বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করে লাভবান হতে পারেন

follow-upnews
0 0

বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ


নরসিংদীতে লটকন চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন অনেক চাষি। আর্থিক লাভের কারণে চাষিদের মধ্যে লটকন চাষে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছরই এখানে বাড়ছে লটকন বাগানের সংখ্যা। বর্তমানে নরসিংদীর উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের লালমাটি এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রচুর লটকন যাচ্ছে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার বেলাব, শিবপুর, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৫৩৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শিবপুর উপজেলায় ৪০০ হেক্টর ও বেলাব উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। এ ছাড়া রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলায় লটকনের চাষ হয়েছে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে।

মৌসুমে এখানে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদন হয়, যার আনুমানিক দাম ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা।

চাষিরা জানান, লটকন গাছ উঁচু ও সমতল সব ধরনের জমিতেই জন্মে। আগে গ্রামে কোন কোন বাড়িতে লটকন গাছ দেখা যেত। ব্যাপক চাহিদা বা ফল হিসেবে সমাদর তেমন ছিল না বলে কেউ এটিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের কথা চিন্তা করত না। প্রচুর ক্যালরি, খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃব্ধ এ ফলটির চাহিদা বর্তমানে অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে দামও।

মাটি ও জাতগুণে লটকন টক ও মিষ্টি দুই প্রকারের। তবে অধিক মিষ্টি ও সামান্য টক স্বাদের লটকনের চাহিদা বেশি।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, নরসিংদীর উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উঁচু এলাকার লাল রঙের মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এ মাটিতে লটকনের উৎপাদন ভাল হচ্ছে। এগুলো আকৃতিতেও বড় ও মিষ্টি। নরসিংদীর রায়পুরা, শিবপুর, বেলাব ও মনোহরদী উপজেলার শত শত চাষি লটকন বিক্রি করে অর্থনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, শিবপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে। ১৫-২০ বছর আগেও লটকনের স্বতন্ত্র বাগান ছিল না। তখন অন্যান্য ফলগাছের সঙ্গেই দু’একটি গাছ লাগানো হতো ।

লটকন চাষিরা জানান, আগে লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না, দামও ছিল কম। বর্তমানে চাহিদা ও মূল্য বেড়েছে। অন্যান্য ফলের তুলনায় লটকনের ফলন অনেক বেশি হয় বলে কৃষকরাও অধিক লাভবান হচ্ছেন।

লটকন ফলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাছের কাণ্ডে ফলে। পুষ্টির সুসমতা ও আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে গাছের গোড়া থেকে কাণ্ড পর্যন্ত ঝোপায় ঝোপায় এত বেশি ফল আসে যে তখন গাছের কাণ্ড বা ডাল দেখা যায় না। আর একটি বিষয় হচ্ছে, লটকন পাকার ৫০-৬০ দিন আগে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম পটাশ পানির সঙ্গে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিলে ফলের মিষ্টতা বাড়ে।

১০ বছর বয়সী একটি লটকন গাছে গড়ে ২০০ কেজি লটকন ধরে। ফল হিসেবে লটকন যেমন খাদ্যমানে ভরপুর, তেমনি ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন ও খনিজ লবণে সমৃদ্ধ।

চাষীরা জানান, তারা লটকন ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। খুচরা দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। ফল বিক্রির ভাবনা তাদেরকে ভাবতে হচ্ছে না। পাইকারা বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

শিবপুর ও মরজাল বাজার থেকে প্রতিদিন পাইকারি ক্রেতারা লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশেও যাচ্ছে এখানকার লটকন।

কাউছার আহম্মেদ নামের একজন লটকন চাষি জানান, লটকন গাছের লিঙ্গভেদ রয়েছে। ফল আসার আগ পর্যন্ত কোনটা স্ত্রী জাত কোনটা পুরুষ জাত তা চিহ্নিত করা কঠিন। চারা লাগানোর কমপক্ষে ৫-৬ বছর পর ফল আসে। ততদিন চাষিদেরকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। পুরুষ জাতের হলে তা কেটে আবার চারা লাগিয়ে ৫-৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়।

প্রথমদিকে চাষিরা চারার জন্য নার্সারিগুলোর উপর নির্ভর করলেও এখন তারা তা করছেন না। এখন নিজেরাই চারা তৈরি করছেন। দেখা গেছে এক বিচি বিশিষ্ট লটকন থেকে অধিক নারী গাছের জন্ম নেয়। তাছাড়া চারা অবস্থায় গাছের বিভিন্ন লক্ষণ দেখে অভিজ্ঞরা চারা সনাক্ত করতে পারেন। বাছাইয়ের এ পদ্ধতি বিজ্ঞান সম্মত না হলেও চাষিরা বেশ সাফল্য পাচ্ছেন।

দেখা গেছে, বাগানগুলোতে নির্দিষ্ট দূরত্বে ৩টি করে চারা রোপণ করা হয়। ৪/৫ বছর পর প্রথম ফল এলে নারী জাতের গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলা হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

জয়নগর গ্রামের লটকন চাষি আব্দুস সালাম মিয়া জানান, তাদের বাড়ির আঙিণায় ১২০টি লটকন গাছ রয়েছে। গত বছর মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করেছেন। এ বছর ফলন ভাল হওয়ায় দামও বেশি পাওয়ার আশা করছেন। বাঘাব ইউনিয়নের হাছান আলী তার ১৫০টি লটকন গাছ থেকে এ বছর প্রায় তিন লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মুকছেদ আলী বলেন, ‘লটকন চাষে রোগ বালাই তেমন একটা নেই, চাহিদাও প্রচুর। এসব কারণে দিন দিন নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটছে। দেশে চাহিদা তো রয়েছেই, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে এখানকার লটকনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

Next Post

ফেসবুক থেকে: প্রার্থনার চেয়ে কর্ম উত্তম

প্রার্থনাকালেও মানুষের মনে কুচিন্তা ভীড় করতে পারে, কিন্তু কাজের সময় কাজ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা কাছে আসতে পারে না। প্রার্থনা ব্যক্তিকে আলসে, মূর্খ, দরিদ্র, পরনির্ভরশীল, হিংসুটে ও কল্পনাবিলাসী করে তোলে। পক্ষান্তরে কর্ম মানুষকে পরিশ্রমী, জ্ঞানী, সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভরশীল, সহানুভূতিপরায়ন ও বাস্তববাদী হওয়ার প্রেরণা দেয়। এজন্য বলা হয়, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” […]
প্রমিতা দাস লাবনী ভারত

এগুলো পড়তে পারেন