পশ্চিমবঙ্গে বিশিষ্ট বাউল গবেষক শক্তিনাথ ঝা-এর আহ্বানে বাউল-ফকিরদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ

follow-upnews
0 0

এপ্রিল থেকে জুন —এই তিন মাসের মধ্যে লকডাউনের কারণে বিপদগ্রস্থ মানুষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বাউল-ফকির সঙ্ঘ এবং ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম পর সেক্যুলার হিউম্যানিজমের সদস্যরা বাউল-ফকির, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং খেটে খাওয়া নিরন্ন মানুষদের খুঁজে বের করে ত্রাণবিলি করে আসছে। সঙ্ঘ এবং ফোরাম পাঁচজন স্বচ্ছল মানুষকে একজন নিরন্ন মানুষের দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানিয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে অনেক জায়গায় ছোট ছোট গোষ্ঠী এই ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে। মুর্শিদাবাদের হরিহর পাড়া কল্যাণপুর লোকনাথ সেবাশ্রমে কয়েক বার কয়েকশো মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। হরিহরপাড়ার ললিতপুরেও একাধিকবার একইভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের আশিক সেখের মাধ্যমে দুঃস্থ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজম
(বামে) ইন্দো-বাংলাদেশ সেক্যুলার ফোরাম ফর হিউম্যানিজম এবং বাউল ফকির সঙ্ঘের সেচ্ছাসেবীরা, (ডানে) ত্রাণ নিতে আসা সুবিধাভোগীরা।

বিশিষ্ট বাউল-ফকির গবেষক শক্তিনাথ ঝা’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার অন্তর্গত চোঁয়া পাঠানপাড়ার বাসিন্দা খোদাবক্স ফকির পঁয়ত্রিশ জন বৃদ্ধ বাউল-ফকিরের বাড়িতে অর্থসাহায্য পাঠিয়েছেন। নদীয়ার চাকদহে চিরন্তন সরকার ও ধুবুলিয়ার মিহির সাহার মাধ্যমে কয়েকবার শতাধিক করে মানুষকে চাল, কাপড় এবং নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
নদীয়ার গোড়ভাঙ্গাতে ও বেতাইয়ের জাফর সেবাশ্রমের মাধ্যমে দুঃস্থদের চাল, আলু, কাপড় ও টাকা দেওয়া হয় একাধিকবার। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিরজা মুক্তিমার্গ পীঠ থেকে অঙ্কিতা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কয়েকশত মানুষের মধ্যে কয়েক ধাপে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। কোলকাতায় বাউল উৎসবের অন্যতম প্রাণপুরুষ সৈকতের নেতৃত্বে একাধিকবার শতাধিক মানুষকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
প্রখ্যাত গায়িকা ও সাধিকা পার্বতী বাউল নিঃশব্দে শক্তিনাথ ঝা’র মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগতভাবে বহু নিঃস্ব বাউল সাধকদের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। এ ছাড়াও সঙ্ঘ এবং ফোরামের বহু অনুরাগী নিঃশব্দে নানা সময়ে অর্থসাহায্য করে চলেছেন।
বাউল-ফকিররা অসাম্প্রদায়িক মানবতার সমর্থক। ধর্মীয় মৌলবাদের দ্বারা তারা দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত ও অত্যাচারিত হয়ে চলেছেন। ড. শক্তিনাথ ঝা, সভাপতি, বাউল-ফকির সঙ্ঘ, আকবর আলি সেখ, সাধারণ সম্পাদক, বাউল-ফকির সঙ্ঘ এবং আরও অনেকে বাউল-ফকিরদের জন্য কাজ করছেন। ড. শক্তিনাথ ঝা, আকবর আলি সেখ, আশিক সেখ প্রমুুখ ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজমের নেতৃত্বেও রয়েছেন।
ও ভবের করোনা / আমরা তোমায় ভয় তো পাই না / আমরা বাংলা মায়ের দুষ্ট ছেলে / আমরা ভারত মায়ের দুষ্টু ছেলে / মোদের কাছে এসো না। এবং মন্বন্তরে মরিনি মোরা / মারিনি এ ঘরকহি / করোনা ভাইরাসে বলে ভয়টা কী / কাঁশি জ্বর গলা ব্যথা / হইলে নাও সতর্কতা / ডাক্তারের সাথে ভাই / কথা বলো এক্ষণি/ পজেটিভ রিপোর্ট এলে / থাকতে হবে হাসপাতালে / নেগেটিভ হলেও পরে / ঘরে থাকলে নাই ক্ষতি / লক ডাউনে ঘরো থাকো / চোখ কান খোলা রাখো / শারীরিক দূরত্ব রাখো / সামাজিক সংগতি … —করোনার বিরুদ্ধে জয়ের বার্তা নিয়ে এরকম গান বেঁধেছেন সঙ্ঘ ও ফোরামের অনেক বাউল সদস্য। এক্ষেত্রে সৌমেন বিশ্বাস ও নীতিশ রায়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। গানগুলি অসহায় মানুষদের ধৈর্য এবং শক্তি ধারণে বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে।


প্রতিবেদক: মৌসুমী মজুমদার, কলকাতা

Next Post

চার্লি চ্যাপলিনের ঐতিহাসিক ভাষণ

দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ১৯৪০ সাল প্রকাশিত একটি ব্যঙ্গাত্মক  চলচ্চিত্র, যেটি লিখেছিলেন, পরিচালনা এবং অভিনয় করেছিলেন নির্বাক দৃশ্যের কিংবদন্তী অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন। চার্লি চ্যাপলিনের (১৮৮৯ – ১৯৭৭) এটিই একমাত্র সবাক চলচ্চিত্র। এটির শেষ দৃশ্যে তিনি মানব জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন, যেটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাষণ।  আমি সম্রাট হতে […]
Charlie Chaplin

এগুলো পড়তে পারেন