কালজয়ী গান: “অজস্র শুভ্র গোলাপে ভরা এই বিষন্ন রোববার”

follow-upnews
1 0

গীর্জার প্রার্থনা শেষে

বহুক্ষণ তোমার অপেক্ষায় ছিলাম,

স্বপ্নের পিছনে ছুটে ছুটে

এক রোববার ভোরে আমার বিষন্ন ক্যারাভান

ফিরে এলো তোমাকে ছাড়াই।

প্রিয়,

সেই থেকে প্রতিটি রোববার বরাবরই বিষন্ন এমন।

প্রিয়স্ব আমার,

সেই শেষ রোববারে তুমি আসবে তো?

আমার শবাচ্ছাদন পরিহিত শরীর

যাজকের মন্ত্রের সুরে সুরে বিমোহিত হয়ে

অবসাদে ঘুমাবে কেবল কালো কফিনের খোলে।

পুস্পাশোভিত কৃষ্ণচূড়া গাছ কুড়ি

ছুড়ে ছুড়ে দেবে

কফিনের ডালা আর আসবার পায়ে চলা পথে,

যে পথের সর্বশেষ যাত্রী হয়তোবা তুমি!

আমি আরেকবার তোমাকে

দেখবার জন্য মেলবো দুচোখ।

আমার সেই বুভুক্ষু চাহনিতে

তুমি ভয় পেয়ও না।

দিগন্তের সীমানা পেরিয়ে গেলেও,

এমন কি সেই শেষের বিষন্ন রোববারেও

আমি তোমার জন্য রেখে যাব উজ্জ্বল আশির্বাদের রূপালী অভ্র।


মূল: Gloomy Sunday by Laszlo Javor

ভাবানুবাদ: শাহিদা সুলতানা


পাদটীকা: Gloomy Sunday  গানটির মূল রচয়িতা হাঙ্গেরিয়ান গীতিকার, পিয়ানিস্ট Rezső Seress। ১৯৩৩ সালে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে এই গানটি লেখা হয়। এবং তখন ইউরোপ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত, যুদ্ধংদেহী এবং নানান ধরনের বৈষম্যে জর্জরিত। সেরেস গানটি লিখেছিলেন সেইসময়ের সার্বজনীন হতাশাবাদ থেকে। গানটির শিরোনাম ছিল প্রথমে Vége a világnak (The world is ending)।

Laszlo Javor নতুন করে গানটি লেখেন, এব নাম দেন  Szomorú vasárnap (Sad Sunday)। Laszlo Javor গানটি প্রায় একই সময়ে লিখেছেন। জাভোর গানটি লিখেছেন ব্যক্তিগত হতাশাবাদের জায়গা থেকে, তবে ব্যক্তিগত হলেও সেটি সার্বজনীন, কারণ, তিনি তখনকার দিনের প্রেমের শ্বাসত একটি রূপ গানটির মধ্যে ধারণ করেছিলেন।

আসলে গানের কথা শুধু নয়, সুর গানটিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে Rezső Seress এর লেখা গানটি Laszlo Javor এর Gloomy Sunday গানের প্রভাবে আড়ালে চলে যায়। জাভোরের গানটি হাঙ্গেরিতে প্রথম রেকর্ড হয় ১৯৩৫ সালে Pál Kalmár-এর কণ্ঠে। ইংরেজিতে গানটি প্রথম রেকর্ড হয় ১৯৩৬ সালে Hal Kemp এর কণ্ঠে।

মূলত ১৯৪১ সালে আমেরিকান জাজ মিউজিশিয়ান Billie Holiday গানটি নতুন করে গাওয়ার পর থেকে সারাবিশ্বব্যাপী এটি জনপ্রিয় হয়। দাবী করা হয়, এই গানটি শুনে অনেক লোক বিষন্নতায় আক্রান্ত হন এবং আত্মহত্যা করেন। অন্যভাবে বলা হয়, অনেক বিষন্ন মানুষ Sad Sunday শুনে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেরেস নিজেও আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানা যায়।

তবে এখানে একটি দ্বন্দ্ব আছে। ঠিক কোন গানটি দ্বারা মানুষ বিষন্ন হতেন– কারণ, সেরেস এবং জাভোর দুজনেই গানের কথায় মানবতার করুণ সুর ধারণ করেছেন। বিবিসিতে সেরেসের গানটি ২০০২ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল।

দুটি গানই অসম্ভব হৃদয় ছোঁয়া— জাভোরের গানটিতে রয়েছে সুগভীর ব্যক্তিগত বিষন্নতার করুণ সুর; অপরদিকে সেরেসের লেখা, সুর করা এবং গাওয়া গানটি  সার্বজনীন, সামাজিক  এবং রাজনৈতিক হতাশাবাদকে প্রশ্রয়দানকারী।

এখানে প্রথম ভিডিওটিতে লাজলো জাভোরের লেখা বিলী হলিডের কণ্ঠে ‘বিষন্ন রবিবার’। এরপরের ভিডিওটি অরিজিন্যাল গানটি– যেটি হাঙ্গেরিয়ান শিল্পী রেজো সেরেস লিখেছিলেন, এবং নিজেই সুর করে পিয়ানোতে গিয়েছিলেন।


পাদটীকাটি যোগ করেছেন দিব্যেন্দু দ্বীপ

Next Post

ঈদ যাত্রা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিবৃত্ত (প্রথম পর্ব) // হাসিনা খাতুন

পশ্চিমাঞ্চলে ঈদের ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছিল গত পঁচিশ তারিখ থেকে৷ পঁচিশ থেকে একত্রিশ পর্যন্ত মোট সাতদিন আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল রাজশাহী স্টেশনের এসি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকেট বিক্রী তদারকি করা৷ হৃদয়বান নাকি হৃদয়হীন ভেবে কর্তাব্যক্তিগণ আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা বুঝে উঠতে পারিনি৷ তবে দাঁড়িয়ে পায়ের গোড়ালি ব্যথার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার […]
হাসিনা খাতুন