“সবকিছু নষ্টদের অধিকারে গেছে” // হাসিনা খাতুন

follow-upnews
0 0

গতিশীল ট্রেনের জানালার পাশে বসে জীবনানন্দের কবিতা শুনতে পারলে কেমন জানি সুখি সুখি লাগত আগে৷ এই মুহূর্তে আমি তাই করছি৷ তথাপি কপালে একরাশ স্পীডব্রেকার৷ আজকাল আমিও নৈরাশ্যবাদীদের ন্যায় অধিকাংশ সময় নিজের নিয়তীরে দুষি৷

গত ১৩.০৯.১৭ তারিখে আমার কর্মস্থল পরিবর্তন হয়েছে৷ রাজশাহী রেলভবনের ঝকঝকে সাদা বিল্ডিং-এর দ্বিতীয় তলায় আমার বর্তমান অফিস রুম৷ রেল পরিবারে পদার্পণের পর থেকেই এই বিল্ডিংটা নিয়ে আমার অগাধ কৌতুহল৷ যদিও কারো কাছে আমি ডকুমেন্টসহ কোনো তথ্য পাইনি, তবে কিছু প্রবীন কর্মীর কাছে শুনেছি এটা নাকি দশতলা বিল্ডিং-এর ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা করার পর আর কাজ হয়নি। ফাটল ধরায় বুয়েট থেকে টিম এসে পরীক্ষা করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়৷ সেটাও বছর ত্রিশেক আগের ঘটনা৷

ঠিক এই জায়গায়টিতে বাঙালি হিসেবে আমি নিজেরে দুর্ভাগা মনে করি৷ কেননা ব্রিটিশ বেনিয়ারা আমাদের রক্ত শোষণ করেছে কিন্তু চট্টগ্রামে প্রাসাদপ্রতীম সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং গড়ে দিয়ে গেছে, যা এখনো হাজার জনতার হৃদয় কাড়ে৷ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস স্বাধীনতার মাত্র বছর পনের পর এদেশের সোনার ছেলেরা দশতলা ফাউন্ডেশন নির্মাণ শুরুর দ্বিতীয় তলাতেই অসংখ্য ফাটল দেখা দেওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় পয়ত্রিশ বছরেও এর দায় দায়িত্ব কেউ নেয় না এবং কোনো সুরাহা হয় না৷

এখন পর্যন্ত কারো কাছে থেকে রাজশাহী রেলভবনের ভূতভবিষ্যত জানতে না পারলেও রাজবাড়ীর দশতলা ভবনের নকশা দেখে কিছুটা খুশি হলাম৷ সর্বান্তকরণে প্রত্যাশা থাকবে অন্তত এটা যেন ভালভাবে তৈরি হয়৷

এবার আসি নতুন অফিস কক্ষের বিষয়ে৷ অফিসটা জেনারেল ম্যানেজারের–পশ্চিমের হলেও সিঁড়ি থেকে বেশ কিছুদূর পর্যন্ত টাইলস্ বসিয়ে হঠাৎ করে এজিএম অফিস কক্ষের সামনে থেকে এর পরের অংশটুকু অজানা কারনে আর টাইলস বসানো হয়নি৷ সবচেয়ে মর্মান্তিক যে বিষয়, পুরো ফ্লোরে ছয়জন অ্যাসিট্যান্ট অফিসার আর দুজন ডিভিশনাল অফিসারের জন্য একটামাত্র ওয়াশরুম৷ যে বারান্দা দিয়ে ওয়াশরুমটাতে সহজে যাওয়া যেত তা পার্টিশন দিয়ে নামাজঘর (পুরুষদের) বানানো হয়েছে ৷ যদিও সেখান থেকে মাত্র গজ ত্রিশেক দূরে সুসজ্জিত মসজিদ রয়েছে৷

এখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এই আটজন অফিসারকে এজিএম অফিসের অন্তত তিনজনের চেয়ার সরিয়ে জায়গা বের করে যেতে হয়৷ আমার কাছে কারো সামনে দিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার বিষয়টি অস্বস্তিকর৷ তারপর আবার যদি কাউকে বলতে হয় আপনি সরে জায়গা করে দিন আমি যাবো, তাহলে তো কথাই নেই৷

হুমায়ূন আজাদ স্যার বেঁচে থাকলে হয়ত তাঁর “সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে” কবিতাটি এডিট করে সবকিছু নষ্টদের অধিকারে গেছে করতেন ৷


হাসিনা খাতুনহাসিনা খাতুন

Assistant General Manager/West

at Bangladesh Railway (BR)

Next Post

এক পশলা লজ্জাবৃষ্টি নামুক এই নষ্ট নগরে

এক পশলা লজ্জাবৃষ্টি নামুক এই নির্লজ্জ নগরে, লজ্জাস্নান করুক পালকহীন কাকের দল যারা নিরন্নের হাত থেকেও ছো মেরে নেয় রুটি, সহজাত কা কা ডাকের বদলে যারা ডাকে কুহুকুহু, তাদের মুখ থেকে বের হয় ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ। এক পশলা লজ্জাবৃষ্টি নামুক এই নির্মম নগরে, নেড়ি কুত্তার দল ভিজুক রক্ষকের উর্দিতে ভক্ষক যারা, […]
কবি সোহরাব রুস্তম