সাহিত্যকর্মের বিচার করবে কে, লেখক নিজে নাকি পাঠক?

follow-upnews
0 0

সাহিত্য মানে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে অন্তত একশো বছর দূরত্বের একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। সেখানে কে উঠবে কে উঠবে না সেটি বিচার করার দায়িত্ব সাহিত্যিকের হতে পারে না। সাহিত্যিকের কাজ লিখে যাওয়া, এবং গল্প-কবিতা-উপন্যাস যাই হোক সেটি শুধুমাত্র কিছু শব্দ বা বাক্য হতে পারে না, সেখানে জীবনদর্শন থাকতে হবে।

দিব্যেন্দু দ্বীপ

কবিতার বিচার, কবিতা শুধু নয়, যেকোনো সাহিত্য কর্মের বিচার কোনোভাবেই কি পরিচিত মহলে বা সমসাময়িক কালের মানুষের কাছে ছেড়া দেওয়া যায়? অবশ্যই যায় না। প্রথম কথা হচ্ছে, সাহিত্যের বিচারভার কোনোভাবেই পাঠকের উপর নয়, সাহিত্যকর্মের বিচার করবে সাহিত্যিক নিজে। সেটি টিকবে কিনা, পাঠক পড়বে কিনা, সে চিন্তা থেকে সাহিত্যকর্মের বিচার হবে না। সাহিত্যিক যদি নিজে তার লেখা তিনি গুরুত্বপূর্ন মনে করেন, তাহলে তিনি লিখে যাবেন। লিখে যাওয়া উচিৎ।

কবিতার বিষয়টি আরো দুর্বোদ্ধ। কবিতার পাঠক খুব কম হওয়াটা অলৌকিক নয়, কবিতাই হচ্ছে একমাত্র মৌলিক সাহিত্য যদি কবিতার লেখক অকবি না হন। মৌলিক সাহিত্য পড়বে এবং বুঝবে এমন পাঠক খুব বেশি আশা করা যায় না। কেউ যদি বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসটা একটু ঘেটে দেখেন তাহলে দেখবেন পৃথিবীর নামজাদা সাহিত্যেকেরা প্রত্যেকেই একটা লম্বা সময় জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন। পারিপার্শ্বিকতা বুঝতে হবে, জনগণের সাথে থাকতে হবে, কিন্তু পাঠকের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক লেখকের জন্য ভালো নয়।

বর্তমানে অকবিরা কবিতার সর্বনাশ করছে, একথা মিথ্যা নয়, তবে সৃষ্টিছাড়া পাঠকও সর্বনাশ কম করছে না। সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ করছে ফেসবুক। ফেসবুকের ভোট যদি আপনি আপনার লেখার মানদণ্ড বলে মানেন তাহলে কোনোদিনই আপনি লেখক নন। যে ফেসবুক ব্যবহার করে শুধু ক্রেতা-বিক্রেতা খুঁজতে চায় সেও চলতি পথে আপনার লেখায় একটি লাইক নিক্ষেপ করতে পারে, তাতে আপনি আনন্দিত হলেও সেটি তো লেখার মানদণ্ড হতে পারে না, পারে কি?

ফেসবুক মূলত বাজারের চায়ের দোকানেরই প্রতিচ্ছবি, এখানে কোনো গাম্ভীর্য বা সিদ্ধান্ত আশা করা বোকামী। হুজুগ তৈরি করাতে ফেসবুকের বিশাল ভূমিকা আছে। আমাদের পছন্দ তৈরি হয় মূলত সংখ্যাগরিষ্টের পছন্দ দ্বারা, একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝবেন বেশিরভাগ মানুষের নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত থাকে না, তাদের সিদ্ধান্ত তৈরিতে মূল ভূমিকা রাখে ট্রেন্ড। ফেসবুক মূলত এই ট্রেন্ডই।

হুমায়ূন আহমেদ নিজেকে ট্রেন্ডে পরিণত করে ফেলেছিলেন, এজন্য তার কাছ থেকে মূল্যবান তেমন কোনো সাহিত্যকর্ম জাতি পেয়েছে কিনা সেটি একেবারে অবিতর্কিত বিষয় নয়, তারপরেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

ট্রেন্ড তৈরি করা এত সহজও নয়, এটা করতে হলে স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে হবেই— সমকালের মানুষের চিন্তা-চেতনা প্রাধান্য দিয়ে সাহিত্য চর্চা করতে গেলে সে সাহিত্য মূলত ‘বাজারের গসিপের লিখিত রূপ’ বৈ কিছু নয়।

সাহিত্য মানে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে অন্তত একশো বছর দূরত্বের একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। সেখানে কে উঠবে কে উঠবে না সেটি বিচার করার দায়িত্ব সাহিত্যিকের হতে পারে না। সাহিত্যিকের কাজ লিখে যাওয়া, এবং গল্প-কবিতা-উপন্যাস যাই হোক সেটি শুধুমাত্র কিছু শব্দ বা বাক্য হতে পারে না, সেখানে জীবনদর্শন থাকতে হবে।

Next Post

আমার যে নেই স্বর্গ আমার যে নেই জন্ম বারংবার

♥ প্রিয়তম, হৃদয় কষ্টে খুন তবু বলি ‘ঠিক আছে’ তুমি যাও তার সাথে আজ ।   ♥ প্রিয়তম, তবু চলে যাচ্ছ! এ যেন নিশ্চিত মৃত্যু জেনে মা ডুবে যায় সন্তানকে ছুড়ে দিয়ে উজানে, যদি বাঁচে তবু।   ♥ প্রিয়তম, তোমার তো বাতাসে বাড়ি, আমি কি পারতাম না সেখানে যেতে, আমারও […]