জার্মানরা যেমন

জার্মানদের অনেক গুণ – সময়ানুবর্তিতা, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, বাড়ি-ঘর গুছিয়ে রাখার প্রবণতা৷ কিন্তু এতকিছুর পরও জার্মানদের হাবভাব দেখে অনেক বিদেশিই প্রথম প্রথম একটু যেন থমকে যান৷ জার্মানদের কী কী জিনিসে আশ্চর্য হয় তাঁদের?

1
সময়ের প্রতি একনিষ্ঠতা

কথায় বলে ‘টাইম ইজ মানি’৷ হ্যাঁ, কথাটা বাঙালিদের মনে না ধরলেও, সময়ের কাজ সময়ে করা, সময়কে যথাযথ মূল্য দেয়াটা জার্মানদের কাছে সাফল্যের চাবিকাঠি৷ আর তাই বাস, ট্রেন, ট্রাম – সব ঘড়ির কাঁটা ধরে সময়মতো আসবে-যাবে – এমনটাই প্রত্যাশা করেন জার্মানরা৷ বিষয়টা কিন্তু বার্লিনবাসী মার্কিন নাগরিক কেভিন ব্রাউনকে বেশ অবাকই করেছে৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সব সময় সব কিছু সময়মতো চলবে, এমনটা আশা করা একটু বেশি নয় কি?

1

সারা জীবনের সঙ্গী

বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো – অত্যন্ত স্বাভাবিক জার্মানিতে৷ এ দেশে বিবাহিতদের পাশাপাশি অবিবাহিত, কিন্তু একসঙ্গে বসবাসকারী জুটিদেরও আইনি স্বীকৃতি রয়েছে৷ জার্মানিতে অবিবাহিত দম্পতিরা অনায়াসেই নিজেদের জীবনসঙ্গী হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন৷ তাই বহু বছর একসঙ্গে বসবাসের পরও এমন অনেক জুটিই এখানে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না৷ তাছাড়া সেই সম্পর্ক থেকে সন্তান হলে, তার দায়িত্ব নিতে হয় বাবা-মা দু’জনকেই৷

1

সবসময় পরিপাটি সংসার

সামিয়া সিমারলিং আদতে টিউনিশিয়ার মেয়ে৷ তবে গত প্রায় ২৬ বছর ধরে সে জার্মানিতেই থাকে৷ জার্মানদের সব কিছুই সিমারলিং-এর খুব পছন্দ, শুধু একটা জিনিস ছাড়া৷ তাঁর কথায়, ‘‘জার্মানরা অতি পরিপাটি৷ এমনকি রান্না করতে করতেও তাঁরা রান্নার জায়গা, রান্নাঘর পরিষ্কার করে৷ খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হয় না? এটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকে না৷’’

1

সবাই কেমন চুপচাপ…

ভারত-বাংলাদেশে ট্রেনে চেপে কোথাও বেড়াতে গেছেন, আর পথসঙ্গী বা অন্য প্যাসেঞ্জারদের সঙ্গে কথা বলেননি, এমনটা কি কখনও হয়েছে? না৷ অথচ জার্মানিতে ট্রেন, বাস অথবা মেট্রোয় যাতায়াতের সময় সচারাচর অপরাচিত কারুর সঙ্গে আপনার আলাপ জমানোর তেমন সুযোগ নেই৷ সবাই যে যার মতো৷ কেউ বই পড়ছে, আবার কেউ কানে ‘হেডফোন’ লাগিয়ে গান শুনছে৷ হ্যাঁ, দশ বছর হামবুর্গ শহরে থাকার পরো এ বিষয়টা অবাক করে আইভরি কোস্টের ইব্রাহিমা সানোগোর৷

1মদ্যপানের পর নাচ

জার্মান পার্টিগুলোতে গেলে একটা জিনিস দেখে আজও অবাক হন ইকুয়েডর থেকে আসা জুডি ফ্যার্নান্ডেস-মেলসিগ৷ ‘‘জার্মানরা ভরপেট মদ না গিললে, কিছুতেই যেন পার্টির মজা নিতে পারেন না৷ এর আগে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে-বসে শুধু বকবক, মোটা মোটা বিষয় নিয়ে আলোচনা৷ তবে ভরপেট মদ্যপানের পর আস্তে আস্তে নাচের আমেজ আসে তাঁদের মধ্যে৷ ছুটে যায় ডান্সফ্লোরে’’৷

1

ময়লা ফেলার নিয়মকানুন

‘‘আমি আমার বাড়ির আবর্জনা ঠিকমতো ফেলছি কিনা – তাতে আমার প্রতিবেশীর কী?’’ – এ প্রশ্ন ইংল্যান্ডের মাইলস ওয়েট-এর৷ আসলে জার্মানিতে আবর্জনা ফেলার আছে নানারকম নিয়মকানুন৷ প্লাস্টিকের জন্য আলাদা জায়গা, জৈব পদার্থ, কাগজ বা কাচের জিনিসের জন্যও আলাদা আলাদা ময়লা ফেলার জায়গা করা আছে জার্মানিতে৷ পরবর্তীতে যে গ্লাস, কাগজ ও প্লাস্টিককে আবারো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হচ্ছে৷

1সারাদিন ধরে ‘ব্রোট’

আদতে দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়ে সোয়ুন ইয়ুং৷ তবে গত আট বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছেন আর পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কার্টুন আঁকাকে৷ জার্মানদের একটা জিনিস ও কিছুতেই বুঝতে পারে না৷ ইয়ুং-এর কথায়, ‘‘জার্মান ব্রোট বা ব্রোটশ্যেন – মানে রুটি আর কি – বেশ ভালো৷ প্রথম প্রথম একটু শক্ত শক্ত লাগলেও, খেতে ভালোই৷ কিন্তু তাই বলে সারা দিন? এখানে তো দেখি একেক জন দিনে কম করে অন্তত দু’বার রুটি খান৷ ভালো লাগে?’’

সূত্র: DW