মৃত্যুই আমার ঈশ্বর, মৃত্যুই আমার স্বর্গ, জীবনটা শুধু স্বর্গ সোপান

পৃথিবীতে নাস্তিক বলে কিছু নেই, আবার আস্তিক বলেও কিছু নেই। আপনি যদি নিশ্চিত বিশ্বাস করতেন তাহলে ‘অত সুন্দর’ পরকালের জন্যই বাঁচতেন শুধু নির্বিঘ্ন হয়ে, ইহকালকে তুচ্ছ জ্ঞান করতেন। তাই কি হয়? ঘৃণা ছড়াতে চাই না, বিষবাক্য প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু এটা সত্য যে, আস্তিকতার চর্চার মধ্যে থাকা মানুষেরাই ইহকালে বেশি সফল— তারা তুলনামূলকভাবে বেশি আত্মকেন্দ্রীক, পাশাপাশি একটি সম্প্রদায় হয়ে পরস্পরের সহযোগিতা নিশ্চিত করে বলেও হয়ত।

তাহলে ধর্মের সাথে ঈশ্বরের সংযোগ বেশি, নাকি ধর্মের যোগ শুধু সম্প্রদায়ের সাথে? গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকাটাই যদি ধর্ম হয়, তাহলে ঈশ্বর তো বরং তার বিপরীত, সে তো একা মানুষের, নিরাশ্রয় মানুষের, ধ্যানমগ্ন মানুষের অবলম্বন। মুক্তিযোগ–জ্ঞানযোগের সাথে কল্পিত–মহান এক ঈশ্বরের সম্পর্ক খুবই মানায়, কিন্তু একটি গোষ্ঠীগত ধর্ম সেখানে কি খুবই স্থুল নয়?

নাস্তিক আমি কাকে বলি? যে ‘নেই’ বলছে তাকে বলছি নাস্তিক! নেই বললেই কি ‘না’ হয়ে যায়? ‘খাবার নেই’ যখন কেউ বলে— এর মানে হচ্ছে তার খাবার নেই। আপনার খাবার কি তার সে কথায় উধাও হয়ে যায়? সে ‘নেই’ বলাতে কি আপনার যা আছে তা আপনি তাকে দিবেন? যে আপনি খাবার না থাকলে খাবার দেন না, পোশাক না থাকলে পোশাক দেন না— সেই একই আপনি আপনার ঈশ্বর কেন আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন? বিষয়টি দুর্বোধ্য নয়, তবে খুব বেশি বর্ণিতও নয় এখন পর্যন্ত।

যার খাবার নেই সে কি খাবার খুঁজছে না? তারও তো বাঁচতে হবে, নাকি? তার প্রয়োজনেই সে খুঁজবে? খাবার অনেক প্রকার হয়— ক্ষুধার্তের চাই খাবার, ঠিক তা পোলাও লাগবে এমন নয়। সে খাবার খুঁজছে, পোলাও নয়। কিন্তু নির্বোধ নেশায় যে খাবে সে নির্দিষ্ট খাবারই খোঁজে।

আমি মুক্তি খুঁজছি, তা সে ঠিক আপনার ঐ ঈশ্বর নয়। আমার ঈশ্বর নেই, এর অর্থ হচ্ছে বেদ-বাইবেল-কেতাবের ঈশ্বর আমার নেই। আপনার ঈশ্বর আছে, কেতাব থেকে বিনা কষ্টে আপনি পেয়ে গিয়েছেন সে ঈশ্বর। সে ঈশ্বরের ঘর আছে, সে ঈশ্বর ছবিতে ধরাও যায়। ইহকালে আপনি রাজা হতে চাচ্ছেন, একইসাথে পরকালের ঘোড়ার পিঠেও আপনি সওয়ার।

আমি রিক্ত, প্রতিদিন বিকশিত হচ্ছি, প্রতিদিনের অন্বেষণে হন্যে হচ্ছি মুক্তির ঈশ্বর খুঁজে খুুঁজে। জন্ম থেকে মৃত্যু সময় জুড়ে আমি খুঁজে ফিরি এক মহান ঈশ্বর, কারণ, আমার কোনো কেতাবী ঈশ্বর নেই। আমি কোনো ঈশ্বরের দেখা পাই না, আমি কোনো প্রতিশ্রুতিও পাই না। আমি পথিক হয়ে বাঁচি, আমি অভিযাত্রীক হয়ে বাঁচি, আমি খুঁজে ফিরে তৃপ্তিতে বাঁচি। দীর্ঘ কর্মক্লান্ত ভ্রমণ শেষে মৃত্যুর মাধ্যমে আমি ঘুমিয়ে পড়ি আমার সোপার্জিত ঈশ্বরের কোলে। মৃত্যুই আমার ঈশ্বর, মৃত্যুই আমার স্বর্গ, জীবনটা শুধু স্বর্গ সোপান।


দিব্যেন্দু দ্বীপ

স্বর্গ সোপান