অফিস করছেন দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত আ.লীগ নেতা

follow-upnews
0 0
বামনা উপজেলা
ছবিঃ মোঃ সাইতুল ইসলাম লিটু

দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েও দায়িত্ব পালন করছেন বরগুনার বামনা উপজেলার চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইতুল ইসলাম লিটু।

মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদও শেষ হয়েছে ৪ মাস আগে। তারপরও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে ফাইলে স্বাক্ষর দেওয়া পুরোপুরি অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টি নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে, এমনটাও বলছেন তারা। এদিকে দুর্নীতির দায়ে লিটুর বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার কার্যক্রম থমকে আছে রহস্যজনক কারণে। ২০২১ সালের ৬ জুন করা ওই মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দেয়নি দুদক। তার স্ত্রী সারাজাহান কল্পনার ব্যাংক হিসাবেও মিলেছে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য।

২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়নে প্রথমবার বামনার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাইতুল ইসলাম লিটু। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে ওঠে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ।

নলকূপ দেওয়ার কথা বলে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নলকূপ না দেওয়া, এডিপির বরাদ্দে সম্পন্ন হওয়া ঠিকাদারি এবং অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাছ থেকে ঘুস গ্রহণ, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ লোপাটসহ কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বরিশালের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামানকে দেওয়া হয় অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব।

চিঠি পাওয়ার পর অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট লিটুর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠায় বিভাগীয় প্রশাসন। রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিপুল অর্থ আত্মসাতের সত্যতা নিশ্চিত করে তারা।

রিপোর্ট পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সাইতুল ইসলাম লিটুকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাকে অপসারণ এবং পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের পাশাপাশি লিটুর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত করেন দুদকের পটুয়াখালী কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসাইন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৬ জুন লিটুর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন তিনি।

মামলায় বলা হয়, দায়িত্ব পালনকালে ২০১৫ থেকে ২০১৬-এর মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু। এ সময়ে বামনা উপজেলায় নলকূপ দেওয়ার কথা বলে ৫০০ জনের কাছ থেকে মাথাপিছু ১২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কাউকেই নলকূপ দেওয়া হয়নি। দণ্ডবিধির ১৬১/৪২০ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ১৮ মাস আগে করা এ মামলার কোনো তদন্ত রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দেয়নি দুদক।

দুদক পটুয়াখালীর উপপরিচালক মামুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে কিছু বলতে পারব না। মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন বলেন, বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত আছি। যতদূর জানি ওই মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের এসব অভিযোগের পাশাপাশি লিটুর স্ত্রী সারাজাহান কল্পনার ব্যাংক হিসাবেও মিলেছে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য। বিশেষ করে লিটুর বিরুদ্ধে যে সময়কালে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে দুদক, ঠিক সেই সময়ে তার স্ত্রীর সোনালী ব্যাংক বামনা শাখায় চলেছে বিপুল টাকা আসা-যাওয়ার স্রোত। সংগৃহীত ব্যাংক লেনদেনের প্রমাণাদি অনুযায়ী, লিটু প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকে ওই চলতি হিসাবটি খোলেন পেশায় গৃহবধূ তার স্ত্রী কল্পনা। ২০১৫ সালের ২৫ মে হিসাবটি খোলার পরপরই শুরু হয় অস্বাভাবিক লেনদেন। মাত্র ২০ মাসে শেষ ৪ সংখ্যা ০৯৬৯-এর নম্বরের ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৫৯০ টাকা। লিটুর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ এবং মন্ত্রণালয় ও দুদকের তদন্ত শুরু হওয়ার পর টাকা জমা দেওয়া ও উঠানো বন্ধ হয়ে যায় এই অ্যাকাউন্টে।

বামনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বলেন, স্থগিতাদেশ যদি শেষ হয়ে থাকে এবং উনি (লিটু) যদি আর কোনো ব্যবস্থা নিয়ে না থাকেন কিংবা মন্ত্রণালয় যদি তাকে পুনর্বহাল না করে, তাহলে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বৈধ হবে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উচ্চ আদালত পক্ষে রায় দিয়েছে দাবি করে সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বরখাস্ত আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আমাকে আবার চেয়ারম্যান পদে বহাল করেছেন। এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আইনজীবী মাসুদের কাছে আছে। আমি এনে আপনাকে দিচ্ছি। এরপর ৩-৪ দিনেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এই প্রতিনিধির ফোনও আর ধরেননি তিনি।


খবরটি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত হয়

Next Post

ধারাবাহিক উপন্যাস: রহস্য

জবেদ আলী মুরগীর ব্যবসায়ী হলেও জীবন সম্পর্কে তার অনুভূতি খুবই তীক্ষ্ণ। একুশ বছর আগে চব্বিশ বছর বয়সে যখন সে বিয়ে করে তখন সে মুরগীর ব্যবসায়ী ছিলো না। সে তখন বিএ পাস বেকার। বেকার হলেও বাপের একমাত্র সন্তান হিসেবে খাওয়া পরার সমস্যা ছিলো না। জায়গাজমির আয় উপার্জন দিয়ে ভালোই চলছিলো। পিতা […]
উপন্যাস