জাম্বিয়া কেনো বিখ্যাত?

জাম্বিয়া

জাম্বিয়ার ইতিহাস ঔপনিবেশিকতা থেকে শুরু করে ১৯৬৪ সালের ২৪ অক্টোবর ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করেছে।

Flag of Zambia
জাম্বিয়ার পতাকা।

জাম্বিয়া, আনুষ্ঠানিকভাবে জাম্বিয়া প্রজাতন্ত্র, মধ্য, দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এটি সাধারণত দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকা বা দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত বলে উল্লেখ করা হয়। এর উত্তরে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, উত্তর-পূর্বে তানজানিয়া, পূর্বে মালাউই, দক্ষিণ-পূর্বে মোজাম্বিক, দক্ষিণে জিম্বাবুয়ে এবং বতসোয়ানা, দক্ষিণ-পশ্চিমে নামিবিয়া এবং পশ্চিমে অ্যাঙ্গোলা অবস্থিত। জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকা, জাম্বিয়ার দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত। জনসংখ্যা মূলত দক্ষিণে লুসাকা এবং উত্তরে কপারবেল্ট প্রদেশের চারপাশে ঘনীভূত, যা দেশের মূল অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

জাম্বিয়া তার অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অসংখ্য প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং আইকনিক ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত। এটি তার অনন্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্যেও পরিচিত, যার মধ্যে লুসাকার সানডে ক্রাফটস্ মার্কেটও রয়েছে, যা জাম্বিয়ার শিল্প ও কারুশিল্প প্রদর্শন করে।

ভিক্টোরিয়া ফলস্

বিশ্বের সপ্ত প্রাকৃতিক আশ্চর্যের মধ্যে একটি হচ্ছে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম জলপ্রপাত এবং এটি বিশ্বের একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

বন্যপ্রাণী

জাম্বিয়ায় হাতি, সিংহ এবং চিতাবাঘ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রয়েছে, যা এটিকে সাফারির জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ন্যাশনাল পার্কস্ (জাতীয় উদ্যান)

জাম্বিয়াতে দক্ষিণ লুয়াংওয়া এবং লোয়ার জাম্বেজির মতো অসংখ্য জাতীয় উদ্যান রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সাফারি অভিজ্ঞতা এবং বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ রয়েছে।

শান্তির দেশ জাম্বিয়া 

জাম্বিয়া আফ্রিকার শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকার অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করতে যে দুশ্চিন্তাগুলো মাথায় রাখতে হয় জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে সে ধরনের সমস্যা নেই। জাম্বিয়া আফ্রিকার অন্যতম নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিচিত বলেই  পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশী।

বৃহত্তম জলাভূমি 

আফ্রিকার বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমিগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যাংওয়েলু জলাভূমি। এটি বৃহৎ সুবিল পাখি এবং অন্যান্য উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জন্যেও উল্লেখযোগ্য।

জাম্বিয়ার অর্থনীতি

সব মিলিয়ে মাত্র ৩০/৩২ ডলার বিলিয়ন জিডিপি’র দেশ জাম্বিয়া। জনসংখ্যা বাংলাদেশের ৬ ভাগেরও কম। অর্থনীতির আকার বাংলাদেশের ২০ ভাগ। স্পষ্টতই জাম্বিয়া একটি দরিদ্র দেশ। আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর ৩৯ তম এ দেশটি বাংলাদেশের পাঁচ গুণেরও বড়। প্রশ্ন হচ্ছে— দেশটি দরিদ্র কেনো?

অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা

জাম্বিয়ার অর্থনীতি তামার খনির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা এর রপ্তানি আয় এবং জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। যদিও খনি খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে, বিশেষ করে উচ্চ বৈশ্বিক তামার দামের সময়কালে, একইসাথে এই নির্ভরতা জাম্বিয়াকে মূল্যের ওঠানামার ঝুঁকিতে ফেলেছে। জাম্বিয়া এখন তার অর্থনীতিকে আরো বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে।

জাম্বিয়া কেনো দরিদ্র 

ঔপনিবেশিকতা এবং রাজনৈতিক কারণ থাকার পাশাপাশি জাম্বিয়া ভৌগোলিক কারণেও প্রতিকূল। জাম্বিয়া একটি স্থলভাগবেষ্টিত দেশ। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এটি পুরোপুরি আকাশপথ অথবা ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোর স্থলপথের ওপর নির্ভরশীল।

অন্যান্য সমস্যার মধ্যে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা এবং সীমিত দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য।

জাম্বিয়ার কৃষি 

বিশাল দেশ হওয়া স্বত্তেও জিডিপিতে জাম্বিয়ার অবদান খুবই সামান্য। মোট জিডিপি-এর ৩ শতাংশেরও কম। এজন্য জাম্বিয়া সরকার কৃষিতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

জাম্বিয়ার কৃষিক্ষেত্র মূলত ভুট্টার ওপর নির্ভরশীল, যেখানে সয়াবিন দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল। এই খাতে মূলত ক্ষুদ্র কৃষকরা আধিপত্য বিস্তার করে আছে, যারা মূলত জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিকাজে নিয়োজিত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসলের মধ্যে রয়েছে জোয়ার, বাজরা, কাসাভা, চীনাবাদাম এবং বিভিন্ন বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।

যেখানে বাংলাদেশের মোট ভূমির ৭২ শতাংশ, সেখানে জাম্বিয়াতে আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ মাত্র ৫.১ শতাংশ। জাম্বিয়াতে স্বীকৃত কোনো মরুভূমি না থাকার পরও চাষযোগ্য জমি কেনো অনেক কম?

জাম্বিয়ার রাজনীতি 

বহুদলীয় গণতন্ত্রে জাম্বিয়া একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয়ই, এবং তারা সর্বোচ্চ দু’টি পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য সরাসরি নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদের স্পিকারের নেতৃত্বে সংসদ নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত এবং কিছু সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। সুপ্রিম কোর্ট হল সর্বোচ্চ আপিল আদালত।

বাংলাদেশ-জাম্বিয়া সম্পর্ক 

জাম্বিয়া
জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে ডাঃ মুহিদ জাহেদ আলম।

জাম্বিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭২ সাল থেকে সৌহার্দ্যপূর্ণ চেনা-জানার ইতিহাস রয়েছে। উভয় দেশই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন এবং কমনওয়েলথের সদস্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং জাম্বিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। জাম্বিয়া সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি কনস্যুলেট অফিস চালু করেছে। বাংলাদেশও জাম্বিয়াতে একটি কনস্যুলেট অফিস চালু করছে। জাম্বিয়াতে বাংলাদেশ থেকে কনস্যুলেট হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ মুহিদ জায়েদ আলম। মূলত বর্তমানে তার নেতৃত্বেই জাম্বিয়া বাংলাদেশ সম্পর্ক পরিচালিত হচ্ছে। তার মতে জাম্বিয়ার সাথে বাংলাদেশের আরো ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্কের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ওষুধশিল্প, কৃষি, পোশাক, নবায়নযোগ্য শক্তির মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাম্বিয়াতে বিনিয়োগ করতে পারে। আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রেও জাম্বিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হতে পারে।

Zambia
জাম্বিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এনজিওকর্মী এবং উদ্যোক্তা তানহা হাবিব।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হিউম্যানিটি আফ্রিকা’ নামে আমাদের প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন এখানে কাজ করে। সেই সূত্রে প্রায় ১২ বছর ধরে এখানে আছি। জাম্বিয়ার মানুষ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ, তাদের সাথে প্রচুর কাজ করার সুযোগ রয়েছে।