জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধর্ষক আরমানের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হোক

আরমান ও তার স্ত্রী
আরমান ও তার স্ত্রী
মেয়ের ধর্ষক আরমান হোসেন সুমন ও তার স্ত্রী

কী এমন হতে পারে দুনিয়ায় যে আপনার স্বামী আপনার মেয়েকে ধর্ষণ করছে জেনেও আপনি চুপ থাকবেন? রাখেন আপনার ভয়ডরের কথা, আসল কথা কন- আপনি এদ্দিন রুমে তালাবন্দী ছিলেন, আলো-ছায়া-হাওয়া-পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন? তা ছিলেন না বলেই পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জেনেছি। তাহলে?

আক্রান্ত মেয়েটির বয়স এখন ২০ বছর। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় থেকে সৎ বাবা আরমান তাকে ধর্ষণ করে আসছে। খবরে প্রকাশ- মেয়েটির মা এ ঘটনা জানত! আরমান তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন সময়ে তা ভিডিও করেছে। মেয়েটিকে জিম্মি করেছে বছরের পর বছর! মামলার তদন্তকারী পরিদর্শক নাজমুল নিশাতের কাছে আরমান তার অপরাধের কথা প্রাথমিকভাবে শিকার করেছে বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যাচ্ছে, “তাঁর বাবার সঙ্গে মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ২০০৫ সালে আরমান হোসেনকে বিয়ে করেন তাঁর মা। দ্বিতীয় বিয়ের এক বছর পর থেকে মায়ের কাছে থাকা শুরু করেন মেয়েটি। চাকরির কারণে মেয়েটির মা মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের বাড়ি থেকে সকালে কর্মস্থলে চলে যেতেন। ২০০৮ সালের কোনো একদিন দুপুরে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটিকে আরমান প্রথম ধর্ষণ করেন। এ সময় মেয়েটির আপত্তিকর ছবি মোবাইলে তুলে রাখেন আরমান। ছবি ও ভিডিও প্রকাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আরমান এরপর থেকে প্রায়ই ধর্ষণ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন মেয়েটি। ২০১৫ সালে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে পরে গর্ভপাত ঘটান। এরপরও তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়ে যান আরমান। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ওই মেয়ে তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেও কুপ্রস্তাব পাঠাতে থাকেন আরমান। এতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটির এক বন্ধুকে ভিডিও ও অডিও ক্লিপ পাঠান আরমান। এ ছাড়া আরমানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে দুটি নকল আইডি খুলে মেয়েটি তাঁর ছবিযুক্ত করার অভিযোগ আনেন।”

মেয়েটির বিভিন্ন ঘনিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে মেয়েটির মা ঘটনাটি জানতে পেরেছিল, কিন্তু ভয়ে তিনি চুপ ছিলেন! এই ভয় নিয়েই আমাদের প্রশ্ন। কাউকে ছেড়ে যেতেও ভয়? নিজের সন্তানকে রক্ষা করতেও ভয়? নাকি এ আরেক বিকৃতি?

আন্ধারে ঘটে যাওয়া এ বিষয়গুলো যখন আলোতে আসে তখন বিষয়গুলিকে শুধু ঘটনা হিসেবে গুরুত্ব দিলে চলে না। আমরা এরকম খবরের মাঝে মাঝেই সাক্ষী হই যে স্বামীর অনেক অপকর্মের সাথে স্ত্রী জড়িত। এটা হয়ত চূড়ান্ত কিছু, অর্থাৎ ‘মেয়ের ধর্ষণের সাথে মা জড়িত’ এটা সামান্য কিছু নয়, বিরলতম। এ ধরনের কিছু এখানে উত্থাপিত নয়, প্রমাণিত নয়, কিন্তু একজন মা তার স্বামী কর্তৃক মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে জেনেও বছরের পর বছর চুপ থাকবেন? তা হতে পারে কি? কোনো বিবেচনাতেই হতে পারে না।

আরমানের স্ত্রীর বিষয়টি কোনোভাবেই জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে পারে না। তাকেও গ্রেফতার করা হোক, এবং সত্যিই সে জানত কিনা উদঘাটন করা হোক। মানুষের মধ্যে সকল ধরনের বিকৃতিই রয়েছে, এটি সমাজ বিজ্ঞান, দেহ বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। তাই ষোলো সতেরো কোটি মানুষের দেশে সবকিছু ঘটাই সম্ভব।

অনেক ঘটনা হয়ত খুবই বিরল, অর্থাৎ সে ধরনের ঘটনা প্রতি দশ বছরে কোটিতে মাত্র একটি ঘটে। তাহলেও কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বছর দু’একটি বিরলতম অপরাধমূলক ঘটনা ঘটা সম্ভব। বিরলতম ভালো কিছু করতে চেষ্টা লাগে, সিস্টেম লাগে, তাই এত মানুষের মধ্য থেকে ভালো ভালো ব্যতীক্রমী অনেক কিছু হওয়ার কথা থাকলেও সিস্টেমের অভাবে হয়ত হচ্ছে না।

কিন্তু খারাপ কিছুর জন্য যেহেতু শুধু ইচ্ছেটাই লাগে, সেক্ষেত্রে বিরলতম খারাপ ঘটনাগুলো ঠিকই ঘটছে। তাই অারমানের ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার সুযোগ আছে। পাশাপাশি এগুলো সামাজিক অবক্ষয়ের আলামত হিসেবে না দেখে মানুষের চিরচারিত বিরলতম বিকৃতি-অপরাধ হিসেবেই দেখা উচিৎ হবে।


অনেক পত্রিকা ইতোমধ্যে আরমানের স্ত্রীকে মেয়েকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে দেখিয়ে খবর প্রকাশ করেছে, বিষয়টি আমাদের আতঙ্কিত করেছে। এ ধরনের লাগামহীন সাংবাদিকতা, অনলাইন সাংবাদিকতার অপব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

#সম্পাদকের ডেস্ক