শুধু নিবন্ধন থাকলেই হবে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে আর পরীক্ষা দিতে হবে না

স্কুল নিবন্ধন

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য আর পরীক্ষা দিতে হবে না, নিবন্ধন সনদ থাকলেই চলবে। সরকারের শূন্য পদ পূরণ, নতুন পদ সৃজন ও এসব পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সংক্রান্ত সচিব কমিটি এ সুপারিশ করেছে। গত ১৬ মার্চ কমিটির সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিক্ষক নিবন্ধনের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এ-সংক্রান্ত বিধি সংশোধনের কাজ চলছে। খুব শিগগির অফিস আদেশ জারি করা হবে। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ পদ শূন্য রয়েছে তার পরিসংখ্যান জানাতে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শূন্য পদের পরিসংখ্যান জানিয়ে সারা দেশ থেকে তথ্য আসা শুরু হয়েছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন সনদই চূড়ান্ত। নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য আর কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষ মৌখিক পরীক্ষাও নিতে পারবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ মৌখিক পরীক্ষা নিলেও তার জন্য কোনো নম্বর থাকবে না, অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষা হবে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে শিক্ষা খাতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে তুলকালাম কাণ্ড হয় তা বন্ধ হবে। কারণ এতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির হাতে শিক্ষক নিয়োগের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। নিবন্ধনপ্রত্যাশীদের কোনো মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় না। তবে নিবন্ধিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্টদের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে আর যেন স্কুল কর্তৃপক্ষের অধীনে কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে না হয় সে জন্য নানা সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধিত পদ্ধতিতে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষার সমন্বয়ে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক সমন্বিত ফল প্রকাশ করা হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে দেওয়া সে ফল অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেবে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে শিক্ষক নিয়োগে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্যও মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির নেতৃত্বে প্রকাশ্যেই এ ঘুষ লেনদেন হয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটিতে রয়েছেন সংসদ সদস্য নিজে। নিয়ম অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য চারটির বেশি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকতে পারবেন না। তবে এ নিয়মকে আমলেই নেন না সংসদ সদস্যরা। তাঁরা যেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে রয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষের পরিমাণও বেশি হয়।
শিক্ষকতায় মানসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য উপযুক্ত একটি শিক্ষক মান নির্ধারণ এবং যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিবন্ধন ও পুল তৈরি করা এনটিআরসিএর কাজ।
২০০৫ সালে শিক্ষক নিবন্ধনের প্রথম পরীক্ষা নেওয়া হয়। সবশেষ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বছর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিবন্ধনপ্রাপ্তদের সংখ্যা কম হলেও শুরুর দিকে এ হার অনেক বেশি ছিল। প্রথম বছর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭.২৭ শতাংশ নিবন্ধন পেয়েছিলেন। শুরুতে ছয় জেলায় এ পরীক্ষা হলেও বর্তমানে ২০টি জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছর সব জেলায় এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুরুতে নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। বর্তমানে একবার নিবন্ধিত হলে চাকরির বয়স পর্যন্ত তা বহাল থাকে।