চেক ডিজঅনার হলে কি করবেন?

follow-upnews
0 0

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্স না থাকার কারণে চেক ডিজঅনার হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের চেককে বলা হয় ‘বাউন্সড চেক’। এ অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকারের বিধান আছে। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১-এর ১৩৮ নম্বর ধারার আওতায় এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়।

আদালত:

চেকের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে ক্ষেত্রমতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে হবে। চেকটি ব্যাংকের যে শাখায় ডিজঅনার হয়েছে ওই শাখাটি যে এলাকায় অবস্থিত, ওই এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে সে আদালতে মামলা করতে হবে। তবে এ অপরাধের বিচার হবে দায়রা আদালতে।

মামলা দায়ের পদ্ধতি:

মামলা দায়েরের আগে কতিপয় শর্ত পূরণ করতে হবে।

প্রথমত, মেয়াদের মধ্যে চেকটি পরিশোধের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যাংক চেকের মেয়াদ থাকে। এরপর চেকটি তামাদি হয়ে যায় অর্থাৎ কার্যকারিতা হারায়।

দ্বিতীয়ত, চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত তথ্য ব্যাংক থেকে প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেক ইস্যুকারীকে চেকের অর্থ প্রদানের লিখিত দাবিনামা সংক্রান্ত নোটিস প্রেরণ করতে হবে। চেকের প্রাপক অথবা যথানিয়মে ধারক এই নোটিস প্রদান করবেন। নোটিস প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেক ইস্যুকারী যদি চেকের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হন তবেই হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার আওতায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

তৃতীয়ত, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

নোটিস প্রদান:

চেক ইস্যুকারীকে উপরে বর্ণিত নোটিস তিনভাবে প্রদান করা যায়।

১। চেক ইস্যুকারীর হাতে নোটিসটি সরাসরি পৌঁছে দেওয়া।
২। প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে বাংলাদেশে তার জ্ঞাত ঠিকানায় নোটিস প্রেরণ করা।
৩। বহুল প্রচারিত কোনো বাংলা জাতীয় দৈনিকে নোটিসটি প্রকাশ করা।

কোনো কারণে যদি প্রথমবার চেকটি ডিজঅনার হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে নোটিস পাঠানো সম্ভব না হয়, তাহলে দ্বিতীয়বার চেকটি পরিশোধের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। এভাবে একাধিকবার চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পরিশোধের জন্য জমা না দিলে চেকটি কার্যকারিতা হারায়।

কোম্পানির ক্ষেত্রে:

হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন-এর ১৩৮ ধারায় বর্ণিত অপরাধ সংঘটনকারী যদি কোনো কোম্পানি হয় এবং ওই কোম্পানি যদি সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ওই অপরাধ সংঘটনের সময় কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী হবেন এবং আইন অনুযায়ী দণ্ডিত হবেন। কোম্পানির ক্ষেত্রে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করে মামলা করতে হয়।

আদালতে যা দাখিল করতে হবে:

মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত ব্যাংকের চিঠি, আইনি নোটিস অথবা পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি অথবা পোস্টাল রসিদ ও প্রাপ্তি স্বীকার রসিদের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

শাস্তি:

তহবিল অপর্যাপ্ততার কারণে ব্যাংক চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে উল্লিখিত অর্থের সর্বোচ্চ তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয় প্রকার দণ্ডের বিধান হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে আছে। নগদ টাকার পরিবর্তে চেকের মাধ্যমে ঋণ অথবা অন্য কোনো দায়দেনা পরিশোধ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আইনে এ বিধান করা হয়েছে।

আপিল:

 

আদালত কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে। চেকে উল্লিখিত টাকার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন, সে আদালতে জমা দিয়ে আপিল করতে হবে। দেশের আদালতগুলোতে চেকের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমা হরহামেশাই হচ্ছে। শাস্তিও হচ্ছে। কাজেই, সাবধান! ব্যাংক চেক দিয়ে প্রতারণার দিন শেষ।

Next Post

“প্যান্ট খুলে চেক করলো আমি হিন্দু কিনা, তারপর চাকু চালালো গলায় পেটে”

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃন্ময় মজুমদার। তিনি ভাবতে পারেননি তার সামনে কি রকম ভয়াবহতা অপেক্ষা করছিল। সোমবার সন্ধ্যায় বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মৃন্ময়। রাত ৩টার দিকে তিনি ফকিরহাটের পলতিতা বটতলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন। একটা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে নিজের গ্রাম পুটিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। গন্তব্যের একটু আগেই কলকলিয়া নামক স্থানে তার গতিরোধ […]