গ্রামের মানুষ আপনাদের গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার এখনই সময়

follow-upnews
0 0

গ্রামের মানুষ এবার একটু নড়েচড়ে বসতে পারেন। সামনে যে একটা অর্থনৈতিক ধাক্কা আসবে —এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই করোনা যদি দীর্ঘায়িত হয় (হবার সম্ভবনাই বেশি) তাহলে মানুষ গ্রামমুখী হবে (যাদের সে সুযোগ আছে), একদল শ্রমিক যে গ্রামে ঢুকবে বা অলরেডি অনেক ঢুকেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কারণ, বাংলাদেশে তো অবশ্যই, এবং বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার সংকুচিত হবে। 

এমনিতেই শহর থেকে গ্রামে গিয়ে থাকার কারণে গ্রামের সম্পদের ওপর চাপ বাড়বে, পাশাপাশি যেহেতু খাদ্যপণ্য আমদানী বিঘ্নিত হবে, তাই শহরের মানুষকে খাদ্যপণ্যের জন্য প্রধানত দেশের গ্রামগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। এ অবস্থায় গ্রামের মানুষের প্রস্তুতি নেওয়ার এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নেমে পড়ার এখনই সময়।

প্রতি ইঞ্চি জায়গা ব্যবহার করেন। নেট ঘেটে একটু পড়াশুনা করেন, তাহলে জানতে পারবেন ছায়া জায়গায় কী ধরনের ফসল ফলে, ফলে কোনো জায়গায় অব্যবহৃত থাকবে না। দক্ষিণ অঞ্চলের দশজেলা ফসল হিসেবে প্রধানত সুপারী, নারকেল এবং মাছের ওপর নির্ভরশীল। মনে রাখতে হবে, সুপারী কিন্তু কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয়, তাই আগামী বছরগুলোতে সুপারীর দাম যে খুব কমে যাবে, তা একরকম নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

যাদের সামার্থ আছে তারা সুপারি বাগানে কাগজী লেবু গাছ লাগায়ে দিতে পারেন, কাগজী লেবু ছায়া জায়গাতেও ফলে। সুপারী বাগানে হলুদ চাষও করা যায়, তবে এ মুহূর্তে হলুদ চাষ খুব বেশি কাজে আসবে না। কিছু না হোক— বাগানের বন জঙ্গল এ বছর আর ছাপ করার দরকার নেই, বরং বন্য শাকপাতা গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখুন, ওগুলো দুর্দিনে আপনাকে কয়েক মাসের খাবার যোগাবে। ডুমুর, কচু শাক, ঢেঁকি শাক, থানকুনি পাতা, ছাচি শাক ইত্যাদি নানান প্রকার শাকপাতা গ্রামের বাগানে আগানে এমনিতেই ফলে, পারলে সেগুলোর যত্ন নিন। গরুর গোবর বাগানে ছড়িয়ে দিন।

ডাব বেঁচে ভালো লাভ হয় ঠিকই, তবে এ বছর আর ডাব বেঁইচেন না। ডাব বা নারকেল এগুলো নিজেদের অনেক খাওয়া লাগতে পারে। নারকেল দিয়ে তেল বানিয়ে রাখুন, সময় বেশি খারাপ হলে নারকেল তেলের রান্নাও খাওয়া লাগতে পারে। নারকেলের তেল অন্য তেলের তুলনায় কম ক্ষতিকর, ফলে একটু গন্ধ লাগলেও নারকেলের তেলের রান্না খাওয়া অভ্যেস করতে পারেন। ভারতের কেরালা রাজ্যের মানুষ নারকেল তেল দিয়ে রান্না করে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লে মাটির প্রদীট বানিয়ে তাতে সলতে দিয়ে নারকেল তেলে আলোও জ্বালানো লাগতে পারে।

ছোটছোট কিছু হাঁস মুরগীর বাচ্চা কিনে পুষতে শুরু করেন। ওগুলো বড় হলে খেতে পারবেন, বেঁচতেও পারবেন। শহরের অনেক মানুষের কাছেই টাকা থাকবে, এবং গ্রামের কিছু মানুষের হাতেও তারা দাম যাই-ই হোক খাবার খুঁজবে। হাতে টাকা থাকলে হাট থেকে ছোট্ট একটা বকনা বাছুর কিনে ফেলুন, ওটা বড় হলে আপনাকে দুধ দেবে, বা বিপাকে পড়লে বেঁচে ফেলতে পারবেন। 

ছোটখাট পুকুর থাকলে সেগুলোকে এখনই মাছ চাষের উপযোগী করে ফেলুন। আপনার যদি জায়গা নাও থাকে তাহলে রাস্তার পাশে কচু ঘেচু গাছ লাগিয়ে দিন, দুর্দিনে কে খাবে সে হিসেব করার দরকার নেই। উদাহরণ তৈরি করুন। ফালতু খরচ এখনই বন্ধ করুন। বাচ্চার জন্য চিপস্ কেনা, বা কোক টোক কেনা, —এসব বন্ধ করুন। 

বাগানের আজেবাজে গাছ কেটে পর্যাপ্ত জ্বালানি কাঠ বানিয়ে রাখুন। সৌন্দর্য এই মুহূর্তে দরকার নেই, গোলাপ বাগানটাকে এবার পেঁপে বাগান বানিয়ে নিন। বাড়ির উঠানটাতেও সবজি চাষ করুন। গ্রামে এখনও পানির উৎস আছে। বারমাস ফলে এরকম অনেক সবজিই উঠানেই চাষ করা যায়, সেগুলো চাষ করুন। এক কথায় নিজের বাড়িটিকে ঘিরে একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলুন। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করুন। 

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়— খেয়াল রাখবেন কোনোভাবেই যেন আপনার স্ত্রী এ সময়ে গর্ভবতী না হয়ে পড়ে। তাহলে কিন্তু বিশাল বিপদে পড়ে যাবেন। অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন, অবশ্যই কনডম ব্যবহার করুন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে এখন শুধু কাজ আর কাজ করুন, শেয়ানা ছেলে-মেয়ে থাকলে সেগুলোও কাজে লাগান। স্কুল-কলেজ তো বন্ধই আছ, কবে খুলবে তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। মরার আগে সবাই একসাথে একবার বাঁচার চেষ্টা কইরা যান। 

Next Post

গল্পপাঠ: সত্যজিৎ রায়ের তারিণীখুড়ো ও বেতাল // বিক্রম আদিত্য

অনেকেই জানে না যে আমার অন্যতম প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায়। সবাই তার অমর সৃষ্টি ফেলুদা’র প্রেমে হাবুডুবু খায়। কেউ কেউ প্রফেসর শঙ্কু পড়ে তার ভক্ত। কিন্তু তার যে আরও অসাধারণ অনেক গল্প রয়েছে সে খবর রাখে না অনেকেই। আমি সেসব গল্পের বিশাল ভক্ত। সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম অমর সৃষ্টি তারিণীখুড়ো। বাস্তব […]
বিক্রম আদিত্য