আগে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজুন

follow-upnews
0 0

আমাদের অনেকের অনেক রকম শখ থাকে। বিভিন্ন কিছু করার নেশা থাকে। মানুষে পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় থাকে। সমাজের অসংগতিগুলো চোখে পড়ে, সেগুলো নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিছু করতে না পারলে খারাপ লাগে, কিছু বলতে না পারলে দম বন্ধ লাগে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতা। অত্যন্ত নিষ্ঠুর এক অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে আমরা রয়েছি। এখানে যোগ্যতা মূল কথা নয়, ছলে-বলে-কৌশলে এগিয়ে যাওয়াটাই মূল কথা। এখন পূঁজি এবং পদের কদর, মানুষ গৌণ । কে ভালো মানুষ, আর কে মন্দ মানুষ —সেটি বিচার্য হয় সফলতার মানদণ্ডে। তাই পেটে ভাতে বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটুকু না রেখে নানান কিছু করতে গেলে অচিরেই হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, অথবা জীবিকার তাগিদে দুর্বৃত্তের বিষবৃত্তে গিয়ে পড়তে হয়।

সমাজটাকে বিষিয়ে দিচ্ছে যারা, যাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলতে চাই, বেঁচে থাকার জন্য যদি আবার তাদেরই পদানত হতে হয়, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু থাকে না। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এটিই সবচেয় বড় ট্রাজেডি। এ বাস্তবতা পাশ কাটাতে হলে নিজের ন্যূনতম উপার্জনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। একটি দোকান হোক, আর একটি ছোট চাকরি হোক —একটা কিছু থাকতে হবে। অর্থাৎ নিশ্চিত একটা অবলম্বন থাকতে হবে। ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই, নিজের কাজটি নির্বিঘ্নে করে যাওয়ার জন্যই এটি প্রয়োজন।

যদি আপনার আয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকে, তবে আজকেই একটা কিছু শুরু করুন। এমন কিছু করুন, যা দিয়ে নিশ্চিত উপার্জন হয়, ভবিষ্যতের হিরা-জহরতের পিছনে ছোটাটাই শুধু জীবন নয়; বর্তমান সময়টাই একমাত্র বাস্তব সময়। আজকে যা করলাম তা-ই ধর্তব্যের, ‘কাল’ আমি নাও থাকতে পারি। প্রতিদিন বাঁচতে হবে, প্রতিদিনের বাঁচাটাই আসল বাঁচা। বইয়ের দোকার হোক, আর কাঁঠাল পাতার দোকান হোক, করতে হবে একটা কিছু। ইগো নিয়ে বসে থেকে লাভ নেই, ওসব ইগোর ফুটো পয়শাও মূল্য নেই। ইচ্ছাধীন যে কাজটি আপনি করতে চেয়েছেন, ভেতরে ভেতরে কাজটি করে যান, মানুষকে জানানোর খুব দরকার নেই, চূড়ান্ত লক্ষ্যে পেঁৗছালে মানুষ এমনিতেই জানবে।

নিজের সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রাখুন। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষেরই নেশা এবং পেশা এক হয় না, তাই এজন্য আফসোস না করে সময় বণ্টন করে কাজ করে যান। আপনার ইচ্ছাধীন কাজের জন্য দিনের কয়েক ঘণ্টা অবশ্যই আপনি বের করতে পারবেন। ঐ কয়েক ঘণ্টাই যথেষ্ট।

আরেক একটা জিনিস মাথায় রাখবেন— কোনোভাবেই খরচ বাড়ানো যাবে না; বেশি ব্যয় এবং বেশি আয়ের চক্রের মধ্যে পড়ে গেলে কিছু আর করতে পারবেন না, শুধু আয়-ব্যয়ই করতে হবে। বেশি আয় করতে গিয়ে একবার সময় নষ্ট করলেন এবং কষ্ট করলেন, আরেকবার সময় নষ্ট করলেন এবং কষ্ট করলেন বেশি ব্যয় করতে গিয়ে। ব্যয় করতে আয় করার চেয়ে বেশি কষ্ট হয়, হয় না? ব্যয় করা মানে কেনাকাটা করা, প্রায় সব ধরনের খরচ কেনাকাটার মধ্যেই পড়ে। কেনাকাটায় মানসিক শক্তি খরচ হয় প্রচুর, তাছাড়া নানানভাবে এতে কষ্টও বাড়ে। আপনার সুখের জায়গা তো বস্তুতে নয়, আপনার উদ্দেশ্য তো ভিন্ন; তাই অনেক কিছু আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে; একদম বেসিক প্রয়োজনের মধ্যে থেকে জীবন-যাপন করতে হবে, এবং নিজের কাজটি করে যেতে হবে।

Next Post

শিক্ষা, মেধা-যোগ্যতার কথা ভুলে যান, প্রয়োজনে রাস্তার মোড়ে তরকারি নিয়ে বসুন

আপনি কিছুই করছেন না, দীর্ঘদিন আপনি কিছুই করছেন না। শুধু দোষ দিচ্ছেন, একে ওকে সবকিছুকে দোষ দিচ্ছেন। অনেকের দোষ আছে, সিস্টেমের দোষ সবচেয়ে বেশি, কিন্তু এই সিস্টেমটা তো আপনার এবং আমারই তৈরি, দায় তো আমাদেরই, নাকি? দোষ দেওয়া বন্ধ করুন, দায় নিতে হবে। বয়স ত্রিশ পার হয়ে গেল, এখনও যদি […]