শুধু পুষ্টি উপাদান নয়, রান্নার তেলের ক্ষেত্রে স্মোক পয়েন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ কোন তেল কত তাপমাত্রায় ধোঁয়ার সৃষ্টি করে, অর্থাৎ পুড়তে শুরু করে। এদিক থেকেও তিলের তেল ভালো। তিলের তেলের স্মোক পয়েন্ট তিলের তেলের স্মোক পয়েন্ট ২৬৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। যা সরিষার তেলের ক্ষেত্রে ২৫০, এবং সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে যেটি ২১০। বোঝাই যাচ্ছে যে স্মোক পয়েন্টের দিক থেকেও তিলের তেল ভালো। বেশি স্মোক পয়েন্ট মানে এটি দ্রুত পুড়ে কার্সিনোজেনিক (ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান) উপাদান সৃষ্টি করবে না।
দক্ষিণ ভারতে রান্নায় ও আচার তৈরিতে ব্যপকভাবে ব্যবহার হয় এই তেল। এতে উচ্চমাত্রার ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। হালকা তেলে রান্নার জন্য এই তেল চমৎকার। তিলের তেল সুগন্ধি তেল, তাই খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে এই তেল।
প্রতিদিনের যেকোন রান্নার তেলের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে তিলের তেল। গবেষণায়র তথ্য মতে তিলের তেল গ্রহণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় না, বরং এ তেল রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
তিলের তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, তিলের তেলের ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন গবেষণায় থেকে জানা যায়, ডায়বেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় তিলের তেল অন্তর্ভুক্ত করার ফলে হুটহাট ডায়বেটিস বেড়ে যাওয়ার সমস্যা কমে যায় অনেকটা।
তিলের তেলে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে ভাল রাখতে কাজ করে। এ তেলে থাকা ৮২ শতাংশ আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড— সেসামল ও সিসামিন, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে সহায়তা করে। বিশেষভাবে তিলের তেলে থাকে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদরোগের প্রভাবকে দূরে রাখতে কাজ করে।
এই তেলে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়কে সবল রাখে। এছাড়া তিলের তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক এক খনিজ। হাড়ের রগ অস্টিওপোরোসিস রোধ করতে এবং হাড়ের সমস্যাজনিত বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতেও তিলের তেল উপকারী ভূমিকা রাখে।
প্রাচীনকাল থেকেই তিলের তেল মুখের স্বাস্থ্যের পরিচর্যায় ব্যবহৃত হয়। ‘অয়েল-পুলিং’ নামক দাঁতের পরিচর্যার এক বিশেষ পদ্ধতিতে বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই তেল। তিলের তেলে প্রদাহবিরোধী উপাদান দাঁত ও দাঁতের মাড়ির সমস্যাকে দ্রুত কমিয়ে ফেলে। মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি দাঁত ঝকঝকে করতেও তিলের তেল অত্যন্ত উপকারি।
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক
শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক সুস্থতাতেও অবদান রাখে তিলের তেল। বিশেষত মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে তিলের তেলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড।
খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চুলের পরিচর্যাতেও সমানভাবে ব্যবহার করা যাবে তিলের তেল। উপকারী এই তেল মাথার ত্বক এবং চুলে পুষ্টি জোগানোর সাথে চুলকে রোদের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি ও দূষণ থেকে রক্ষা করে।
খাঁটি তিলের তেল কোথায় পাবেন: সুহৃদ গ্রামোন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড কিছু খাঁটি তিলের তেল উৎপাদন করে থাকে। তবে যেহেতু খুব বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, তাই শুধুমাত্র ফুড কনজুমার ক্লাব মেম্বারদের মধ্যে সুহৃদ তেল সরবরাহ করে থাকে। এটা সমিতির মেম্বারশিপ নয়, কনজুমার মেম্বারশিপ। অর্গানিক ফুড কনজুমার ক্লাবের (OFCC) মেম্বার হতে যোগাযোগ করুন (০১৮৪ ৬৯ ৭৩২৩২)। এই মুহূর্তে সুহৃদ শুধু সীমিত আকারে ঢাকায় পণ্য সরবরাহ করছে মেম্বারদের মধ্যে।
মনে রাখবেন, আপনি একজন সাধারণ ক্রেতা নন, আপনি একজন দায়িত্বশীল ক্রেতা। আপনি শুধু নির্ভেজাল খাবার চাচ্ছেন না, কীভাবে সেটি নিশ্চিত হবে সেটি নিয়েও আপনি ভাবছেন। সুহৃদ আপনার টাকাটা পৌঁছে দিচ্ছে গ্রামোন্নয়ন সমিতির সদস্যদের মধ্যে, তারাই পণ্য উৎপাদন অথবা সংগ্রহ করছে। গ্রামের নারীদের সংগঠিত করে সুহৃদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক খাবারের উৎস এবং ঐতিহ্য।