ব্যবসা করতে চাচ্ছেন?

follow-upnews
0 0

মনে রাখতে হবে যেকোনো উদ্যোগের প্রথম দশ বছর চলে যায় সাজাতে-গোছাতে। এই সময়ে কিছু উপার্জন হতে পারে, নাও হতে পারে। দশ বছর কোনো উপার্জন ছাড়া মেধা-শ্রম-অর্থ বিনিয়োগ করে যেতে সবাই পারে না। যে পারে সে জানে কতখানি পথ পেরোলে অলোর দেখা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সে তার স্বপ্ন এবং পরিকল্পনাটা সুস্পষ্টভাবে জানে বলেই কষ্ট হয় না।


ব্যবসা করতে গেলে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা খুব জরুরী। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলার মানসিকতা থাকতে হবে। পথে বসার মানসিকতাও থাকতে হবে। ঘর-বাহির করে করেই এক সময় উদ্যোগ সফল হয়। উদ্যোক্তার পয়শা থাকে না, পয়শাওয়ালা উদ্যোক্তা হয় না। হাতে পয়শা থাকলে সৃজনশীলতা আসে না, পয়শাওয়ালা হয় বিনিয়োগকারী।

ব্যবসার পরিকল্পনা হওয়া উচিৎ নিজের শিক্ষা, সামার্থ এবং পেশার কথা মাথায় রেখে। মৎস্য চাষির পরিকল্পনার সাথে প্রকাশকের পরিকল্পনা না মেলাটাই স্বাভাবিক। এজন্য প্রত্যেকের জীবনের ছকটা হওয়া উচিৎ আলাদা আলাদা। পরিকল্পনাটা তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে—

১. বর্তমান জীবন, যেটি মূলত পরিকল্পনা নয়, বাস্তবতা। বর্তমান জীবনটাকে সামলাতে হবে, বর্তমানের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান জীবন এড়িয়ে চললে বিপদ বাড়বে। কোনোভাবেই বর্তমানের সমস্যা অগ্রাহ্য করা যাবে না। সমস্যা এবং খরচ যাতে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

২. আগামী দশ বছরে নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই, সেটি ঠিক করা। এবং সেইমত কাজ করা। এটা করতে গিয়ে প্রচুর সমস্যা সামনে আসবে, হচ্ছে না মনে হবে, সেক্ষেত্রে কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হতে পারে। বাস্তবতা মেনে নিয়ে অন্য কোনো কাজে সাময়ীকভাবে যুক্ত হওয়া লাগতে পারে। তবে লক্ষ্য ঠিক থাকলে সমস্যা হবে না। শুধু সময়টা বাড়তে পারে। দশ বছরের জায়গায় বিশ বছর লাগতে পারে।

৩. সবসময় একটা বিকল্প হাতে রাখা। ধরা যাক, কেউ ভাবল সে গাড়ীর ব্যবসা করবে। শুরু করল, এগোচ্ছেও ভাল। পাশাপাশি তার আরেকটা ব্যবসা থাকলে মন্দ কী? বড়র সাথে একটা ছোট থাকতে পারে। একটা নিজের নামে আরেকটা স্ত্রীর নামে থাকলে মন্দ কী? তাতে ঝুঁকি কমে। একসাথে দুটো শুরু করা ভালো না, তবে একটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর আরেকটা করা যেতেই পারে। শুরুর দিকে উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সময় বাঁচে এমন কোনো চাকরি করাও খারাপ নয়, কারণ, চাকরির মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়, তা কাজে লাগে। পাশাপাশি বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যারও কিছু সমাধান হয়।

মনে রাখতে হবে যেকোনো উদ্যোগের প্রথম দশ বছর চলে যায় সাজাতে-গোছাতে। এই সময়ে কিছু উপার্জন হতে পারে, নাও হতে পারে। দশ বছর কোনো উপার্জন ছাড়া মেধা-শ্রম-অর্থ বিনিয়োগ করে যেতে সবাই পারে না। যে পারে সে জানে কতখানি পথ পেরোলে অলোর দেখা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সে তার স্বপ্ন এবং পরিকল্পনাটা সুস্পষ্টভাবে জানে বলেই কষ্ট হয় না।

আর হিসেব করতে হবে বিভিন্নভাবে। বিনিয়োগ দুইভাবে থাকে— (ক) দৃশ্যমান; এবং (খ) অদৃশ্যমান। আমরা শুধু দৃশ্যমান বিনিয়োগ দেখতে পাই। দশ বছরে নিজের শ্রম বিনিয়োগ হয়েছে, পরিকল্পনা বিনিয়োগ হয়েছে, বিজ্ঞাপন হয়েছে। প্রতিদিন একজন মানুষে জানলেও দশ বছরে ত্রিশ-পয়ত্রিশ হাজার মানুষে উদ্যোগটি সম্পর্কে জেনেছে। এসবও বিনিয়োগ। দৃশ্যমান বিনিয়োগ (টাকা) সময়ের সাথে সাথে অদৃশ্যমান বিনিয়োগে পরিণত হয়ে যেতে পারে। কেউ পাঁচ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ বছর পর যদি দেখে তার কোষাগার শূন্য, তাহলে এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই যে কিছুই জমেনি আসলে।

উদ্যোক্তা হওয়া মানে সব সময় একটা পরিকল্পনার মধ্যে থাকা। এক পা দুই পা করে হলেও লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া। বাজার বোঝার চেষ্টা করা, মানুষের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করা, নতুন কিছু করার চেষ্টা করা।

যে কোনো উদ্যোগের প্রথম দিকে আয়-ব্যয়ের সাথে ভারসাম্য রাখাটা খুব জরুরী। পরিবার সামলাতে হবে, তবে বিলাসিতার সুযোগ নেই একেবারে, বরং পাই পয়শাও বিনিয়োগ করতে হবে। যেকোনো উদ্যোগের ন্যূনতম পুঁজি বলে একটা বিষয় আছে, সে পর্যন্ত না যেতে পারলে রিটার্ন আসবে না। ধীরে ধীরে হলেও সে পথটুকু পাড়ি দিতে হবে। এর আগে খেই হারিয়ে ফেললে কিছুই দাঁড়াবে না।

ভাবতে পারেন, বয়সে বেড়ে যাচ্ছে আর কবে হবে? নিজের বয়স হিসেব করলে তো হবে না। ব্যবসার বয়স হিসেব করতে হবে। পঞ্চাশ বছর বয়সে কিছু শুরু করলে এক বছর পরেই আপনার বয়স হবে ৫১, কিন্তু ব্যবসার বয়স হবে মাত্র এক বছর। তাই নিজের বয়সের হিসেব না করে ব্যবসার বয়সের হিসেব করুন।

এমন নজিরও পৃথিবীতে কম নেই, যারা ষাট বছর বয়সেও পরে গিয়েও নতুন কিছু শুরু করেছেন। বিখ্যাত ফুড চেইন  কেএফসি’র মালিক কর্নেল স্যান্ডার্স ফ্রাইড চিকেনের ব্যবসা শুরু করেছিলেন ৬২ বছর বয়সে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ড সৃষ্টি হয়েছিল যার হাত ধরে তিনিও সফলতার দেখা পেয়েছিলেন ৫২ বছর বয়সে। বিখ্যাত ফোর্ড গাড়ির নাম সবার জানা, সেই হেনরি ফোর্ডও চল্লিশের আগে বিন্দুমাত্র সফলতার দেখা পাননি।

চাকরিজীবিদের কথাই ধরুণ না। একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে ন্যূনতম দশ বছর লেগে যায়, তার আগে ভীষণ ঝক্কি-ঝামেলা আছে। নিচের পদগুলোতে  তো শুধুই খাটুনি। রাতারাতি কিছুই হয় না, না চাকরিতে, না ব্যবসায় বা গবেষণায়।

খেলা-ধুলায় এবং বিনোদন জগতে হঠাৎ কারো গল্প শোনা মানে এই নয় যে তার পিছনে বড় একটা কাহিনী নেই। আবার খুব সহজে কেউ উঠে আসলে সে হারিয়েও যায় খুব দ্রুত। ধ্যর্য ধরুণ, নিজের সামার্থ এবং পরিকল্পনার মধ্যে থাকুন। যেটি আপনি ভালো পারেন, সেটিই পূর্ণ মনোযোগে করুন।


দিব্যেন্দু দ্বীপ

Next Post

ব্যাংক ব্যক্তির সাথে পার্টনারশিপে গেলে অসুবিধা কোথায়?

এ ধরনের পরিকল্পনা মার খাওয়ার অর্থ হচ্ছে সমাজে শুধু টাকাওয়ালারা এবং কালো টাকা সুযোগ পায়। তারা হাতুড়েও হয়েও ছড়ি ঘুরায় সমাজে। তাই অর্থনীতি তথা সমাজের সু-স্বাস্থ্যের জন্যেই ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। মনে হল তো করলাম —এতে সাময়ীক সুখ (মুহূর্তের সুখ) থাকলেও জীবন সঠিক পথ ধরে এগোতে পারে […]