কনকলতা // অলভ্য ঘোষ

follow-upnews
0 0
শনি রবি দূরদর্শন
বাংলা হিন্দি সিনেমা;
শাটার টানা সাদা কালো টিভির
তখন জামানা।
এন্টেনায় কাক বসলে পরে ঝিরি ঝিরি ঝিরি
কথায় কথায় বিঘ্ন ঘটে ভীষণ বিচ্ছিরি।
তবু কত অপেক্ষা কত আকুতি
পাড়ায় কটি টিভি ছিল সহজ সে গুনতি।
ভোটের খবর; ক্রিকেট ম্যাচ; সব কিছু ঘিরে
যার বাড়িতে থাকত টিভি উপচে পড়ত ভিড়ে।
এমনই এক বাড়ি ওলির মেয়ে কনকলতা
নামটা না হয় মিথ্যে বললাম শুনবে তার কথা?
কনকলতা কনকলতা
বাড়িওলির মেয়ে
সুযোগ পেলেই লুকোচুরি
খেলে আমায় নিয়ে!
জানলাখানা হেংলা হয়ে
ডেব ডেবিয়ে দেখে
কনকলতা ইচ্ছে করেই
চুল এলিয়ে রাখে!
রোগা ঢেংয়া ছেলে আমি
ভীষণ লাজুক
এক গোছা বই পড়ে তখন
হয়েছি আহাম্মুক!
বিপ্লব এক রক্তে আমার
আগুন ধরিয়ে দেয়;
পাল্টে দেবো সমাজ টাকে
এক দিন নিশ্চয়।
কনকলতা বড্ড ছোট
ফ্রক পরে নীল সাদা বুটি;
কথায় কথায় আমার সাথে
করে চলে খুনসুটি।
স্নানের ঘরের ভাঙা দরজা
ঢুকে পরে রোজ !
বালতি ভরে জল পড়ে যায়
দুটি মন নিখোঁজ।
কনকলতা মুচকি হাসে
বাঁকা তার চাউনি;
কেবলা আমি ছেঁড়া গামছা
শরীরে দিই ছাউনি।
সুচিত্রা সেন উত্তম কুমার
সেদিন রোমান্টিকতা দামী;
একদিন ঘাপটি মেরে পরীক্ষা নিলো
আমি কত বড় সংযমী।
এটাই কি শেষ; দুপুর বেলা ফাঁকা বাড়ি
সিনেমা গড়িয়ে চলে
কুসুম তেলের গন্ধ বিলয়
অঙ্ক খাতা ফেলে।
জান কবুল আর মান কবুল;
বিকচ্ছে দেশ;
ভালই হত এসব ভুলে
প্রেমিক হলে বেশ।
বাড়িওলা বাড়িওলি
আমায় বাবাজীবন বলে;
পিঠে পুলি পার্বণেতে
জামাই আদর কৌশলে।
ডিসেম্বরে ছুটির শেষে
গড়ের মাঠে পিকনিকে তে
কনকলতা ঘুরেছিল
আমার হাতে হাতটি রেখে।
ঠিকিত ছিল এমনিত হয়
সব প্রেমেরই একি-তো সিন;
স্বপ্নদোষ ও একই রকম
ভীষণ রকম অবসিন।
উল্টে দেবো পাল্টে দেবো
চশমা তখন আমার চোখে;
আমার স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না
আমায় সদা জাগিয়ে রাখে।
কনকলতা কনকলতা
নবম শ্রেণী হল;
আমি তখন কলেজে পড়ি
ঘি থেকে আগুন দূরে থাকই ভাল।
দূরদর্শনে ছবির ফাঁকে বিজ্ঞাপন বিরতি;
শেষ অংশে বলতে পারো কি হবে পরিণতি?
দূরে দূরে দূরে
নিজেকে সরিয়ে
অন্য এক পৃথিবীর
আমি ঘোরে।
কনকলতার স্বপ্ন গুলো
চার দেয়ালের ঘরে।
সমাজতন্ত্র কাকে বলে
কনকলতা জানে?
সাম্যবাদীর ভালবাসা
তাকে কখনো টানে!
সুখী গৃহকোণ
সচ্ছল তিনজন
ছোট পরিবার
সুখী পরিবার।
নিরাপত্তা,নির্ভরতা,
নিশ্চিন্ত জীবন!
মধ্যবিত্ত বেঁচে থাকার
এ টুকুই মূলধন।
সম্পর্ক চুক্তিপত্র;
কিছু সুযোগ সুবিধা!
এমন তরো ভালবাসা
একটা খোঁটায় বাঁধা।
যেমন ছাগল,গরু
তুইকি তেমন করে;
চাইছিলি
রাখতে আমায় ধরে।
দূর তুই কেন চাইবি
সিস্টেম চায়
জীবন কাটুক চাকরি
আর মাস কাবারির
হিসাবের খাতায়।
কনকলতা কনকলতা
তোরা খাঁচার পাখি;
আকাশ আমার
ভালো লাগে
জঙ্গলেতে সুখী।
লড়তে হবে লড়তে হবে
অনিশ্চিতের সাথে
অনেক মানুষ পাশে পাব
তুই নাইবা রইলি
কি যায় আসে তাতে!
সন্ধ্যে বেলা ভেজানো
দরজার কোণে;
কনকলতা দাঁড়িয়ে ছিল
একাকী নির্জনে।
– কে! কে ওখানে?
-আমি!
জীবন বিজ্ঞান বইয়ের ছলে
সেদিনের আগমনী।
কি মিহি কণ্ঠ যে তোর
এখনো কানে লেগে।
বড় বড় চোখ দুটো ছিল
জলে ঠাসা
নিদারুণ আবেগে।
তারপর আরো একদিন এলি
মাথানিচু করে বই ফেরত দিতে।
ভাবলি পাথর আমি
মনে মনে চেয়েছিলিস
প্রতিশোধ নিতে!
– মেয়েটা পড়াশোনায় অমনোযোগী।
একটু তোমার সময় হয় যদি।
-না…..মানে…. ইয়ে…..
-আসলে দুশ্চিন্তা ওকে নিয়ে।
ঠিক আছে। ঠিক আছে।
দেখি কাছেপিঠে মাস্টার কে আছে।
আরো এক সন্ধ্যে বেলা
কোচিং যাবার পথে;
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিল
আমার জন্য ওৎ পেতে।
অনেকটা পথ হেঁটে ছিলি
পেছন পেছন চুপটি করে
সেসব ছেলেমানুষি মনে আছে;
কনকলতা তোর সংসারে
আজ আমার কথা মনে পরে?
না হয় আমি পাষণ্ড এক
না হয় ভালবাসতে জানি নাকো।
বিশ্বাস কর একটি বারো
তোর কথা ভুলিনিকো!
বলতে পারো কনকলতা
এখন কেমন আছে;
সুগার,প্রেসার,থাইরয়েড
এসব কি তাকে ধরেছে?
কনকলতা হঠাৎ করে
ভীষণ উগ্র সাজে।
বন্ধু ও জুটে গেল
কিছু আজে বাজে।
তার যে কত প্রেমিক
দেখাতে সে ব্যস্ত;
সহজ সরল ভালবাসার
অকালে হলো অস্ত।
সকাল বেলা
স্কুল থেকে ফেরার পথে;
সাইকেলেতে চেপে
একটা ছেলের সাথে।
সন্ধ্যে বেলা
কোচিং কামাই করে;
অন্য আর এক ছেলের সাথে
এগলি সেগলি ঘোরে।
বেশতো ভাল কনকলতা
সুন্দর তোর প্রতিশোধ।
আঘাত গুলো প্রত্যাঘাতে
হবেই হবে শোধবোধ।
তুমি ধনী কেমন করে;
তোমার কি আছে টাকশাল।
একদলের সবকিছু লুটে
আর একদল হচ্ছে মালামাল।
আমি তখন অন্য পাড়ায় থাকি;
কনকলতার বিয়ে!
ওর বাবা নিমন্ত্রণ করে গেল
বিয়ের কার্ড দিয়ে।
অনেকটা পথ হাঁটার বাকি
যাওয়া হয়নি আর;
লোকের মুখে শুনতে পাই
কনকলতা জমিয়ে এখন
করছে সংসার।
তারপর
বহুদিন বাদে
একদিন দেখা হল
কাঠ ফাটা রোদে।
কনকলতা কনকলতা
একি সেই মেয়ে;
কানামাছি খেলে ছিল
যে আমাকে নিয়ে।
মুটিয়ে গেছে
সঙ্গে ছেলে স্কুল ব্যাগ কাঁধে।
পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যেতে
কোথায় যেন বাধে!
মুচকি হাসি;
ছেলেটার গাল টিপে।
জিজ্ঞাসু শিশু দৃষ্টিতে
পা থেকে মাথা অবধি
নিচ্ছে আমাকে মেপে!
কনকলতা বলে;
-ইনি তোমার মামা হয়!
ভালোই লাগে নিত্যনতুন
হরেক পরিচয়।
অনেক চ্যানেল
এখন ডিস এন্টেনা
কাক বসে না
দূরদর্শন

কেউ দেখেনা!


অলভ্য ঘোষ     অলভ্য ঘোষের কবিতা
Next Post

শব্দছবি // অচিরা বিশ্বাস

সারারাত বুকের বাঁ পাশে  এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে  এখনও পৃথিবীতে যে কবি এঁকে যায় প্রাণবন্ত শব্দের ছবি সে ছবিতে শুধু তুমিই মূর্তমান– তুমি আছো বলে পৃথিবীতে এখনও রয়েছে কিছু সুর প্রাণ খুলে গাওয়ার মতো গান।   যে চোখ মুগ্ধতা খোঁজে সে চোখের তুমিই আশ্রয়। তোমার প্রেমের কাছে এখনও নতজানু তৃষ্ণার্ত  […]
শব্দছবি