পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ না করা, বিবাহ বিচ্ছেদ দাবী করা, পরকীয়া, বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক এবং এমনকি কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে, ঘটে থাকে।
নতুন আইনে হত্যাকারীর জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আইন করা হয়েছে এমনকি তাকে যদি হত ব্যক্তির আত্মীয়রা ক্ষমা করেও। নতুন আইনটি সংসদের আস্থাভোটে পাশ হয়েছে। আইনে পঁচিশ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ভাইয়ের হাতে পাকিস্তানী মডেল কান্দিল বালুচ হত্যা হওয়ার পরেই মূলত সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিষটি নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতেই এ আইন। পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী আয়শা সারোয়ার বলেছেন, এটি সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার একটি নমূনা, তবে এখনো অনেক কিছু করতে বাকী রয়েছে।
তবে কনজারভেটিভ পার্টির জ্যৈাষ্ঠ সিনেটর হাফিজ হামদুল্লাহ এ ধরনের আইন প্রণয়নের আগে কেন এ হত্যা করা হয় সে কারণগুলো খুঁজে দেখতে বলেছেন। তিনি নারীদের বাড়ি থেকে পলায়ন বন্ধ করতে বলেছেন।
প্রতি বছর পাকিস্তানে অন্তত ১০০০ জন নারী অনার কিলিং-এর শিকার হন। পরিবারের অনুমতি ব্যতীরেখে কোনো পুরুষের সাথে মেলামেশার কারণে মূলত এ ধরনের হত্যা করা হয়ে থাকে। পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটে থাকে।
পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির আত্মীয়রা ক্ষমা করলে হত্যাকারী মওকুফ পেয়ে যায়। যেহেতু হত্যাকারীও পরিবারের সদস্য, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারীরা মাফ পেয়ে যায়। সম্প্রতি সংসদের পাশ হওয়া আইনটিতে মূলত এ বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, আইনটি কার্যকর হলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কমে আসবে।
নারী-পুরুষের অনঅনুমোদিত মেলামেশার বিষয়কে পাকিস্তানে ‘কারো-কারি’ বলা হয়। কারো বলতে অপরাধী পুরুষকে বুঝানো হয়, আর কারি মানে অপরাধী নারী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধী পুরুষটি যদি কথিত অপরাধী নারীটিকে হত্যা করতে পারে তাহলে সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলেও হত্যাকাণ্ডের ফলে পরিবারের সম্মান পুনরুদ্ধার হয় বলে মনে করা হয়।
পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ না করা, বিবাহ বিচ্ছেদ দাবী করা, পরকীয়া, বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক এবং এমনকি কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে, ঘটে থাকে।
নারীর ‘সতীত্ব’ রক্ষার নামে পাকিস্তানের মত উগ্র মুসলিম মতাদর্শের দেশে নারীর চলাফেরা সমাজ এবং ধর্মীয় রীতিনীতি দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। সেখানে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা ঘটে। এ কারণে পাকিস্তানের মত দেশে নারী ধর্ষণের ঘটনা অহরহ হলেও তা জানাজানি হয় না, ভয়ে নারীরা কাউকে বলতে চায় না।
বিভিন্ন কারণে মিথ্যা অভিযোগ এনে নারীদের হত্যা করা হয় পাকিস্তানে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করা, দ্বিতীয় বিয়েতে মত না দেওয়া, ভরণপোষণ করতে না চাওয়া, প্রেম বা বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা ইত্যাদি কারণ উল্লেখযোগ্য।
পাকিস্তানে অঞ্চলভিত্তিক, এমনকি গ্রামভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা রয়েছে যারা সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মত করে আইন পরিচালনা করে, যেখানে তাদের মূল হাতিয়ার থাকে ধর্মীয় অনুশাসনের নাম। পাঞ্জাব এবং সিন্ধ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি অনার কিলিং-এর ঘটনা ঘটে।
#অনলাইন অবলম্বনে