কাহারোলে কিশোর ধন্যরামকে পিটিয়ে হত্যা

ধন্যরামকে পিটিয়ে হত্যা

ধন্যরামকে পিটিয়ে হত্যা

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বিরলী গ্রামের ধন্যরাম রায় (১৬) নামে এক কিশোরকে মর্মান্তিকভাবে পিটিয়ে অন্ডকোষ নষ্ট করে হত্যা করা হয়, এরপর লাশ ভুট্রা ক্ষেতে ফেলে রেখে হত্যাকারীরা চলে যায়।

অভিযোগ হচ্ছে, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে তারাপুর গ্রামের ফজলের ৪ ছেলে শাহজাহান, আবুল কালাম, জব্বার ও আবুল বাশার সহ তাজুল ইসলাম ও তার ছেলে আনু ।

পূর্বে শাহজাহানরা তারাপুর গ্রামের শামসুল, কাদের ও তাদের (অজ্ঞাত) মাকে হত্যা করার অপরাধে দণ্ডিত । উল্লেখ্য, শাহজাহানের আবুল হোসেন নামে এক ভাই জেএমবি সদস্য হিসেবে ২/৩মাস পূর্বে গ্রেপ্তার হয়।

ধন্যরাম দিনাজপুর

গত ২ জুন শুক্রবার বিকাল অনুমান ৪ঘটিকার সময় পারনা বালার আমন ধানের বিচন ক্ষেতে তারাপুর গ্রামের দাঙ্গাবাজ শাহজাহান ইচ্ছাকৃতভাবে ও যোগসাজশে গরু দিয়ে বিচন ক্ষেত খাওয়ালে ও মারলে উক্ত ক্ষেতে পারনা বালা গরু আনতে যায়। এমন সময়ে শাহজাহান পারনা বালাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির উদ্দেশে কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করলে পুত্র ধন্যরাম রায় ঘটনাস্হলে গিয়ে মাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু শাহজাহান ধন্যরামকে হত্যার উদ্দেশে বাঁশের খুটি দ্বারা আঘাত করার অপচেষ্টা করলে ধন্যরাম দৌড়ে বাড়ীতে ফিরে আসে।

কিছুক্ষণ পরে শাহজাহান(৩৪) ও ভাই আবুল কালাম(৪৩), জব্বার(৪৮), আবুল বাশার(৩৮) এবং মামা তাজুল ইসলাম(৫৫) ও মামাত ভাই আনু (৩০) দল বেধে হত্যার উদ্দেশে জোর করে তুলে নিয়ে যায় ধন্যরামকে। পারনা বালা হাত-পা ধরে কাকুতি মিনতি করেও রেহাই পায়নি।

পুরোনো ছবি দিনাজপুর ধন্যরাম

খুনিরা ধন্যরামকে তুলে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।

ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য শাহজাহানের চাচা শ্বশুর বর্তমানে ৪নং তাড়গাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি মৃত ধন্যরামের কাকা বিশুকে কাহারোল থানায় নিয়ে এসে গত ৩জুন তারিখে অপমৃত্যুর আবেদন করিয়ে নেন–মামলা নং-১৫, তাং- ০৩/০৬/১৭, সময়: সকাল ১১ঃ০৫।

অপরদিকে কাহারোল থানার এসআই সুরত চন্দ্র রায়(লাশ তদন্তকারী)-কে দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট রিপোর্ট লিখিয়ে নেয়।

শাহজাহানের চাচা শ্বশুর বর্তমান ৪নং তাড়গাঁও ইউপি চেয়ারম্যান অর্থের বিনিময়ে থানা প্রশাসন সহ সকল আইনী মহলকে দমিয়ে রাখার ও ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোপন সূত্রে প্রকাশ পেয়েছে।

বিবাদীরা প্রকাশ্যভাবে বলে বেড়াচ্ছে যে, যারা তাদের বিপক্ষে স্বাক্ষী দিবে ও লড়বে তাদের দশা মৃত ধন্যরামের মতোই হবে।

এস আই সুরত চন্দ্র রায় বলেন, আসলে আমাকে যা বলা হয়েছে তাই লিখতে হয়েছে। ধন্যরামের লাশের তদন্তে যাই সেখানে চেয়ারম্যান ৪নং ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম বলে যে ধন্যরাম নাকি গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, আমাকে যেভাবে উপরের কর্তারা নির্দেশ দেয় সেইভাবে লিখতে হয়েছে।

চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে ফোন করে জিঞ্জাসা করা হয় আপনি কীভাবে জানলেন যে ধন্যরাম গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছে, এই কথা বলা মাত্র সে প্রথমে অস্বীকার করে, তবে অনেক বার জেরা করার পর সে বলে ডাক্তার বলেছে যে সে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছে। তার জামাই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত -এই কথা শোনার পর সে উত্তেজিত হয়ে বলে, কে বলছে তার নাম বলেন আমি তাকে দেখে নেব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধন্যরামের মাকে যখন মারছিল ধন্যরাম এগিয়ে এসে মাকে রক্ষা করে তাদের সাথে ঝগড়া করে। বিকালে মাকে বলে বাজারে যায়। সেখান থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ভুট্রা ক্ষেতে পিটিয়ে অণ্ডকোষ ফাটিয়ে ধন্যরামকে হত্যা করা হয়।

“কাহারোল উপজেলার মেধাবীছাত্র ধন্যরামকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাসির দাবীতে আগামী ২৩জুন শুক্রবার সকাল ১০টায় কাহারোলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে, আপনারা দলে দলে যোগদান করে কর্মসূচি সফল করুন।” জানা গেছে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে। এই মানব বন্ধনের আয়োজন করছে রির্চাস এন্ড আম্পায়ারম্যন্ট অর্গানাইজেসন(রিও)দিনাজপুর, রংপুর বিভাগীয় হিন্দু মহাজোট, শারদাঞ্জলী ফোরাম দিনাজপুর, মাইনোরিটি ওয়াজ দিনাজপুর, কমিউনিষ্ট পাটি দিনাজপুর, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ কাহারোল উপজেলা, আওয়ামী ন্যাসনাল পাটি ন্যাপ দিনাজপুর, ও পূজা উর্যাপন পরিষদ কাহারোল দিনাজপুর।

কাহারোল থানার ওসি মুনসুর আলী ধন্যরামের মৃত্যূর ঘটনায় সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আসলে আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে আসলে সে কীভাবে মারা গেছে। কারণ, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। তিনি আরো বলেন, ধন্যরামকে যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সেখানকার ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়। ধন্যরামের ডেথ সার্টিফিকেটে কোনো তথ্য লেখা ছিল না যে তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রশ্ন করা হলে ডাক্তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

কাহারোল থানার ওসি মুনসুর আলী আরও বলেন, তাদের প্রতিবেশী এক পরিবারের গরু এসে ধন্যরামদের জমিতে ফসল নষ্ট করছিল, ধন্যরাম তখন গরুটাকে আটকালে ঐ পরিবারের সদস্যরা এসে ধন্যরমের মাকে মারতে থাকে ধন্যরাম এটা দেখে তার মাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে জব্বার, শাহাজাহান আলী, আনোয়ারুল ইসলাম আনু সাথে হাতাহাতি হয় ধন্যরামকে দেখে নেবে বলেও হুমকি দেয়।


সূত্র: বিডি পোস্ট