বিসিএস প্রিলি সাজেশন: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন-১

follow-upnews
0 0

জেনে রাখা ভালো–

১. বাক-স্বাধীনতার কথা বলা আছে সংবিধানের যে অনুচ্ছেদে: ৩৯ নং অনুচ্ছেদে
২. নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো: Morality
৩. মূল্যবোধ মূলত: একটি দার্শনিক বিষয়
৪. সামাজিক মূল্যবোধ হলো: সামাজিক আচার আচরণের সমষ্টি
৫. সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি হলো: আইনের শাসন
৬. মূল্যবোধকে সাধারণত বিভক্ত করা যায়: ৬ ভাগে
৭. প্রতিটি শিশু যে মূল্যবোধ নিয়ে জন্মায়: ব্যক্তি মূল্যবোধ
৮. শিল্প বিপ্লব সামাজিক মূল্যবোধের: অবক্ষয় ঘটিয়েছে
৯. আইন মেনে চলা যে ধরনের কর্তব্য: রাজনৈতিক
১০. মূল্যবোধ মানুষের সার্বিক জীবনে: গাইডলাইন হিসেবে ভূমিকা পালন করে
১১. প্রাচীনকালে এথেন্স ও স্পার্টায় প্রচলিত ছিল: নগররাষ্ট্র
১২. পৌরনীতি ও সুশাসন: এক ধরনের সামাজিক বিজ্ঞান
১৩. প্রাচীনকালে নগররাষ্ট্র বিদ্যমান ছিল: গ্রিসে
১৪. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা যে বিভাগের কাজ: বিচার বিভাগের
১৫. নিজ ধর্ম চর্চা ও পালন করা হলো: সামাজিক অধিকার
১৬. যে অধিকার লঙ্ঘিত হলে রাষ্ট্রীয় শাস্তির বিধান নেই: নৈতিক অধিকার
১৭. সরকারের তৃতীয় অঙ্গ হলো: বিচার বিভাগ
১৮. নাগরিকতা অর্থপূর্ণ হয়: কর্তব্য পালনে
১৯. রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন বলা হয়: সাংবিধানিক আইনকে
২০. আইন নিষ্প্রয়োজন হয় যদি: শাসক ন্যায়পরায়ণ হয়
২১. বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভালো শাসনাব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে: গণতন্ত্র ব্যবস্থা
২২. “What is morally wrong can never be politically right” উক্তিটি করেছেন –C. J. Fox
২৩. সুশাসনের আভাস পাওয়া যায়: ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে
২৪. আইনের দৃষ্টিতে ‘সকল নাগরিক সমান’ বলা আছে সংবিধানের যে অনুচ্ছেদে: ২৭ নং অনুচ্ছেদে
২৫. সরকার ও জনগণের মধ্যে আয়নার মতো কাজ করে: মিডিয়া
২৬. পেশিশক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো: Muscle Power
২৭. বাংলাদেশের সংবিধানের যে অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের কথা বলা হয়েছে: ৭৭ নং অনুচ্ছেদে
২৮. সুশাসনের মানদণ্ড হলো: জনগণের সম্মতি ও সন্তুষ্টি
২৯. মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে অচল হয়ে পড়ে: গণতন্ত্র
৩০. দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হলো: একটি সরকারি সংস্থা
৩১. প্রশাসন যন্ত্রের ধারক ও বাহক হলো: সরকার
৩২. সুশাসনের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো: দুর্নীতি
৩৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যার দায়িত্ব: সরকারের
৩৪. সুশাসনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল: Transparency
৩৫. সুশাসনের পূর্ব শর্ত হলো: জবাবদিহিতা
৩৬. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য বিষয় হলো: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ
৩৭. গণতন্ত্র ছাড়া প্রতিষ্ঠা পায় না: সুশাসন
৩৮. Good Governance ও E-Governance -এর মধ্যে সম্পর্ক: ঘনিষ্ঠ
৩৯. যে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিত্যদিনের ব্যাপার, সে দেশে নেই: সুশাসন
৪০. যে সরকার আইনের দ্বারা সতীদাহ প্রথা বাতিল করে: ব্রটিশ সরকার
৪১. মুসলিম আইনের প্রধান উৎস হলো: আল কুরআন
৪২. যে দেশের আইন বা সংবিধান লিখিত আকারে নেই: যুক্তরাজ্য
৪৩. আইনের আনুষ্ঠানিক উৎস হলো: সংবিধান
৪৪. সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে যে আইন প্রবর্তন করা হয়: ফৌজদারী আইন
৪৫. ঙৎফরহধহপব হলো: জরুরি আইন
৪৬. জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে: সরকার
৪৭. ক্ষমতার অপব্যবহারের যৌক্তিক কারণ: ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ
৪৮. যেভাবে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা যায়: ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে
৪৯. সুশাসন প্রতিষ্ঠার মুখ্য উপাদান: আইনের শাসন
৫০. যেখানে দেশপ্রেম নেই সেখানে: সুশাসন নেই

নৈতিকতা (Morality)

নৈতিকতার বিকাশের ইতিহাস সুদীর্ঘ হলেও পাশ্চাত্যে এ সংক্রান্ত সুসংবদ্ধ আলোচনা শুরু হয় গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটলের উদ্যোগে। তাদের মতে, “যেসব কাজ ও আচরণ মানুষকে ভালো বা খারাপ প্রতিপন্ন করে সেগুলো প্রাকৃতিক জগতের বস্তু ও ঘটনার মতো কোন আকস্মিক ব্যাপার নয় বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কাজ। এ রকম ঐচ্ছিক আচরণকেই তারা এথস বলে আখ্যায়িত করেন। আর তাদের এই শিক্ষা থেকেই এথিসক কথাটির প্রচলন হয়। পরবর্তীকালে রোমান দার্শনিক সিসেরো, সেনেকা, মার্কস, আরলিয়াস প্রমুখ প্রথাগত আচরণের অর্থে মস কথাটি ব্যবহার করেন। আর ল্যাটিন ‘Mos’ শব্দ থেকেই মরালস (Morals), মরালিটি (Morality) ইত্যাদি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক (Relationship Between law & Morality)

১. অভিন্ন উৎস থেকে উৎপত্তি;
২. অভিন্ন লক্ষ্য;
৩. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা;
৪. পারস্পরিক প্রভাব;
৫. পরিবর্তনশীলতা;
৬. মানবকল্যাণ সাধন;
৭. জনগণের সম্মতি।

আইন ও নৈকিতার মধ্যে উপর্যুক্ত সাদৃশ্য থাকলেও উভয়ের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য বিদ্যমান:
১. পরিধিগত পার্থক্য;
২. অনুমোদনগত পার্থক্য;
৩. বাধ্যবাধকতার দিক থেকে পার্থক্য;
৪. শাস্তিভোগের দিক থেকে পার্থক্য;
৫. সুস্পষ্টতা ও সুনির্দিষ্টতার দিক থেকে পার্থক্য;
৬. মানদণ্ডের দিক থেকে পার্থক্য;
৭. স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পার্থক্য;
৮. লিপিবদ্ধতা সংক্রান্ত পার্থক্য;
৯. প্রাধান্যগত পার্থক্য;
১০. সর্বজনীনতার ক্ষেত্রে পার্থক্য।

মূল্যবোধ (Value):

মূল্যবোধ একটি বহুল প্রচলিত আপেক্ষিক বিষয়, এটি মূলত দর্শন সংশ্লিষ্ট একটি ধারণা। কোন মানুষ, সমাজ, ধর্ম, বিজ্ঞান মূল্যবোধ নিরপেক্ষ নয়। মূল্যবোধ হলো মানুষের এমন এক বিশ্বাসবোধ ও মানদণ্ড যার মাধ্যমে কোন ঘটনা বা অবস্থার ভালোমন্দ বিচার করা হয়। মূল্যবোধ কোন সমাজেই লিপিবদ্ধ থাকে না। মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের একটি অলিখিত সামাজিক বিধান।

মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য

Characteristics of Values

১. সামাজিক মাপকাঠি;
২. যোগসূত্র ও সেতুবন্ধন;
৩. নৈতিক প্রাধান্য;
৪. অলিখিত দলিল;
৫. অর্জিত;
৬. আদর্শ ও রীতিনীতির সমষ্টি;
৭. প্রতিবাদী;
৮. বিভিন্নতা;
৯. বৈচিত্র্যময়তা ও আপেক্ষিকতা;
১০. পরিবর্তনশীলতা ও নৈর্ব্যক্তিকতা।

মূল্যবোধের উপাদান

Elements of Values

১. নীতি ও ঔচিত্যবোধ;
২. সামাজিক ন্যায়বিচার;
৩. শৃঙ্খলাবোধ;
৪. সহনশীলতা;
৫. সহমর্মিতা;
৬. শ্রমের মর্যাদা;
৭. আইনের শাসন;
প্রথমত, সাধারণ আইনের প্রাধান্য
দ্বিতীয়ত, আইনের চোখে সকলেই সমান
তৃতীয়ত, নাগরিক অধিকার সাধারণ আইনের দ্বারাই সংক্ষিরত।
৮. নাগরিক সচেতনতা ও কর্তব্যবোধ;
৯. সরকার ও রাষ্ট্রের জনকল্যাণমুখিতা;
১০. দায়দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা।

মূল্যবোধের শ্রেণিবিভাগ

Classification of Values

১. সাধারণ দৃষ্টিতে মূল্যবোধ ৫ প্রকার। যথা:
ক. ব্যক্তিগত মূল্যবোধ (Individual values);
খ. দলীয় মূল্যবোধ (Party values);
গ. সমষ্টিগত বা সামাজিক মূল্যবোধ (Collective or social values);
ঘ. প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ (Institutional values);
ঙ. পেশাগত মূল্যবোধ (Professional values)।

২. প্রভাবগত মাত্রার বিচারে কার্যকারিতার ভিত্তিতে মূল্যবোধ তিন ধরনের। যথা:
ক. চরম মূল্যবোধ (Ultimate values);
খ. মাধ্যমিক মূল্যবোধ (Intermediate values);
গ. সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ (Specific values)।

৩. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে মূল্যবোধ চার প্রকার। যথা:
ক. উপায়গত মূল্যবোধ (Means values);
খ. উদ্দেশ্যগত মূল্যবোধ (Ends values);
গ. সুস্পষ্ট মূল্যবোধ (Explicit values);
ঘ. চাপহীন মূল্যবোধ (Implicit values)।

৫. ব্যবহারিক বা আচরণের ভিত্তিতে মূল্যবোধকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. ইতিবাচক মূল্যবোধ (Positive values);
খ. নেতিবাচক মূল্যবোধ (Negative values)।

৬. গুরুত্বের ভিত্তিতে মূল্যবোধকে দু’ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে: যথা :
ক. মুখ্য বা প্রধান মূল্যবোধ (Chief values);
খ. গৌণ বা অপ্রধান মূল্যবোধ (Secondary values)।

মূল্যবোধ ও সুশাসন

Values and Good Governance

মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল্যবোধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নিম্নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল্যবোধের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. পরিকল্পিত ও বাঞ্চিত পরিবর্তন;
২. জাতীয় সত্তার দর্পণ;
৩. দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগ্রতকরণ;
৪. সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারণ;
৫. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা;
৬. সামাজিক ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা;
৭. আচরণ নিয়ন্ত্রণ;
৮. নৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ;
৯. মানব সম্পদ উন্নয়ন;
১০. জনগণের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা।

সুশাসন
Good Governance 

সুশাসন প্রত্যয়টি বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একটি বহুল আলোচিত ধারণা। বর্তমানে ইংরেজি “Good Governance”-এর বাংলা প্রতিশব্দ সুশাসন করা হয়েছে। সুতরাং সুশাসন বা Good Governance প্রত্যয়টির ধারণা পেতে হলে আমাদের প্রথমে Governance বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
ইংরেজি “Governance” শব্দটি গ্রিক শব্দ কুবেরনাও থেকে এসেছে। -এর মানে “চালনা”। প্লেটো সর্বপ্রথম এটি রূপক অর্থে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে শব্দটি গ্রিক থেকে ল্যাটিনে এবং ল্যাটিন থেকে বিশ্বের বহু ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। মূলত প্লেটো ও এরিস্টটলের সময় থেকে সরকার ও প্রশাসন পরিচালনাই গভর্ন্যান্স (Governance)।-এর অর্থ হলো Governance সরকার ও প্রশাসন উভয়ের চেয়ে ব্যাপকতর।
১৯৮৯ সালে বিশ্বব্যাংক আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে প্রথম গভর্নেন্স সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা করে। সেই প্রতিবেদনের দলিলে সর্বপ্রথম সুশাসন (Good Governance) প্রত্যয়টির ব্যবহৃত হয়। সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতা, উন্নয়নের জন্য একটি আইনগত কাঠামো, তথ্য পরিবেশন ও স্বচ্ছতাকে সুশাসনের চারটি মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে (Welfare state) ধারণার সাথে সুশাসনের ধারণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।-এর মাধ্যমে কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, দেশের জনগণ কিভাবে শাসিত হবে, রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক কেমন হবে ইত্যাদি জানা যায়। সুশাসন কোন রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরিচালনার পদ্ধতি, শাসক ও শাসিতের সম্পর্কের স্বরূপ। সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুচারুভাবে দেশ পরিচালনা সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ স্থায়ী সচিব Sir Kenneth Stowe সুশাসনের নির্দেশক হিসেবে কতকগুলো বিষয়ের উপর ইঙ্গিত করেছেন। যেমন–
ক. রাজনৈতিক স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং একটি অবাধ নির্বাচিত আইনসভা;
খ. ব্যক্তিসত্তার অধিকার সংরক্ষণে সংবিধান এবং বিচার বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব;
গ. স্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ;
ঘ. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন এবং
ঙ. একটি স্বাধীন নির্বাচিত আইনসভার কাছে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা।

সুশাসন সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বে দু’ধরনের মতবাদ রয়েছে। যথা:
১. বিশ্ব ব্যাংকের মতবাদ;
২. অন্যান্য দাতা সংস্থা ও পশ্চিমা দেশের মতবাদ;
বিশ্ব ব্যাংকের মতে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সুশাসনের অন্তর্ভুক্ত;
ক. সরকারি কাজের দক্ষতা বা ক্ষমতা;
খ. স্বাধীন বিচারব্যবস্থা;
গ. বৈধ চুক্তির প্রয়োগ;
ঘ. জবাবদিহিমূলক প্রশাসন;
ঙ. স্বাধীন সরকারি নিরীক্ষক;
চ. প্রতিনিধিত্বমূলক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধতা;
ছ. আইন ও মানবাধিকার সংরক্ষণ;
জ. বহুমুখী সাংগঠনিক কাঠামো;
ঝ. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।

পশ্চিমা দেশসমূহ সুশাসনের চারটি দিকের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা:
১. সুশাসন হলো অধিকতর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা;
২. সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ;
৩. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা। এ জবাবদিহিতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণের কাছে করতে হবে;
৪. প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হবে শাসন কাঠামোর অন্যতম দিক।

সুতরাং সুশাসন হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, দক্ষ, দায়িত্বশীল ও ন্যায়সংগত রাষ্ট্র ব্যবস্থা যা আইনের শাসন নিশ্চিত করে।
সুতরাং সুশাসন বলতে এমন একটি অবস্থাকে বুঝায় যেখানে শাসন ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রয়েছে, স্বাধীন বিচার বিভাগ আছে, মানবাধিকারের নিশ্চয়তা আছে, আইনের শাসন আছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সকলের অংশগ্রহণের
সুযোগ রয়েছে।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্য

Characteristics of Good Governance

১. জনগণের অংশগ্রহণ (Peoples participation);
২. আইনের শাসন (Rule of law);
৩. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা (Freedom of mass media);
৪. স্বচ্ছতা (Transparency);
৫. ঐকমত্য (Consensus);
৬. জবাবদিহিতা (Accountability);
৭. সংবেদনশীলতা (Responsiveness);
৮. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা (Independence of the Judiciary);
৯. দায়িত্বশীলতা (Responsibility);
১০. মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সংরক্ষণ (Preserve fundamental rights and Human rights);
১১. ন্যায়পরায়ণতা (Equality);
১২. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of power);
১৩. কার্যকারিতা ও দক্ষতা (Effectiveness and efficiency);
১৪. বৈধতা (Legitimacy);
১৫. লিঙ্গ বৈষম্যের অনুপস্থিতি (Absence of gender disparity)।

সুশাসনের সমস্যাসমূহ

Problems of Good Governance

১. দুর্নীতি (Corruption);
২. স্বজনপ্রীতি (Nepotism);
৩. দারিদ্র্য (Poverty);
৪. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব (Lack of Transparency and Accountability);
৫. আইনের শাসনের অনুপস্থিতি (Absence of rule of law);
৬. সংঘাতময় রাজনীতি (Confrontational politics);
৭. সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার অভাব (Lack of sound democratic practice);
৮. বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব (Lack of independence of judiciary);
৯. সংসদের অকার্যকারিতা (Dysfunctional parliament);
১০. এলিট ও জনগণের দূরত্ব (Elite-Mass Gap);
১১. সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ (Strong control of government);
১২. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা (Bureaucratic complexity);
১৩. স্থানীয় সরকার কাঠামোর দুর্বলতা (Weakness of local government);
১৪. রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব (Lack of political consensus);
১৫. সচেতনতার অভাব (Lack of consciousness);
১৬. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা (Political instability)।

সুশাসনের সমস্যা সমাধানের উপায়

Ways of Solving the Problems of Good Governance

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ (Ensure transparency and accountability);
২. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মূল্যেপাটন (Uproot of nepotism and corruption);
৩. আইনে শাসন প্রতিষ্ঠা (Establish rule of law);
৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ (Ensuring independence of the Judiciary);
৫. স্থানীয় সরকার কাঠোমা শক্তিশালীকরণ (Strengthen the local governance);
৬. রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি (Create political consensus);
৭. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রোধ (Prevent bureaucratic complexity);
৮. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ (Ensure freedom of mass media);
৯. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ (Ensure peoples participation);
১০. জনগণ ও সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক রক্ষা (Maintain good relation between public and government);
১১. সরকারি দল ও বিরোধীদলের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি (Creating good relationship between ruling and opposition party)।

১২. বিশ্ব ব্যাংকের মতে সুশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো:
ক. সরকারি কাজে দক্ষতা;
খ. স্বাধীন বিচারব্যবস্থা;
গ. বৈধ চুক্তি প্রয়োগ;
ঘ. জবাবদিহিমূলক প্রশাসন;
ঙ. স্বাধীন সরকারি নিরীক্ষক;
চ. প্রতিনিধিত্বমূলক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধতা;
ছ. আইন ও মানবাধিকার সংরক্ষণ;
জ. বহুমুখী সাংগঠনিক কাঠামো;
ঝ. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা;
ঞ. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি।

১৩. পশ্চিমা বিশ্বের মতামত (Western view):

পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ সুশাসনের চারটি দিকের কথা উল্লেখ করেছে। যথা:
১. সুশাসন হলো অধিকতর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা;
২. সুশাসনের প্রক্রিয়া অবশ্যই আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে;
৩. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার নিশ্চিত হলেই শাসনব্যবস্থা উত্তম হবে;
৪. প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হবে শাসন কাঠামোর অন্যতম দিক।

১৪. দাতা সংস্থার মতামত (Donor agency’s view):

দাতা সংস্থাগুলো সুশাসনের কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হলো:
ক. রাজনৈতিক স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং একটি অবাধ নির্বাচিত আইনসভা;
খ. ব্যক্তিসত্তার অধিকার সংরক্ষণে সংবিধান এবং বিভাগ বিভাগের স্বাধীনতা;
গ. স্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ;
ঘ. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন;
ঙ. একটি স্বাধীন নির্বাচিত আইনসভার কাছে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা প্রভৃতি।

১৫. দারিদ্র্য বিমোচন (Poverty alleviation);
১৬. জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি (Increase peoples consciousness)।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয়

Role of Government in Establishing Good Governance

১. কার্যকর ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন ব্যবস্থা (Effective and accountable administration);
২. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি পরিহার (Avoid corruption and nepotism);
৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন (Free, Fair and Impartial Election);
৪. মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত (Establish freedom of expression);
৫. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা (Ensure rule of law);
৬. নারীর ক্ষমতায়ন (Empowerment of women);
৭. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of power);
৮. স্থানীয় সরকারের সংস্কার (Local Government reform);
৯. বহির্বিশ্বের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস (Decrease dependency on other countries);
১০. দাতা গোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস (Decrease dependency on donor agencies);
১১. জাতীয় সংসদকে কার্যকর করা (Enactment of parliament);
১২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা (Maintain political stability);
১৩. গণতন্ত্রের চর্চা (Practice of democracy);
১৪. বেসরকারি পদ্ধতির উপর গুরুত্ব আরোপ (Importance attribution on privatization procedure);
১৫. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা (Protect law and order);
১৬. স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা (Establish independent judiciary);
১৭. শিক্ষার বিস্তার (Spread of education);
১৮. উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জনসম্পৃক্তকরণ (Involvement of people in development activities)।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

Responsibilities and Duties of Citizen in Establishing Good Governance

১. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ (Political participation);
২. আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া (To be respectful to law);
৩. সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন (Selection of honest and qualified leadership);
৪. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হওয়া (Become democratic values minded);
৫. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ (Participation in development activities);
৬. জাতীয় সম্পত্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা (Protect public property and discipline);
৭. শিক্ষিত, সচেতন ও সজাগ হওয়া (Protect public property and discipline);
৮. সততা ও নিষ্ঠার সাথে সরকারি কাজ সম্পাদন করা (Perform public works with honesty and sincerity);
৯. নেতৃত্বের প্রয়োজনীয় গুণাবলি অর্জন করা (Acquire necessary qualities of leadership);
১০. সুশাসনের আকাক্সক্ষা এবং আগ্রহ (Desire and eagerness of good governance);
১১. সংবিধান মান্য করা (To abide by constitution);
১২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া (Raise voice against corruption)।

বাংলাদেশে সুশাসনের সমস্যাসমূহ

Problems of Good Governance in Bangladesh

১. দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনামল (Pakistani rule of 24 years);
২. নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ (Executive domination);
৩. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি (Political and administrative corruption);
৪. আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব (Lack of Bureaucratic accountability);
৫. দুর্বল আইন বিভাগ (Weak legislature);
৬. স্থানীয় সরকার কাঠামোর দুর্বলতা (Weakness of local government structure);
৭. সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার অভাব ((Lack of sound democratic practice);
৮. সরকার ও বিরোধী দলের সহিষ্ণুতার অভাব (Lack of tolerance of government and   opposition party);
৯. সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব (Distance between government and people);
১০. রাজনৈতিক সহিংসতা (Political violence);
১১. রাজনীতিতে সামরিকবাহিনীর হস্তক্ষেপ (Military intervention in politics);
১২. রাজনৈতিক অস্থিরতা (Political instability)।


বিসিএস প্রিলি সাজেশন: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন-২

সাজশেনটি তৈরি করেছেন Q&C Research সম্পাদনা পরিষদ।

Next Post

চাকরি পরীক্ষার্থীদের জন্য এই চ্যানেলটি খুব হেল্পফুল হতে পারে

৭ দিয়ে বিভাজ্য কিনা