন। ৪ বছর আগে তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্ট সাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল মঠ মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্ব নেন। তাকে এলাকার মানুষ বাবাজি বলেও ডাকতেন।
এই তথ্য নিশ্চিত করছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান।
যেভাবে যে কৌশলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তার সঙ্গে সাম্প্রতিক বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার শেখ আলতাফ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারীর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, শুক্রবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে।
‘শ্যামানন্দ গোঁসাই ভোর ৫টার দিকে মঠ থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশের গাছ থেকে পূজার ফুল তুলছিলেন। এ সময় তিনজন হামলাকারী মোটরসাইকেলে করে এসে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।’
পুলিশ সুপার জানান, মৃত্যু নিশ্চিত করতে এই হিন্দু সেবায়েতের মাথা ও ঘাড়ে একাধিক কোপ দেওয়া হয়।
এর আগে গত ৭ জুন একই উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মহিষের ভাগাড় মাঠে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী (৬৯) নামের এক হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নলডাঙ্গা দুর্গা মন্দিরের সাবেক পুরোহিত আনন্দ গোপাল করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে নলাডাঙ্গা গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনাতেও তিন যুবক মোটরসাইকেলে এসে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএস আনন্দ হত্যাকাণ্ডেও দায় স্বীকার করে বার্তা দিয়েছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানালেও ওই হত্যার পেছনে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলেছে আসছে পুলিশ।