পৃথিবীর বৃহত্তম বস্তিতে বাস করে দশ লক্ষাধিক লোক!

ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত ধারাভি এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি হিসেবে স্বীকৃত। আসলে শুধু এশিয়ার নয়, এটিই পৃথিবীর বৃহত্তম বস্তি। বাণিজ্য নগরী মুম্বাইয়ের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থান করছে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভি। ৫৫৭ একর (২.৩৯ বর্গ কিলোমিটার) জমিতে ১০ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। এই বস্তিটি ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে উদ্ভূত হয়েছিলো এবং এর বৈচিত্র্যময় এবং বহুসংস্কৃতির জনসংখ্যার জন্য পরিচিত।

এখানকার চামড়ার কাজ, মাটির কাজ, জামাকাপড, প্লাস্টিক রিসাইক্লিংজাত দ্রব্য ইত্যাদি শুধু মুম্বাই বা ভারত নয়, ছড়িয়ে পড়ে এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। গোটা মুম্বাই শহরের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এই ধারাভি বস্তিতে বসবাসকারী মানুষগুলির অবদান অনন্য। কাকভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এদের শ্রম নিংড়ে মুম্বাই হয়ে ওঠে আলোকোজ্জ্বল নগরী।

অথচ বস্তির এই মানুষগুলির বসবাস অন্ধকারে। সুস্থভাবে এক জনের চলবার মতো প্রশস্ত গলিও এখানে কম, মধ্য দুপুরেও বহু জায়গায় পৌঁছয় না সূর্যের এক বিন্দু আলো। পাশের নদী মজে এখন আবর্জনাময় নালা। প্রায়ই সেই নোংরা জল ঢুকে আসে বস্তির এক চিলতে ঘরের ভিতর। নেই পর্যাপ্ত পরিশুদ্ধ পানীয় জল, প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। শিশুরা প্রায়ই আক্রান্ত হয় টাইফয়েড, কলেরা, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি ব্যাধিতে। পুতিগন্ধময় এই পরিবেশে বস্তির মানুষগুলির গড় আয়ু কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ বছরে। (সূত্র: https://ganadabi.com)

এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি
মুম্বাইয়ে ফুঁটে উঠেছে পৃথিবীর এক ঘৃণ্য বাস্তবতা। একদিকে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি, অপরদিকে বিলাসিতার সর্বোচ্চ প্রদর্শন।

ধারাভি বস্তি আবার বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে, কারণ, ধারাভি বস্তি উচ্ছেদ করতে চাইছে বিজেপি সরকার। ইতোমধ্যে পুনর্বাসনের দায়িত্ব দিয়েও দিয়েছে আদানি গ্রুপকে। কিন্তু আদানি গ্রুপ মাত্র লাখ খানেক মানুষের বসবাসের একটি খসড়া তৈরি করতে পেরেছে। প্রস্তাব করা হয়েছ মুম্বাইয়ের পরিত্যক্ত আবর্জনার আঁস্তাকুড়ে দিনওয়ারে ভবন বানিয়ে এসব মানুষদের জায়গা দেওয়া হবে। কিন্তু দিনওয়ার মূলত মিথেন সহ বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ণ একটি বিষাক্ত অঞ্চল।

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বস্তির একটি মুম্বাই ইন্ডিয়াতে, আরেকটি পাকিস্তানের করাচিতে। বোঝাই যাচ্ছে— দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্রতা মানুষকে ঘায়েল করে রেখেছে আজও। হিন্দু মুসলিমের মধ্যে চরম মিল দরিদ্রতায় তবু তারা দ্বন্দ্ব বাধায় ধর্মীয় উন্মাদনায়। একই মানুষ একই ক্ষুধা নিয়ে ধর্মের নামে মরে এবং মারে।

ধারাভি বস্তি যে কারণে বিখ্যাত

ধারাভি বস্তি অনানুষ্ঠানিক (ইনফরামাল) অর্থনীতির জন্য, বিশেষ করে চামড়া শিল্প এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত। বাৎসরিক এক বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির ধারক ধারাভি বস্তি। এটি তার বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায় এবং এর বাসিন্দাদের টিকে থাকার ক্ষমতার জন্যও পরিচিত।

চামড়া এবং পুনর্ব্যবহার ছাড়াও, ধারাভির অর্থনীতিতে মৃৎশিল্প, বস্ত্র, ধাতব শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সম্প্রদায় এবং সংস্কৃতি

ধারাভি হলো সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মের এক মিশে যাওয়া পাত্র, যেখানে ভারতের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা বসবাস করে। বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল ফিউশনের পাশাপাশি, লৌকিক সংস্কৃতির ধারকও এই ধারাভি বস্তি।  

ধারাভি বস্তি কি পর্যটনের জন্য নিরাপদ?

ধারাভি বস্তি সৎ মানুষের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। তারপরও খোলা ড্রেন, নিচু বৈদ্যুতিক তার এবং কিছু অপরাধ প্রবণতার কারণে পর্যটকদের সাবধানে থাকতে বলা হয়। ধারাভির বাসিন্দাদের মধ্যে বন্ধন খুব দৃঢ়। বিভিন্ন অর্থনৈতিক দুর্বিপাকে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, তারা মিলেমিশে চলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ধারাভিতে স্বাক্ষরতার হার অনেক বস্তির তুলনায় ভালো। অনেক পরিবার থেকে ছেলেমেয়েদের কিছু অর্জনও করেছে। তবে এগুলো ব্যতিক্রম,  ধারভি মূলত উচ্চঘনবসতিপূর্ণ এবং বঞ্চিত মানুষের বাধ্যবাধকতার জীবন ছাড়া কিছু নয়।

ধারাভিতে প্রচুর পর্যটক আসে, এশিয়ার বৃহত্তম বৃস্তিতে বৈচিত্রময় জীবনের খোঁজে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র “স্লামডগ মিলেনিয়ার” এখানেই চিত্রিত হয়েছিলো।

অনেকের ভুল ধারণা থাকলেও মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি পতিতাবৃত্তির জন্য পরিচিত নয়, যদিও শহরের অন্যান্য এলাকা, যেমন কামাথিপুরা, যৌনকর্মের জন্য কুখ্যাত। ধারাভি চামড়া এবং বস্ত্র সহ বিভিন্ন শিল্পের একটি ব্যস্ত অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। পাঁচ হাজার ছোট বড় চামড়ার কারখানা রয়েছে এই বস্তিতে। 

পৃথিবীর ১০টি বড় বস্তি

১. ধারাভি, মুম্বাই, ভারত
২. কিবেরা, নাইরোবি, কেনিয়া
৩. ওরাঙ্গি শহর করাচি – পাকিস্তান
৪. নেজা-চালকো-ইতজা, মেক্সিকো ডায়োস, মেক্সিকো
৫. রোসিনহা ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোর একটি শহরতলী।
৬. দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের খায়েলিতশা শহরতলী
৭. মানশিয়াত নাসের, কায়রো, মিশর
৮. সিউদাদ বলিভার, বোগোটা, কলম্বিয়া
৯. হাইতির পোর্ট-অ-প্রিন্সের একটি শহর সোলেইল উল্লেখ করুন।
১০. ধরমপুরা, লাহোর, পাকিস্তান