দিব্যেন্দু দ্বীপ
সদরঘাট থেকে শাহবাগ যাচ্ছিলাম মিরপুরের গাড়িতে। পিছনে একটা সিট পেয়ে বসলাম। ঐ সিটেই বসা ছিলেন বয়স্ক একজন মহিলা। সাথে তার একটি বড় চটের ব্যাগ এবং একটি বোঝাই বস্তা। সে ওভাবে থাকায় পিছনে যাত্রীরা কেউ আর বসতে চাচ্ছে না। অবশেষে আমার মত আর একজন ‘অভাজন’ এসে বসেছে। শেষে আর একজন। তারপরেও দুটো সিট খালিই থাকছে। মাঝে মাঝে কনড্রাক্টর বলছে, “আপনারে না ওঠতে না করছিলাম।” মহিলা কোনো কথা বলছে না। চেষ্টা করছে ব্যাগ-বস্তা সামলানোর। বাস তখন প্রায় শাহবাগ পৌঁছে গেছে। ওনার কাছে ভাড়া চাইলে উনি বিশ টাকা দেয়। এবার তো কন্ড্রাক্টর খেপে আগুন। “আপনি মিরপুর যাবেন তা বিশ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন কেন? মিরপুর ভাড়া ত্রিশ টাকা। আমার সিট নষ্ট করতেছেন, আবার ভাড়াও কম দেন!” মহিলা বলতেছে টাকা নেই। না থাকারই কথা, থাকলে এই অবস্থায় ভাড়া কম দেওয়ার চেষ্টা করার কথা নয়। এবার কন্ড্রাক্টর বলতেছে, “টাকা না থাকলে ব্যাগে কি আছে রাইখে দেব।” কন্ড্রাক্টরের এই কথার মধ্যে শ্লেষ মিশ্রিত দরদ মেশানোও ছিল। প্রথম থেকেই এই কন্ড্রাক্টর ছিল ব্যতিক্রম। মহিলাকে সে নানান কথা বলছিল বটে, তবে তার অসহায়ত্ব ফিলও করছিল। সমস্যা বাদল বিতণ্ডায় যাত্রীদের অংশগ্রহণে। এমনভাবে তারা মহিলার বিপক্ষ নিল যে কন্ড্রাক্টর ব্যাটারই তখন বিব্রতকর অবস্থা। যাত্রীদের কারণে তখন কন্ড্রাক্টর মহিলাকে আরো বাক্যবাণে জর্জরিত করা শুরু করল। এই অবস্থায় একজন যাত্রী এগিয়ে এসে কন্ড্রাক্টরকে বাকী দশ টাকা দিয়ে বলল, “উনি অামার খালা, সবাই এবার চুপ যা।” মনে হচ্ছিল, কথাটা প্রত্যেকটা যাত্রীকে সপাটে একটা করে চড় মারার থেকেও ছিল মারাত্মক। প্রত্যেকটা যাত্রী তৎক্ষণাৎ চুপসে যায়। জনৈক ঐ যাত্রী আজকে আমার হিরো।
# এই বিভাগে সম্পাদক মহোদয় প্রতিদিন চলতি পথে পাওয়া একজন হিরোকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন।