শ্রমিকের চর্বি পুড়িয়ে এরা টাকার কুমির হয়েছে // আলী আকবর টাবী

follow-upnews
0 0

কর্মজীবনের শুরুতে একটি সুইজারল্যাণ্ডের কোম্পানীর (এসজিএস) মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে পড়ি । এক সময় আমার দুই অনুজপ্রতিম বন্ধু বুলবুল ও তুহিন সহ গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করি। আমাদের একটি ফ্যাক্টরী ছিল। সঠিক সময়ে শিপমেন্টের জন্য প্রায় সারা বছরই ওভারটাইম করানো হত। ওভারটাইমের জন্য আমরা নাস্তা দিতাম ডিম, কলা ও পাউরুটি। এক সময় খেয়াল করলাম পুরুষ শ্রমিকরা নাস্তা ফ্যাক্টরির ভেতরে খেলেও নারী শ্রমিকরা নাস্তা না খেয়ে বাসায় নিয়ে যায়। এতদিনে আমরা কিছুটা মালিকের চরিত্র রপ্ত করে ফেলেছি। নাস্তা না খেয়ে অসুস্থ হলে তো আমাদের উৎপাদন ব্যহত হবে। তাই আইন জারি করে দিলাম— নাস্তা বাসায় নেওয়া যাবে না। পরদিন চেকার একজন নারী শ্রমিককে সাথে নিয়ে এসে বললো, স্যার, এরা সবাই নাস্তা বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম আইন মানছো না কেন? জবাবে সে বললো, স্যার আমি মা, খাওয়ার সময় আমার অভুক্ত সন্তানের কথা মনে পড়ে যায়, তাই খেতে পারি না। বাসায় যেয়ে একসাথে ভাগ করে খাব। চোখের সামনে ভেসে উঠলো নিজের ছেলের ছবি। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না, সবাইকে ছেড়ে দিতে বললাম।

খুব কাছে থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন বৃত্তান্ত দেখার সুযোগ ঘটেছে। এই শিল্পে আশি ভাগই নারী শ্রমিক। এদের সাথে আলাপ করে জেনেছি, ভোর চারটায় এরা ঘুম থেকে উঠে স্বামী এবং সন্তানদের জন্য খাবার তৈরী করে নিজে প্রস্তুত হয়ে সাতটার সময় বাসা থেকে রওনা দেয়। সারাদিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে রাত আটটায় ফ্যাক্টরি ছুটি হলে নয়টায় বাসায় ফেরে। রান্নাবান্না করে, খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমাতে ঘুমাতে বারোটা একটা বেজে যায়। চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর মাত্র তিন চার ঘণ্টা ঘুমায়! এভাবেই রক্ত পানি করে এদেশে ডলার আসে। ডলার আবার চলে যায় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মালয়েশিয়ায়। গড়ে ওঠে বেগম পাড়া। এদের শানসৈকত দেখে সেসব দেশের সমাজপতিরাও অবাক হয়ে যায়। এরা শপিং করে হংকং সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশের শপিং মলগুলোতে। ত্রিশ বছর আগে দেখেছি, যারা সতেরো আঠারোটা মেশিন দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তারা এখন বিশাল গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক। কেউ কেউ আবার মন্ত্রীও বটে। এই উলম্ফনের পেছনে আলাদীনের কোনো চেরাগ ছিল না।  শ্রমিকের বেঁচে থাকার দায় এবং দামে এরা  হয়েছে টাকার কুমির।

ত্রিশ পয়ত্রিশ বছরে শ্রমিকদের চর্বি পুড়িয়ে এরা কামিয়েছে অঢেল। অথচ বিশ্বের এই মহাদুর্যোগে তারা শ্রমিকদের দুমাসের বেতন দিতে নারাজ। এখন অনেক ফ্যাক্টরি লে-অফ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ আইনের ফাঁকে বেতনের অর্ধেক টাকা তারা শ্রমিকদের দিতে চায়। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার এ বিষয়ে সতর্ক না হলে যে শ্রমিক বিস্ফোরণ ঘটবে তা সমগ্র দেশে করোনা সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। দেশ ও জাতিকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে এখনই আগুয়ান হতে হবে।


আলী আকবর টাবী

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

Next Post

করোনার এ দুর্যোগকালে চিকিৎসা সহায়তা দিতে নির্মূল কমিটির চিকিৎসক প্যানেল গঠন

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী লক ডউন চলাকালে ঘরে থেকে অসুস্থজনের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহয়তা কমিটি। কোভিড সংক্রমণের এই দুর্যোগ মুহূর্তে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণের সুবিধার্থে আমাদের কমিটির উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ১০৮ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি […]
নির্মূল কমিটি