ইতিহাসের পাঠ : মুক্তির মঞ্চ-১

follow-upnews
0 0

ইউরোপ আমেরিকা এমনি এমনি ইউরোপ আমেরিকা হয়ে ওঠেনি নিশ্চয়ই। নিঃসন্দেহে তারা এখন তুলনামূলকভাবে উন্নত এবং ‘সভ্য’। শুধু সম্রাজ্যবাদ দিয়ে এভাবে উন্নতির শিখরে পৌঁছানো যায় কি? এটা আমাদের মতো কথিত তৃতীয় বিশ্বের মানুষের এক ধরনের অনুধাবনকৃত ন্যারেটিভ যে, তারা শুধুই সম্রাজ্যবাদী এবং সম্রাজবাদই তাদের সকল উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি।

সত্য আসলে কি তাই? তাদের এই সভ্যতারও লম্বা একটা ইতিহাস আছে। আজকে যেমন আমাদের দেশে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে, ধর্মের অবমাননাকারী আখ্যা দিয়ে শুভবোধসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করা হয়, কয়েক শো বছর আগে ইউরোপ আমেরিকায়ও তাই করা হতো।

ইউরোপের বর্তমান সভ্যতার পিছনে অনেক একক মানুষের অবদান যেমন রয়েছে, একইসাথে অনেক সঙ্ঘেরও অবদান আছে। তখন সমমনারা একত্রিত হয়ে সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা করতেন, এবং সেইমতো কাজও করতেন।

১৮২০-১৮৩০ সালের দিকে আমেরিকায় ‘ট্রান্সসেনডেন্টালিজম’ নামে একটি সঙ্ঘ (মতবাদ) বিস্তার লাভ করে। এটি ছিল ইউরোপের ‘রোমান্টিসিজম’, ডেভিড হিউমের ‘সন্দেহবাদ’ এবং ইমানুয়েল কান্টের ‘ট্রান্সসেনডাল’ মতবাদের একটি মিউটেশন। ইন্ডিয়ান ফিলসফি থেকেও ট্রান্সসেনডেনটালিস্টরা তত্ত্ব গ্রহণ করেছিল বলে জানা যায়।

আমেরিকায় তখনও চার্চের একচ্ছত্র আধিপত্য। চার্চের বাইরে গিয়ে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করার সুযোগ তখন খুব একটা ছিল না। বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য রালফ ওয়াল্ডো এমারসন, হেনরি ডেভিড থরো, মার্গারেট ফুলার প্রমুখ অনুভব করলেন শুধু বিচ্ছিন্ন এবং ব্যক্তিগত চর্চার মাধ্যমে চার্চের আধিপত্য থেকে বের হয়ে এসে মানব মুক্তি ঘটানো সম্ভব নয়।

তারা সঙ্গবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনিয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং গঠন করেছিলেন ‘ট্রান্সসেনডেনটালিস্ট ক্লাব’। প্রথমে ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা ফ্রেডেরিক হেনরি হেজের নামানুসারে ক্লাবটির নাম ছিল— “হেজেস ক্লাব”

ক্লাবটির নাম “ট্রান্সসেনডেনটালিস্ট” দিয়েছিল মূলত জনগণ। এটি প্রচলিত অর্থে কোনো ক্লাব ছিল না যে, তারা সম্মিলিতভাবে বিশেষ কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে সমমনারা একত্রিত হতেন, এতে কাজের প্রতি প্রত্যেকের কমিটমেন্ট তৈরি হতো, এবং সাহস-উৎসাহ বেড়ে যেতো।

এ সম্পর্কে হেজ লিখেছেন— “There was no club in the strict sense… only occasional meetings of like-minded men and women”

ট্রান্সসেনডেনটালিস্টদের লেখাগুলো তখনকার সাময়ীকপত্রগুলো ছাপত না, বা ছাপতে সাহস পেতো না। এই অবস্থায় ক্লাব নিজস্ব সাময়ীকপত্র বের করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই সময় ব্রাউনসন নামে এক ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন, যিনি তখন “বোস্টন কোয়র্টালি রিভিউ” ছাপতেন। এই পত্রিকাটিকে তিনি ক্লাবের কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন, তবে হেজ, পার্কার এবং এমারসন প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।

১৯৪০ সালে “দ্যা ডায়াল” নামে ক্লাবের নিজস্ব পত্রিকা বের হয়। এমারসন পত্রিকাটির জন্য “Journal in a new spirit” শিরোণামে ভূমিকা লিখেছিলেন। অর্থের অভাবে ১৮৪৪ সালে “দ্যা ডায়াল” বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সভ্যতা এবং মানব মুক্তিতে ট্রানসেন্ডালিস্টদের অবদান রয়ে যায় ।

-চলবে

Next Post

বাংলাদেশের গণহত্যার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিষয়ক আলোচনা সভা