সুন্দরবনে বনজীবিদের আরাধ্য দেবতা বনবিবি এবং শাহ জঙ্গলী। এই প্রার্থনায় বনবিবি ও শাহ জঙ্গলীর পূজা করা হয়।
মজার বিষয়, এই দুই দেবতা মুসলিম। পুজার সময় তাই ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলে সবাই রব তোলে।
বনজীবিদের বিশ্বাস অনুযায়ী একসময় এক মুসলিম রাজার দুই স্ত্রী ছিলো। রাজা ছোট স্ত্রীকেই বেশী পছন্দ করতেন। দুই স্ত্রীর ঘরেই রাজার কোনো সন্তান ছিলো না। একসময় ছোট স্ত্রী গর্ভবতী হলেন।
এতে বড় স্ত্রীর হিংসা হল। তিনি এক দরবেশের মাধ্যমে রাজার কাছে মিথ্যা অপবাদ দিলেন ছোট স্ত্রীর গর্ভের সন্তান বংশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
দরবেশ রাজাকে বললেন ছোট স্ত্রীকে সুন্দরবনে ছেড়ে আসতে হবে। দরবেশের কথা অনুযায়ি রাজা কাজ করলেন।
সুন্দরবনেই ছোট স্ত্রীর জমজ দুই সন্তান হল, নাম তাদের বনবিবি ও শাহ জঙ্গলী। তারা সেখানেই বড় হতে লাগল।
একসময় রাজা বড় স্ত্রীর ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন। তখনই রাজা গেলেন তার স্ত্রী ও সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তারা ফিরতে রাজি হল না।
সুন্দরবনই তখন তাদের স্বাভাবিক পরিবেশ। ফলে রাজা ব্যর্থ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে আসলেন।
এদিকে তখন সুন্দরবনে রাজত্ব করত এক ভয়ঙ্কর রয়েল বেঙ্গল টাইগার। একদিন শাহ জঙ্গলীর সাথে তার যুদ্ধ হলো। যুদ্ধে হেরে বাঘ শাহ জঙ্গলীর সাথে অর্ধেক করে সুন্দরবনের রাজত্ব ভাগ করে নিল।
জঙ্গলে কোনো মোয়াল মধু সংগ্রহে গেলে গ্রামের কোনো শিশুকে এই বাঘের খাদ্য হিসেবে দিয়ে আসতে হত।
একবার এর ব্যত্যয় হওয়ায় কোনো মধু সংগ্রহ করা যাচ্ছিল না। তখন এক দরিদ্র বিধবা নারীর একমাত্র সন্তানকে তার কাকা কৌশলে বনে নিয়ে বাঘের খাদ্য হিসেবে ছেড়ে দেয়।
ফলে তারা প্রচুর মধু পায়। বাঘ যখন এই বাচ্চাকে খেতে আসে তখন তার ‘মা … মা’ ডাক শুনে বনবিবি বিচলিত হয়ে ভাই শাহ জঙ্গলীকে বলে, “কে জানি আকুল হয়ে ডাকছে।
ভাই, তুমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার কর।” শাহ জঙ্গলী তখনই ছুটে গিয়ে বাঘের সাথে লড়াই করে সেই শিশুকে রক্ষা করে বোনের কাছে নিয়ে আসে।
তারপর থেকে সেই শিশু বনবিবির কাছেই বড় হতে থাকে। এদিকে সেই দরীদ্র বিধবা নারী সন্তান শোকে অন্ধ হয়ে যায়।
একদিন বনবিবি সেই শিশুকে তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে বলে। শিশুটি রাজি হয় না। সে বনবিবির কাছেই থাকতে চায়।
কিন্তু বনবিবি শিশুটিকে বুঝিয়ে বলে গ্রামে ফিরে যেন সে তাদের ভাই-বোনের কথা সবাইকে জানায় এবং তাদের পূজা চালু করতে বলে।
তাহলে বনে মানুষ নানা রকম বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। তখন শিশুটি গ্রামে তার মায়ের কাছে ফিরে আসে এবং বনবিবি ও শাহ জঙ্গলীর পূজা চালু করে।