আপনাতে বিলীন হব সুখে, কিন্তু আপনার ভাল-মন্দ জানব না, মেনে নেবেন আপনি তা?

follow-upnews
0 0

দিব্যেন্দু দ্বীপ


আপনি নিছক একজন ভ্রমণকারী কেন হবেন? আমি কেন তা হব? সমাজ-সভ্যতায় আপনার-আমার কোনো দায় নেই, থাকা উচিৎ না? ভ্রমণে প্রতি পদে পদে খরচ হয়, টাকা বাঁচিয়ে চলতে হয়, এতে দায় বাড়ে বৈ কমে না একটুও। এর মানে এই নয় যে ভ্রমণের গুরুত্ব আমি অস্বীকার করছি।

তবে ‘গুরুত্ব’ শব্দটির ভীষণ আপেক্ষিকতা আছে, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। আধুনিক সভ্যতার অন্যতম দাবী যেমন ব্যক্তি স্বাধীনতা, পাশাপাশি ব্যক্তির গুরুত্বহীনতাও, তাই ব্যক্তির ভালোলাগা সমষ্টির জন্য কী গুরুত্ব বহন করে সেটিও বিশেষ বিবেচনার বিষয়।

অর্থাৎ, আধুনিত সভ্যতা এজন্যই এতটা অগ্রসরমান সভ্যতা, কারণ, তা রাজা-প্রজা সবাইকে সমান দায়বদ্ধ হতে বলে। ১০: ১ অনুপাতে হলেও তো সে দায় নেওয়া উচিৎ আমাদের, নাকি?

প্রসঙ্গটি আসল, কারণ, ইদানিং প্রচুর ভ্রমণের ইনভাইটেশন আসে, যেতে চাই না তা তো নয়, কখনো কখনো যাই। কিন্তু অনুভব করতে পারি না—হল্লা করে যাওয়া, হোটেলে থাকা, ধনী হলেও যেখানে যত কম খরচ করে পারা যায় তা করা (যেহেতু সামনে আবার বেরোতে হবে), পুরো বিষয়টা খুব মেকি এবং আত্মস্বীকৃত মনে হয়।

এজন্য নিজেকে অন্তত শুধাই-

আপনি দশ ঘণ্টা ভ্রমণ করেন, তবে অন্তত এক ঘণ্টা করে হলেও সভ্যতার দায় মেটানো উচিৎ, উচিৎ কিনা? আর কিছু না হোক ভ্রমণের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামা যায়, শুধু নিজের ছবি না তুলে যেখানে যাচ্ছি সেখানকার মানুষের জীবন-যাপন-সীমাবদ্ধতা-সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি তুলে আনা যায়।

যেমন, জাতীয় স্মৃতি সৌধ ভ্রমণ করতে গিয়ে প্রতিকী হলেও জায়গাটি পরিষ্কার করে দেখানো যায়। কিছু একটা অন্তত করা যায়, তাহলে ভ্রমণের বিষয়টি একটি সামষ্টিক গুরুত্ব পায়, অনেক কাজ হতে পারে এভাবে।

টেকনাফে গেলাম একবার, ওখানকার লবণ চাষীদের দেখলাম, লবণের খামার দেখলাম, অথচ আর অল্প কিছু সময় ব্যয় করলে, শ্রমিকদের সাথে কথা বললে, অনেক বিষয় জানা হত, এতটুকু দায়-অনুভব থাকা বোধহয় দরকার।

একটু ভাবলেই বোঝা যায়, কেউ এভারেস্টে উঠলে তাতে সভ্যতা একটুও এগোয় না আর? বরং এভারেস্টের কিছু ক্ষতি হয় তাতে। পাহাড়-জঙ্গলে বেশি মানুষ ঘন ঘন যাওয়া মানে আসলে জীব বৈচিত্রের ক্ষতি করা।

তাহলে ক্ষতিটা পোশাতে হবে না? শুধু ঢাকা শহরে নয়, ঢাকার আশেপাশের কোনো নদীর দিকেও তাকানো যায় না, নবীনগর ঢাকা থেকে বেশ দূরে, সেখানকার বংশী নদীও বুড়িগঙ্গার মত কালো। এগুলো চোখে পড়বে না, এগুলোর জন্য কোনো কথা থাকবে না, অন্তত চলতি পথেও? তাহলে সে ভ্রমণের মূল্য কি?

পাল পাড়ায় যাব, হাড়িগড়া দেখব, তাদের বিচিত্র জীবন দেখে মজা নেব, কিন্তু তাদের সুবিধা-অসুবিধা জানব না! তাহলে বিষয়টি কি চিড়িয়াখানায় জন্তু-জানোয়ার দেখার মতো হেয়ে গেল না?

সেন্টমার্টিন গিয়ে শুধু উপভোগ-ভোগ করব, কিন্তু অনুভব করব না ওটির প্রাণ টিকে থাকছে কিনা, এটা হয়? পারবেন মানুষের ক্ষেত্রে এমন করতে? পারব আমি আপনার সাথে এমন করতে? আপনাতে বিলীন হব সুখে, কিন্তু আপনার ভাল-মন্দ জানব না! মেনে নেবেন আপনি তা?

Next Post

বাঁচা মরা ।। খালেদ মুহিউদ্দীন

বেঁচে থাকাটা যেন কিরকম। লোভ তাপ আর ঘিনঘিনে। যুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধ, শান্তি নিয়ে বিশ্বযুদ্ধ। সবে নিয়ম চায়, তার নিয়ম শুধু। তার জমিতে কেউ হাল, বাকিরা চাষ আগাছা বাছতে হবে, আইল অটুট। শিখেছে না শিখিতে। আঁধারেই আলো কাকে যেন বাঁচায়। কে যেন মরে যায়। কয়েকবার মরেছে কালও মরবে বাহাদুরের বাদুরের আর […]
ইনডেপেনডেন্ট টেলিভিশন