ভালোবাসার জাদু এবং স্কুল অব ড্রিম

follow-upnews
0 0

প্লাবন ইমদাদস্কুল অব ড্রিম

ফিরছিলাম জে.এস.সি. পরীক্ষার দায়িত্ব পালন শেষে। বিধিবাম। ঢাকা-চট্রগ্রাম বিশ্বরোডের এক বিরান জায়গায় গাড়ী নষ্ট হয়ে গেল। ড্রাইভার বলল, স্যার মেকানিক ছাড়া কাজ হবে না। মেকানিক পাই কই? আশেপাশে তো একটা চায়ের দোকানও নেই। হঠাৎ অদূরে দেখি, সাইনবোর্ডে লেখা ‘নাউতলা’। মনে পড়ে গেল, নাউতলায় একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এবং প্রধান শিক্ষিকাও আমার পরিচিত। কল দিলাম।

উনি স্টাফ পাঠিয়ে আমার এবং গাড়ীর বন্দোবস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। নাওতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বসলাম। চারপাশে বাচ্চাদের কিচিরমিচির শুনে কি আর বসে থাকতে ভাল লাগে? ছুটলাম পঞ্চম শ্রেণীর দিকে। সাথে সাথে গার্লস সেকশনের বাচ্চারাও ছুটে এল। ছুটে এলেন শিক্ষকশিক্ষিকা সবাই।

‘তোমরা কে কে ম্যাজিক জানো?’ আমার এ প্রশ্নে কেউ হাত তুলল না। কেউ ম্যাজিক জানে না তাহলে? আমি জোর গলায় বললাম, না, তোমরা সবাই ম্যাজিক জানো। ওরা বলল, না স্যার। আমি বললাম, জানো। ম্যাজিক না জানলে কীভাবে আমার গাড়ীটা তোমাদের স্কুলের পাশে এসেই নষ্ট হয়ে গেল, আর সেই সুবাদে স্কুলে ঢুকে পড়ে তোমাদের সাথে একটু মজা করার সুযোগ পেলাম! সবাই হু হু করে হেসে উঠল। আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষই যাদুকর। আর এ যাদু ভালবাসার যাদু।

ওদের সাথে শুরু হলো ভাব বিনিময়। নানান কথা। কথা আর কথা। পরিচয় হলো ক্ষুদে কবির সাথে। ক্ষুধে মেয়ে কবিকে টেবিলের উপর তুলে দাঁড় করিয়ে বললাম, এবার তোমার স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শুনাও। সে শুনাল এক দারুণ কবিতা। আমি তো অবাক! এই পিচ্চুর মাথায় এতো কিছু! কবিতা শেষে বললাম, তোমাকে আমি কেন হাই বেঞ্চে দাঁড় করিয়েছি জানো? কারণ হল, তুমি কবি। আর কবিদের ঠাঁই অনেক ওপরে।

এক ক্ষুদে বন্ধু গান শুনাল। ভেসে গেলাম মুগ্ধতায়। কে কোন সাবজেক্ট পড়তে ভালবাসে জেনে নিলাম। ভালবাসার বিষয়টির গভীরে কীভাবে যাওয়া যায় তা নিয়ে কিছু কথা হল। ওদের স্বপ্নের কথা শুনলাম। কড়জোরে অনুরোধ করলাম, নিজের লালিত স্বপ্নকে চুরি হতে দিওনা কোনোদিন।

মুহূর্তেই সবাই কেমন যেন আমাকেও বন্ধু ভাবতে শুরু করল। আর আমিও সম্মোহিতের মত কথার যাদুতে ভেসে চললাম, ভাসিয়ে চললাম। ওদের চকচকে চোখে আমি আমার শৈশবের একেকটা খণ্ডচিত্র দেখতে পেলাম।

আহা! শৈশবে এমন যাদু জানলে এমন একটা কথার যাদুকরকে হয়ত বন্দি করে রেখে দিতে পারতাম আমার মগজের খাঁচায়! দীর্ঘশ্বাসে ফায়দা কী? গাড়ী ঠিক হয়ে গেল। তাড়া আছে অফিসে ফেরার।

গাড়ীতে ওঠার সময় সব বাচ্চারা আমাকে ঘিরে ধরল। যেন আরেকটু, আর অল্প একটু কথা বলা যায়। পঙ্কজ উদাসের ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’ এর মত অনুভূতি ওদের প্রত্যেকের মধ্যে, একই অনুভূতি আমারও।

তবু ভালবাসার মানব-দেয়াল পেরিয়ে গাড়ী চলা শুরু হল। রাস্তায় হাঁটতে থাকা বাচ্চাগুলো আমাকে বন্ধুর মতই হাত নেড়ে টা টা দিচ্ছিল। ড্রাইভার জানতে চাইল, স্যার, কাহিনী কী? কী এমন করলেন যে বাচ্চাগুলো এমন ভক্ত হয়ে গেলো?

আমি নিরুত্তর। মনে মনে উত্তর করলাম, যাদু, ভালবাসার অতি সাধারন লৌকিক যাদু।

পুনশ্চ: টের পেলাম, আমার “স্কুল অব ড্রিম” এর স্বপ্নটা মরেনি। আজও বেঁচে আছে অন্দরের অন্দরে। জেগে উঠবে, সত্যিই উঠবে একদিন।

Next Post

সেদিন ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান

দিব্যেন্দু দ্বীপ ২০০৯ সালে (১৮/১০/২০০৯) ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমি একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলাম টিএসসি’র মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে লিটল ম্যাগাজিন “আঠারো” র ব্যানারে। উল্লেখ্য, তখন আমি “আঠারো” নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতাম জগন্নাথ হল থেকে। উক্ত অনুষ্ঠানে সেদিন গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা এবং শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন, উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন লেখক-সাংবাদিক। উপস্থিত ছাত্রনেতা বদিউজ্জামান […]
DUCSU

এগুলো পড়তে পারেন