নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞানঃ প্রাণী বিজ্ঞান-১

বিসিএস দৈনন্দিন বিজ্ঞান

এখানে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় আসে এমন ১০০০টি দৈনন্দিন বিজ্ঞানের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হবে। আজকে আলোচিত হয়েছে প্রাণী বিজ্ঞানের ২৫টি প্রশ্ন।

১. কোন প্রাণীকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়?
ক. ঘোড়া                             খ. উট
গ. বলগা হরিণ                      ঘ. খেচর
ব্যাখ্যা: উটের পূর্বপুরুষেরা সম্ভবত উত্তর আমেরিকায় আবির্ভূত হয়। পরে একভাগ বেরিং প্রণালি পার হয়ে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় চলে যায়, যাদের উত্তরসূরী হলো ড্রোমেডারী ও ব্যাক্ট্রীয়ান উট। মরুভূমিতে বহুযুগ বাস করার ফলে আজ উট মরুভূমির জাহাজ হয়ে সহিষ্ণুতার প্রতীক। অন্য একভাগ চলে যায় দক্ষিণ আমেরিকায় যাদের উত্তরসূরী লামা (llama) ও ভিকুন্যা (Vicugna)। আলপাকা সম্ভবত ভিকুন্যার গৃহপালিত বংশধর।

২. বাংলাদেশের সুন্দরবনে কতো প্রজাতির হরিণ দেখা যায়?
ক. ১                                    খ. ৩
গ. ২                                    ঘ. ৪
ব্যাখ্যা: সুন্দরবনে বর্তমানে দুই প্রজাতির হরিণ পাওয়া যায়। চিত্রা হরিণ ও মায়া হরিণ।

৩. হৃৎপিণ্ড কোন ধরনের পেশি দ্বারা গঠিত?
ক. ঐচ্ছিক                          খ. বিশেষ ধরনের ঐচ্ছিক
গ. অনৈচ্ছিক                        ঘ. বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক
ব্যাখ্যা: যে পেশি ইচ্ছেমতো সংকোচিত/প্রসারিত হতে পারে না তাকে অনৈচ্ছিক পেশি বলে। হৃৎপি- খুব সংবেদশীল অঙ্গ। এটি অনৈচ্ছিক পেশিতে তৈরি, যাতে সেটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে।

৪. যকৃতের রোগ কোনটি?
ক. জণ্ডিস                          খ. টাইফয়েড
গ. হাম                              ঘ. কলেরা
ব্যাখ্যা: যকৃতের প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলে। একে জণ্ডিসও বলা হয়। গায়ের চামড়া এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জণ্ডিস বলে। মূলত রক্তে বিলিরুবিন এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। বিলিরুবিন হচ্ছে লোহিত কণিকা ভাঙা-গড়ার একটি বাই প্রোডাক্ট। নির্দিষ্ট সময় পর, সাধারণত চার মাস পর পর নতুন লোহিত কণিকা তৈরি হয় এবং পুরনোগুলো মরে যায়। লোহিত কণিকা মৃত্যুবরণ করে যকৃতে গিয়ে। পুরনো লোহিত কণিকা অপসারণ করতে গিয়ে যকৃত বিলিরুবিন তৈরি করে। লোহিত কণিকার ভাঙা-গড়ার ব্যাপারটি অনিয়মিত হয়ে গেলে, যকৃত তার কর্মক্ষমতা সাময়িক বা স্থায়িভাবে হারিয়ে ফেললে অথবা ডাইজেস্টিভ ট্রাকের মাধ্যমে বিলিরুবিন ঠিকমত অপসারিত না হলে জণ্ডিস দেখা দেয়। সঠিক উত্তর:
যকৃতের কাজ: বিষক্রিয়া ধ্বংস করা, প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং হজমের জন্য কিছু জৈব উপাদান (হরমোন) প্রস্তুত করা যকৃতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ। যকৃত গ্লাইকোজেন জমা করে। লোহিত রক্ত কণিকা যকৃতে গিয়ে ধ্বংস হয়। যকৃত বাইল (পিত্তরস) প্রস্তুত করে যা হজমের জন্য অন্যতম সহায়ক উপাদান। অ্যামাইনো এসিড প্রস্তুত করে। লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিনের হিম অংশ যকৃত হতে আসে। চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিবহনের জন্য কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রস্তুত করে।

৫. মানবদেহে সাধারণত ক্রোমোজোম থাকে–
ক. ২৫ জোড়া                      খ. ২৪ জোড়া
গ. ২৩ জোড়া                      ঘ. ২০ জোড়া
ব্যাখ্যা: নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত যে সব তন্তুর মাধ্যমে জীবের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হয় তাকে ক্রোমোজোম বলে। প্রকৃতপক্ষে উঘঅ এবং নিউক্লিওপ্রোটিন সংরক্ষণের ধারক হচ্ছে ক্রোমোজোম। অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড নিয়ে একটি ক্রোমোজোম গঠিত হয়। ক্রোমোজোম দুই প্রকারঃ অটোসোম এবং সেক্স-ক্রোমোজোম। ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ১ জোড়া থাকে সেক্স ক্রোমোজোম। সঠিক উত্তর:

৬. Anatomy শব্দের অর্থ–
ক. সাদৃশ্য                                খ. স্নায়ুতন্ত্র
গ. শারীরবিদ্যা                          ঘ. অঙ্গ সঞ্চালন
ব্যাখ্যা: Anatomy শব্দের অর্থ ব্যবচ্ছেদবিদ্যা বা শরীরস্থানবিদ্যা। Physiology শব্দের অর্থ শরীরবিদ্যা। সঠিক উত্তর অপশনে নেই। অহধঃড়সু জীব বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সঠিক উত্তর:

৭. কোন জারক রস পাকস্থলিতে দুগ্ধ জমাট বাঁধায়?
ক. পেপসিন                              খ. এমাইলেজ
গ. রেনিন                                   ঘ. ট্রিপসিন
ব্যাখ্যা: অগ্ন্যাশয় রসের ট্রিপসিন এবং জারক রসের পেপসিন প্রোটিন পরিপাকে সহায়তা করে। অ্যামাইলেজ কার্বহাইড্রেট পরিপাকে সহায়তা করে। জারক রসের রেনিন পাকস্থলীতে দুগ্ধজাতীয় খাদ্য জমাট বাধায়। সঠিক উত্তর:

৮. মানুষের স্পাইনাল কর্ডের দৈর্ঘ্য কত?
ক. ১৫ ইঞ্চি (প্রায়)
খ. ১৭ ইঞ্চি (প্রায়)
গ. ১৮ ইঞ্চি (প্রায়)
ঘ. ২০ ইঞ্চি (প্রায়)
ব্যাখ্যা: মানুষের সুষম্না কাণ্ড (spinal cord) এর দৈর্ঘ্য ছেলেদের ৪৫ সে.মি. বা ১৭.৭২ ইঞ্চি এবং মেয়েদের ৪৩ সে. মি. বা ১৬.৯৩ ইঞ্চি। গড় হিসেবে ১৭ ইঞ্চি ধরা যায়। সঠিক উত্তর:

৯. মানুষের হৃৎপিণ্ডে কতটি প্রকোষ্ঠ থাকে?
ক. ২টি                               খ. ৪টি
গ. ৬টি                               ঘ. ৮টি
ব্যাখ্যা: অলিন্দ এবং নিলয় নামে মানুষের হৃৎপিণ্ডে মোট ৪ টি প্রকোষ্ঠ থাকে। উপরের প্রকোষ্ঠ দু’টিকে যথাক্রমে ডান এবং বাম অলিন্দ এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দু’টিকে ডান এবং বাম নিলয় বলে। প্রাণীবিশেষ হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ সংখ্যায় তারতম্য রয়েছে। উল্লেখ্য, ব্যাঙের হৃৎপিণ্ডে তিনটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে, এবং আরশোলার হৃৎপিণ্ড তের প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। সঠিক উত্তর:

১০. প্রেসার কুকারে রান্না তাড়াতাড়ি হয়, কারণ–
ক. রান্নার জন্য শুধু তাপ নয় চাপও কাজে লাগে
খ. বদ্ধ পাত্রে তাপ সংরক্ষিত হয়
গ. উচ্চ চাপে তরলের স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পায়
ঘ. সঞ্চিত বাষ্পের তাপ রান্নার সহায়ক
ব্যাখ্যা: প্রেসার কুকারে ঢাকনা আটকে দিয়ে উচ্চ চাপে রান্না করা হয়, ফলে তরলের স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পায়। স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ তরল (পানি) বাষ্পে পরিণত হওয়ার পূর্বে বেশি তাপ ধারণ করে যা পানির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক স্ফুটনাংক ১০০° সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হয়। এ অবস্থায় যে বস্তুটি রান্না করা হয় তা বেশি তাপ পায় বলে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। সঠিক উত্তর:

১১. বিলিরুবিন তৈরি হয়–
ক. পিত্তথলিতে                         খ. কিডনিতে
গ. প্লীহায়                                ঘ. যকৃতে
ব্যাখ্যা: প্রতি ১২০ দিন পরে লোহিত রক্ত কণিকা প্লীহায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। লোহিত রক্তকণিকার হিম অংশ থেকে তৈরি হয় বিলিরুবিন। বিলিরুবিন একটি বর্জ্য পদার্থ যা পিত্তরসের মাধ্যমে শরীর হতে বের হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে সে অবস্থাকে জণ্ডিস বলে। সঠিক উত্তর:

১২. মানুষের গায়ের রঙ কোন উপাদানের উপর নির্ভর করে?
ক. ক্যারোটিন                                খ. হিমোগ্লোবিন
গ. মেলানিন                                  ঘ. থায়ামিন
ব্যাখ্যা: মানুষের গায়ের রঙ নির্ভর করে চামড়ায় মেলানিনের উপস্থিতির উপর। চামড়ায় মেলানোসাইট নামক এক ধরনের কোষ মেলানিন তৈরি করে। চামড়ায় মেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকলে গায়ের রঙ কালো হয়, আর মেলানিন কম থাকলে গায়ের রঙ ফর্সা হয়। ভিটামিন-এ এর একটি রূপ হল বিটা [ß] ক্যারোটিন। গাজরে প্রচুর পরিমাণে [ß] ক্যারোটিন পাওয়া যায়। হিমোগ্লোবিন থাকে রক্তে। হিমোগ্লোবিনের কারণে রক্তের রঙ লাল হয়। ভিটামিন বি১ এর অপর নাম থায়ামিন। সঠিক উত্তর:

১৩. মানুষের ক্রোমোজোমের সংখ্যা কত?
ক. ২৫ জোড়া                           খ. ২৬ জোড়া
গ. ২৩ জোড়া                            ঘ. ২৪ জোড়া
ব্যাখ্যা: নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত যে তন্তুগুলোর মাধ্যমে জীবের বৈশিষ্ট্য বংশ পরম্পরায় সংরক্ষিত হয় তাকে ক্রোমোজোম বলে। প্রত্যেক প্রজাতিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। এর মধ্যে ২২ জোড়া অটোসোম এবং এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম। সঠিক উত্তর:

১৪. রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি?
ক. অক্সিজেন পরিবহন করা               খ. রোগ প্রতিরোধ করা
গ. রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা       ঘ. উল্লিখিত সবকটিই
ব্যাখ্যা: হিমোগ্লোবিনের কাজ অক্সিজেন পরিবহন করা। হিমোগ্লোবিনের কারণে রক্তের রং লাল হয়। শ্বেতকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে রোগ জীবাণু ধ্বংস করে। অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। সঠিক উত্তর:

১৫. অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত চিনির বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন কোনটি?
ক. পেনিসিলিন                            খ. ইনসুলিন
গ. ফলিক এসিড                         ঘ. অ্যামাইনো এসিড

ব্যাখ্যা: অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্র গ্রন্থি। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশের নাম আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস। এ অংশ হতে নিঃসৃত চিনির বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন হচ্ছে ইনসুলিন। সঠিক উত্তর:

১৬. জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে–
ক. নিউক্লিয়াস                          খ. নিউক্লিওলাস
গ. ক্রোমোজোম                        ঘ. নিউক্লিওপ্লাজম
ব্যাখ্যা: জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে ক্রোমোজোম। মূলত ক্রোমোজোমে অবস্থিত DNA জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে। অপশন এ DNA না থাকায় উত্তর হবে ক্রোমোজোম, কারণ, DNA ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। সঠিক উত্তর:

১৭. উড়োজাহাজের গতি নির্ণয় করা হয়–
ক. ক্রনোমিটার                       খ. ওডোমিটার
গ. ট্যাকোমিটার                       ঘ. ক্রেসকোগ্রাফ
ব্যাখ্যা: ক্রোনোমিটার দিয়ে সূক্ষ্ম সময়ের পরিমাপ করা হয়। ওডোমিটার দিয়ে গাড়ির গতি নির্ণয় করা হয়। ট্যাকোমিটার উড়োজাহাজের গতি নির্ণয় করে। ক্রেসকোগ্রাফ উদ্ভিদের বৃদ্ধি নির্ণয় করে। সঠিক উত্তর:

১৮. মানব দেহের রক্তচাপ নির্ণায়ক যন্ত্র–
ক. স্ফিগমোম্যানোমিটার
খ. স্টেথস্কোপ
গ. কার্ডিওগ্রাফ
ঘ. ইকো-কার্ডিওগ্রাফ
ব্যাখ্যা: মানব দেহের রক্তচাপ নির্ণায়ক যন্ত্র স্ফিগমোম্যানোমিটার। স্টেথোস্কোপ হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের শব্দ নির্ণায়ক যন্ত্র, কার্ডিওগ্রাফ হৃদপিণ্ডের গতি নির্ণায়ক যন্ত্র এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফ হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা নির্ণায়ক যন্ত্র। সঠিক উত্তর:

১৯. কোন জলজ জীবটি বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়?
ক. শুশুক                           খ. তিমি
গ. ইলিশ                           ঘ. হাঙর
ব্যাখ্যা: শুশুক বা ডলফিন এবং তিমি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের ফুলকা নেই। শুশুক মাথার উপর অবস্থিত আড়াআড়ি ছিদ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে। তিমি একবার নিঃশ্বাস নিয়ে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে থাকতে পারে। সঠিক উত্তর: ক/খ

২০. মানুষের ক্রোমোজোমের সংখ্যা কত?
ক. ২০ জোড়া                           খ. ২২ জোড়া
গ. ২৩ জোড়া                           ঘ. ২১ জোড়া
ব্যাখ্যা: ক্রোমোজোম হচ্ছে বংশগতির ধারক ও বাহক। মানুষের কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ২৩ জোড়া। এর মধ্যে ২২ জোড়া থাকে দেহকোষে, যাদের অটোজোম বলে। একজোড়া থাকে যৌন কোষে, যাদের সেক্স ক্রোমোজোম বলে। সঠিক উত্তর:
ক্রোমোজোম সংখ্যা বিভিন্ন জীবের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন:

কবুতর ৮০             কুনোব্যাঙ ২২
ছাগল ৬০               মুরগি ৭৮
ধান গাছ ২৪            কুকুর ৭৮
বিড়াল ৩৮              মাছি ১২

২১. কোন জারক রস পাকস্থলীতে দুগ্ধ জমাট বাধায়?
ক. পেপসিন                            খ. অ্যামাইলেজ
গ. রেনিন                                ঘ. ট্রিপসিন
ব্যাখ্যা: অগ্ন্যাশয় রসের ট্রিপসিন এবং জারক রসের পেপসিন প্রোটিন পরিপাকে সহায়তা করে। অ্যামাইলেজ কার্বহাইড্রেট পরিপাকে সহায়তা করে। জারক রসের রেনিন পাকস্থলিতে দুগ্ধজাতীয় খাদ্য জমাট বাধায়। সঠিক উত্তর: গ

২২. প্রাণীর মলমূত্র থেকে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়–
ক. ইথেন                           খ. এমোনিয়া
গ. মিথেন                           ঘ. বিউটেন
ব্যাখ্যা: প্রাণীর মলমূত্রে ইউরিয়া থাকে। ইউরিয়া ফারমেন্টেড হয়ে মিথেন উৎপন্ন হয়। প্রাণীর মলমূত্র থেকে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় যে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয় সেটি আসলে মিথেন গ্যাস। সঠিক উত্তর:

২৩. কোনটি স্তন্যপায়ী প্রাণী নয়?
ক. হাতী                           খ. কুমির
গ. তিমি                           ঘ. বাদুর
ব্যাখ্যা: যেসব প্রাণী বাচ্চা প্রসব করে এবং বাচ্চা মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয় তাদের স্তন্যপায়ী প্রাণী বলে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর গায়ে পশম থাকে এবং এরা সাধারণত স্থলচর হয়। বাদুর, নীল তিমি, ডলফিন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কুমির ডিম দেয়, এজন্য কুমির স্তন্যপায়ী প্রাণী নয়। সঠিক উত্তর:

২৪. মুক্তা হলো ঝিনুকের–
ক. খোলসের টুকরা                   খ. চোখের মণি
গ. প্রদাহের ফল                       ঘ. জমাট হরমোন
ব্যাখ্যা: মুক্তা হলো ঝিনুকের প্রদাহের ফল। সঠিক উত্তর:

২৫. বাংলাদেশের একটি জীবন্ত জীবাশ্মের নাম–
ক. রাজ কাঁকড়া                            খ. গন্ডার
গ. পিপীলিকাভুক ম্যানিস                   ঘ. স্লো লোরিস
ব্যাখ্যা: বাংলাদেশের একটি জীবন্ত জীবাশ্মের নাম রাজ কাঁকড়া। সঠিক উত্তর:
জীবন্ত জীবাশ্ম: কতগুলো জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে, অথচ তাদের সমগোত্রীয় এবং সমসাময়িক জীবদের বিলুপ্তি ঘটেছে। এই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাষ্ম বলে। লিমুলাস বা রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, স্ফোনোডন নামক সরীসৃপ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি এবং ইকুইজিটাম, নিটাম এবং গিঙ্কো বাইলোবা নামের উদ্ভিদগুলো জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।


২৬. পানির জীব হয়েও বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়–
উত্তর: শুশুক
ব্যাখ্যা: ফুসফুসের সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করা যায় না। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করতে হলে ফুলকা থাকা প্রয়োজন। ম্যাম্যালিয়া শ্রেণিভুক্ত প্রাণীদের ফুলকা থাকে না। তাই শুশুক এবং নীল তিমি পানিতে বাস করলেও তারা মাঝে মাঝে উপরে উঠে এসে বাতাসে নিশ্বাস নেয়।

২৭. নাড়ির স্পন্দন প্রবাহিত হয়–
উত্তর: ধমনীর ভিতর দিয়ে
ব্যাখ্যা: হৃৎপিণ্ড একটি পাম্প যন্ত্রের মতো। এটি স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মতো দেহের ভিতরে সর্বক্ষণ নির্দিষ্ট ছন্দে স্পন্দিত হয়। হৃৎপিণ্ডের এই স্পন্দনকে হৃৎস্পন্দন বা হার্ট-বিট বলে। হৃৎপিণ্ড পর্যায়ক্রমে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। হৃৎপিণ্ড যখন সংকুচিত হয়, তখন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত বের হয়ে ধমনীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে যায়। হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের কারণে রক্তের যে প্রবাহ তৈরি হয় তা ধমনী গাত্রে স্পন্দনের মত অনুভূত হয়। ডাক্তাররা রোগীর যে নাড়ী পরীক্ষা করেন তা মূলত এই ধমনীর স্পন্দন। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ধমনীর বা নাড়ীর স্বাভাবিক স্পন্দন হার ৬০-১০০/মিনিট। গড়ে ৭২/মিনিট। শিশুদের ক্ষেত্রে এ হার প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১৪০ বার।

২৮. আলট্রাসনোগ্রাফি কি?
উত্তর: ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে শব্দের দ্বারা ইমেজিং
ব্যাখ্যা: আলট্রাসনোগ্রাফি হল এমন একটি কৌশল যার সাহায্যে ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে শব্দ ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরে অঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্তমানে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় কারণ ইহা ব্যথাহীন এবং x-ray এর মত রেডিয়েশন জনিত ঝামেলা নেই। পিত্তথলির পাথর নির্ণয়ে বর্তমানে এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।

২৯. একজন সাধারণ মানুষের দেহে মোট কত টুকরা হাড় থাকে?
উত্তর: ২০৬
ব্যাখ্যা: একজন সাধারণ মানুষের দেহে ২০৬ টি হাড় থাকে। করোটি এবং মুখমণ্ডল মিলিয়ে ২৯ টি, মেরুদণ্ডে ৩৩ টি, দুই হাতে এবং পায়ে ১৪৪ টি করে হাড় থাকে। মানুষের শরীরে মোট চার ধরণের হাড় থাকে। লম্বা হাড়, খাটো হাড়, সমান্তরাল হাড়, অনিয়মিত হাড়, সিসময়েড হাড় (সংযোগস্থলে থাকে)।

৩০. মাছ অক্সিজেন নেয়–
উত্তর: পানির মধ্যে দ্রবীভূত বাতাস হতে
ব্যাখ্যা: পানিতে যে অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকে মাছ তা ফুলকার সাহায্যে গ্রহণ করে। ফুসফুস পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। ফুসফুস রয়েছে এমন প্রাণীদের অক্সিজেন গ্রহণের জন্য বাতাসের সাহায্য নিতে হয়। এজন্য শুশুক পানির প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য মাঝে মাঝে মাথা পানির উপরে তোলে।

৩১. আমাদের দেহকোষ রক্ত হতে গ্রহণ করে–
উত্তর: অক্সিজেন ও গ্লুকোজ
ব্যাখ্যা: আমাদের দেহকোষ রক্ত হতে অক্সিজেন এবং খাদ্যসার গ্রহণ করে। রক্ত দেহকোষ হতে বর্জ্য পদার্থ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে।
রক্তের কাজ:
১. রক্ত ফুসফুস হতে অক্সিজেন দেহকোষে পরিবহন করে, এবং দেহকোষ হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে নিয়ে যায়।
২. পরিপাকতন্ত্র থেকে পুষ্টি উপাদান, যেমনঃ গ্লুকোজ এবং এমিনো এসিড দেহকোষে নিয়ে যায়।
৩. রক্ত দেহবর্জ্য, যেমনঃ মাংসপেশি হতে ল্যাকটিক এসিড এবং লিভার হতে ইউরিয়া নিষ্কাশনের জন্য কিডনিতে নিয়ে যায়।
৪. রক্ত দেহতাপ নিয়ন্ত্রন করে ৩৭ সে. এ বজায় রাখে।
৫. রক্তের শেত রক্ত কণিকা জীবাণু ধ্বঙষ করে দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বজায় রাখে।

৩২. তিমি এক ধরনের–
উত্তর: স্তন্যপায়ী প্রাণী
ব্যাখ্যা: জলজ প্রাণীর মধ্যে তিমি ও শুশুক স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ী প্রাণী (গধসসধষ) বলতে সাধারণত মাতৃপ্রাণীর স্তন্যদুগ্ধ পান করে জীবনধারণকারী প্রাণীসমূহকে বোঝানো হয়। এরা কর্ডাটা পর্বের অন্তর্গত ম্যামালিয়া শ্রেণীর অধীনে উন্নত গঠনের মেরুদণ্ডী প্রাণী। ১৭৫৮ সালে ক্যারোলাস লিনিয়াস স্তন্যপায়ী বলতে ম্যামাল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। শব্দটি গ্রিক শব্দ ম্যামি থেকে উদ্ভূত যার অর্থ স্তনগ্রন্থি। সকল স্ত্রী স্তন্যপায়ীর স্তনগ্রন্থি থাকে এবং এরা এর মাধ্যমে সন্তানদের দুধ সরবরাহ করে। এদের দেহ কমবেশি লোম বা চুলে আবৃত থাকে। মেরুদণ্ডী ও উষ্ণরক্তের প্রাণীদের মধ্যে স্তন্যপায়ীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।

৩৩. রক্ত জমাট বাঁধায় কোন কণিকা অংশ নেয়?
উত্তর: অণুচক্রিকা
ব্যাখ্যা: অনুচক্রিকা দেখতে ডিম্বাকার ও বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট অনেকটা ডিসকের মতো দেখতে। দেহের বৃহদাকার কোষ ভেঙ্গে অনুচক্রিকা সৃষ্টি হয়। দেহের স্থানে ক্ষত হলে সেখানে ৩ মিনিটের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

৩৪. কোনটি ত্বকের সাহায্যে শ্বাসকার্য সম্পন্ন করে?
উত্তর: কেঁচো
ব্যাখ্যা: কেঁচো ত্বকের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালায়, তবে চিংড়ী মাছও ভেজা অবস্থায় ত্বকের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারে।

৩৫. মানবদেহে মোট কশেরুকার সংখ্যা–
উত্তর: ৩৩টি
ব্যাখ্যা: প্রতিটি কশেরুকা,অস্থি এবং হায়ালিন তরুণাস্থির সমন্বয়ে গঠিত জটিল কাঠামো যা প্রজাতিভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। একে
অনিয়ত অস্থি এর তালিকায় রাখা হয়। মানবদেহে সর্বমোট ৩৩ টি কশেরুকা আছে।
কশেরুকার বৃহত্তর অংশটিকে দেহ বলে এবং এর কেন্দ্রের অংশকে সেন্ট্রাম বলে। দেহের উপর-নিচ পৃষ্ঠে আন্তঃকশেরুকা চাকতি লেগে
থাকে। কশেরুকার পিছনের অংশ আর্চ গঠন করে, যেখানে দুটি পেডিকল, দুটি ল্যামিনা এবং কিছু প্রসেস আছে। পেডিকলের আকৃতির
কারণে কশেরুকায় খাঁজের সৃষ্টি হয় যা আন্তঃকশেরুকা ফুটো গঠন করে, যার মধ্য দিয়ে সুষুম্না স্নায়ু প্রবেশ করে এবং বের হয়।
কশেরুকার যে বড় ছিদ্র আছে, তাকে কশেরুকায় ছিদ্র বলে। সকল কশেরুকার ছিদ্র সম্মিলিতভাবে ভার্টিব্রাল ক্যানেল নির্মাণ করে। এর ভেতর দিয়ে সুষুম্না কান্ড অতিক্রম করে। একাধিক কশেরুকা একত্রিত হয়ে মেরুদন্ড গঠন করে এবং একে স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করে ।

৩৬. দেহ গঠনে কোন উপাদান সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?
উত্তর: আমিষ
ব্যাখ্যা: খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন ছাড়া কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব নয়। তাই
প্রোটিনকে সকল প্রাণের প্রধান উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। সব প্রোটিনই কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত।
প্রোটিনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাঙলে প্রথমে এমাইনো এসিড পরে কার্বন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ অনেক
এমাইনো এসিড পাশাপাশি যুক্ত হয়ে একটি প্রোটিন অণু তৈরী করে। উৎস অনুযায়ী প্রোটিনকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
প্রাণিজ প্রোটিন: যে প্রোটিনগুলো প্রাণিজগৎ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাণিজ প্রোটিন বলে। যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। এই প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বলে।
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন: উদ্ভিদ জগৎ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বলে। যেমন: ডাল, বাদাম, সয়াবিন, শিমের বিচি ইত্যাদি। উদ্ভিজ্জ
প্রোটিনকে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন বলে।
১ গ্রাম প্রোটিন থেকে চার কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ২০-২৫ ভাগ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে
গ্রহণ করা উচিত। প্রতিদিন খাবারে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের পাশাপাশি কিছু প্রাণিজ প্রোটিনও গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের দেহের অস্থি, পেশি, বিভিন্ন দেহযন্ত্র, রক্ত কণিকা থেকে শুরু করে দাঁত, চুল, নখ পর্যন্ত প্রোটিন দিয়ে গঠিত। প্রোটিন শিশুদের
দৈহিক বৃদ্ধি সাধন ও দেহ গঠন করে। আমাদের দেহের কোষগুলো প্রতিনিয়তই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ক্ষয়প্রাপ্ত স্থানে নতুন কোষগুলো গঠন
করে ক্ষয়পূরণ করতে ও কোনো ক্ষতস্থান সারাতে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে। যখন দেহে ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের অভাব দেখা যায় তখন প্রোটিন তাপশক্তি উৎপাদনের কাজ করে। রোগ সৃষ্টিকারী রোগজীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের দেহে তাদের প্রতিরোধী পদার্থ বা অ্যান্টিবডি তৈরী করা প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মানসিক বিকাশ বা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য।
দেহে প্রোটিনের অভাব হলে বর্ধনরত বয়সের শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে
কোয়াশিয়রকর রোগ হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মেধা ও বুদ্ধি কমে যায়। তাই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৩৭. মাছ অক্সিজেন নেয়–
উত্তর: পানির মধ্যে দ্রবীভূত বাতাস হতে
ব্যাখ্যা: পানিতে দ্রবিভূত অবস্থায় অক্সিজেন থাকে। মাছ ফুলকার সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে।

৩৮. জু-প্ল্যাংটন কী?
উত্তর: আণুবীক্ষণিক প্রাণী
ব্যাখ্যা: আণুবীক্ষণিক প্রাণীকে বলে জু-প্লাংটন এবং আনুবীক্ষণিক উদ্ভিদকে বলে ফাইটোপ্লাংটন।

৩৯. রক্ত কণিকা কত প্রকার?
উত্তর: তিন প্রকার
ব্যাখ্যা: রক্তের প্লাজমার মধ্যে নির্দিষ্ট আকার ও গঠন বিশিষ্ট উপাদান বা রক্ত কোষসমূহকে রক্ত কণিকা বলে। রক্তে প্রায় তিন ধরণের কণিকা পাওয়া যায়। যথা:
১। লোহিত রক্তকণিকা (Erythorcytes);
২। শ্বেত রক্তকণিকা (Leucocytes);
৩। অণুচক্রিকা (Thrombocytes)|

৪০. কোন প্রাণী ফাইলেরিয়াসিস রোগ সৃষ্টি করে?
উত্তর: মশা
ব্যাখ্যা: মশার কামড়ে যেসব রোগ সৃষ্টি হয়:

১। ডেঙ্গি (এডিস মশার কামড়ে এ রোগ হয়);

২। ম্যালেরিয়া (এনোফিলিস মশার কামড়ে এ রোগ হয়);

৩। ফাইলেরিয়াসিস ();

৪। এনসেফালাইটিস ();

৫। চিকুনগুনিয়া ()।

গোদ রোগ বা ফাইলেরিয়াসিস (Filariasis) এক প্রকার পরজীবী ঘটিত রোগ। এটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের সংক্রামক রোগ যা সূতার মতো একজাতের (ফাইলেরিওয়ডিয়া (Filarioidea) পরিবারভুক্ত নিমাটোড) গোলকৃমি দ্বারা সংঘটিত হয়।

৪১. নাড়ীর স্পন্দন প্রবাহিত হয়–
উত্তর: ধমনীর ভিতর দিয়ে
ব্যাখ্যা: ধমনী হচ্ছে মানব দেহের এমনসব রক্তবাহী নালী যেগুলো হৃৎপিণ্ড থেকে পরিশোধিত রক্ত বহন করে দেহের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে। ধমনী সবসময় পরিশোধিত তথা অক্সিজেনসমৃদ্ধ (অক্সিজিনেটেড) রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে তবে ব্যতিক্রম হলো ফুসফুসীয় ধমনী এবং আমবিলিক্যাল ধমনী।

৪২. লসিকার বৈশিষ্ট্য কোনগুলো?
উত্তর:
ক. ক্ষারীয়
খ. লোহিত রক্তকণিকা অনুপস্থিত
গ. শ্বেত রক্তকণিকা অনুপস্থিত
ব্যাখ্যা: lymphnode এর বাংলা লসিকা গ্রন্থি। লসিকা গ্রন্থি আমাদের লসিকা তন্ত্রের একটি অঙ্গ যা দেখতে গোলাকার মাংসপিন্ডের মতো।
আমাদের দেহের লসিকাতন্ত্রের নানাবিধ কর্মকাণ্ড এই লসিকা গ্রন্থিগুলো সম্পন্ন করে।
দেহে বিভিন্ন স্থানে লসিকা গ্রন্থি আছে। এগুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নানা কারণে লসিকা গ্রন্থি তার স্বাভাবিক আকারের থেকে আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে, যেমন:
১ ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমণে
২ ব্লাড ক্যান্সার হলে
৩ লসিকাতন্ত্রের ক্যান্সার হলে

৪৩. নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয় মানবদেহের–
উত্তর: ফুসফুস
ব্যাখ্যা: নিউমোনিয়া (Pneumonia) ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগের নাম। ইহা হল ফুসফুসের প্যারেনকাইমার প্রদাহ বিশেষ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। নিউমোনিয়া থেকে ফ্লু হবারও সম্ভাবনা থাকে। নিউমোনিয়া সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের, যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা কম তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে তরুণ, অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান লোকদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে।

৪৪. মানবদেহে শক্তি উৎপাদনের প্রধান উৎস–
উত্তর: শ্বসন
ব্যাখ্যা: শারীরবৃত্তীয় শ্বসন হল বাতাস হতে জীবের কলাতন্ত্রে অক্সিজেনের সরবরাহের এবং বিপরীত প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন প্রক্রিয়া। শারীরবৃত্তীয় শ্বসন কোষীয় শ্বসন হতে আলাদা যা জীবের কোষে সংঘটিত হয় এবং এক্ষেত্রে অক্সিজেনের সাথে গ্লুকোজের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোষ তার প্রয়োজনীয় শক্তি লাভ করে। শারীরবৃত্তীয় শ্বসন এবং কোষীয় শ্বসন উভয়েই জীবের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য।
সরল এককোষী জীবের ক্ষেত্রে গ্যাস আদান-প্রদানের জন্য সাধারণ ব্যাপন প্রক্রিয়া যথেষ্ট কেননা প্রতিটি কোষ বাইরের সরাসরি বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে থাকে, কিন্তু জটিল বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে পরিবেশ এবং একদম ভেতরের কোষগুলোর মাঝে দূরত্ব অনেক বেশি, কাজেই আলাদা শ্বসনতন্ত্রের প্রয়োজন হয়। শ্বসনের প্রকারভেদ–

(ক) সবাত শ্বসন (খ) অবাত শ্বসন

♦ সবাত শ্বসন: যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় এবং শ্বসনিক বস্তু সম্পুর্ণভাবে জারিত হয়ে কারবন-ডাই-অক্সাইড, পানি ও বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে সবাত শ্বসন বলে।
♦ অবাত শ্বসন: যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে সংঘটিত হয়, তাকে অবাত শ্বসন বলে।

৪৫. কোন কোষে নিউক্লিয়াস থাকে না?
উত্তর: লোহিত রক্তকণিকা
ব্যাখ্যা: প্রতিটি লোহিত রক্তকণিকাতে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন হিমোগ্লোবিন অণু থাকে। সব মিলিয়ে মানবদেহের সমস্ত হিমোগ্লোবিনে অবস্থিত লোহার পরিমাণ প্রায় ২.৫ গ্রাম। এই হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমেই দেহের ৯৮% অক্সিজেন পরিবাহিত হয়। বাকী ২% বহন করে রক্তরস। অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সি-হিমোগ্লোবিন গঠন করে।
মানবদেহে পরিণত লোহিত রক্তকণিকাগুলি স্থিতিস্থাপক দ্বি-অবতল ডিস্ক আকৃতির হয় এবং এগুলি কোন নিউক্লিয়াস ও অন্যান্য বেশিরভাগ কোষ-অঙ্গাণু অনুপস্থিত থাকে। মানবদেহে প্রতি সেকেন্ডে ২.৪ মিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়। কণিকাগুলি অস্থিমজ্জায় উৎপত্তি লাভ করে এবং সমগ্র দেহে ১০০-১২০ দিন সংবহনের পর এগুলি পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং ম্যাক্রোফাজ নামের শ্বেত রক্তকণিকাগুলি এগুলিকে ক্ষুদ্রতর উপাদানে ভেঙে ফেলে ও পুনরায় সৃষ্টির জন্য প্রন্তুত করে।

৪৬. জীবদেহে কয় প্রকার কোষ বিভাজন ঘটে?
উত্তর: তিন প্রকার
ব্যাখ্যা: জীবদেহে তিন প্রকার কোষ বিভাজন সংগঠিত হয়- অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস, মিয়োসিস। অ্যামাইটোসিস নিম্নশ্রেণীর প্রাণীতে, সাধারণত এক কোষী প্রাণীতে দেখা যায়। মাইটোসিস দেহকোষে এবং মিয়োসিস সংগঠিত হয় জনন কোষে।

৪৭. কোনো জীব থেকে অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট জীবকে কী বলে?
উত্তর: ক্লোন
ব্যাখ্যা: ক্লোন হল কোন জীব বা কোষ বা বৃহৎ জৈব অণুর হুবুহু নকল। কোন জীবের একটি দেহকোষ হতে হুবুহু ঔ জীবটিকে পুনরায় তৈরি করার পদ্ধতি ক্লোনিং নামে বিখ্যাত (আণবিক জীববিজ্ঞানীরা দৈনন্দিন আরেক প্রকার ক্লোনিং করে থাকেন যা হল ডিএনএ ক্লোনিং)। ১৯৯৬ সালে রোজলিন ইনস্টিটিউট, স্কটল্যান্ডের গবেষক, ড: আয়ান উইলমুট, তার ২৭৩ তম চেষ্টায় একটি ভেড়ার একটি দেহকোষের (স্তনবৃন্ত বা বাঁট থেকে সংগৃহীত) কেন্দ্রকে অন্যধরনের ভেড়ার কেন্দ্রবিযুক্ত ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপিত করেন ও তা হতে প্রথম ধরনের সম্পূর্ণ ভেড়া ডলিকে তৈরি করে জীব ক্লোনিং এর সফল সুচনা করেন। এর মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিরাট বিপ্লবের সূচনা হবে বলে অনেকে আশা করছে। যদিও মানব ক্লোনিং অধিকাংশ দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

৪৮. কোন চিংড়ী লোনা পানিতে বাস করে?
উত্তর: বাগদা
ব্যাখ্যা: গলদা চিংড়ী সাধু পানিতে, এবং বাগদা চিংড়ী লোনা পানিতে চাষ করা হয়।

৪৯. এনজিওপ্লাস্টি হচ্ছে–
উত্তর: হৃৎপিণ্ডের বন্ধ শিরা বেলুনের সাহায্যে ফুলানো
ব্যাখ্যা: এনজিওগ্রাম হৃদরোগ নির্ণয়ের সফল প্রক্রিয়া। এ পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিত্সক ধমনিগুলোর সঠিক অবস্থা জানতে পারেন— যা সঠিক চিকিত্সাপদ্ধতি নির্ণয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে ঊরুর ধমণী (ফেমোরাল আর্টারি) অথবা হাতের বাহুর ধমণীতে (রেডিয়াল আর্টারি) ছোট ছিদ্র করে একটি সরু টিউব বা ক্যাথেটার রক্তনালিতে প্রবেশ করানো হয় এবং এক্স-রে মনিটরের মাধ্যমে ধমনির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এনজিওপ্লাস্টি
এনজিও (Angio) শব্দের অর্থ হলো রক্তনালি এবং প্লাস্টি (Plasty) শব্দের অর্থ হলো ঢিলা করে দেয়া। এ পদ্ধতিতে রক্তনালির মধ্যের চর্বি জমে সরু হয়ে যাওয়া পথ প্রশস্ত বা ঢিলা করে দেয়া হয়। যে পথে এনজিওগ্রাম করা হয়েছিল, ওই একই পথে ক্যাথেটারের সঙ্গে বেলুন প্রবেশ করানো হয়। তারপর ওই বেলুন ফুলিয়ে করনারি ধমনির সরু অংশকে প্রশস্ত করা হয়। এতে করে ধমনির ভেতরের রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক হয়। ধমনির এ প্রশস্ততা ধরে রাখতে স্টেন বা রিং বসানো হয়।
স্টেনটিং বা রিং পরানো
এনজিওপ্লাস্টির পরে ওই জায়গার প্রশস্ততা ধরে রাখতে সেখানে রিং বসানোকে স্টেনটিং (Stenting) বলে। অনেকের ধারণা, স্টেনটিং বুক কেটে করা হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যে পথে এনজিওগ্রাম করা হয়েছে, ওই পথেই এনজিওপ্লাস্টি করে স্টেনটিং বা রিং পরানো হয়। স্টেনটিং বা রিং পরানোর পর ওই জায়গায় আবারও চর্বি জমতে পারে। তাই পরবর্তী সময়ে রক্তের চর্বি কমার ওষুধ, রক্ত জমাট না বাঁধার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শমতো খেয়ে যেতে হয়। দুই ধরনের স্টেন বা রিং লাগানো হয়ে থাকে। ড্রাগ এলুটিং স্টেন (এটি খুব দামি ও ব্যয়বহুল) এবং মেটাল স্টেন।

৫০. মানুষের হৃৎপিণ্ডের কতটি প্রকোষ্ঠ থাকে?
উত্তর: চারটি
ব্যাখ্যা: মানুষের হৃদপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ট হচ্ছে-

ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ, ডান নিলয় এবং বাম নিলয়।

নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞানঃ প্রাণী বিজ্ঞান-২