বলবর্ধক লাচ্চি বানাবেন যেভাবে …

follow-upnews
0 0

অনেকেরই শরীরে রক্তসঞ্চালনজনিত সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে যারা হজম এবং গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই সমস্যাটি বেশি হয়। বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। মূলত জীবনাচারণ পরিবর্তন করে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় এ ধরনের সমস্যায়। বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে, সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে, তরল খাবার বেশি খেতে হবে। মাংস, ডাল এবং ভাজাপোড়া কম খেতে হবে। সরাসরি দুধ খাওয়া যাবে না, দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া যেতে পারে সামান্য পরিমাণে।

ফল খেলেও অনেকের সমস্যা হয়, গ্যাস্ট্রিক যন্ত্রণা বাড়ে, এজন্যে এমন একটি বলবর্ধক খাবার আপনাকে বেছে নিতে হবে, যাতে এসব সমস্যাও হবে না, আবার শরীরে শক্তির যোগানও আসবে। এরকম একটি খাবার হচ্ছে চালের/ভুট্টার ছাতুর লাচ্চি। এটি একটি অসাধারণ খাবার, খাবারটি থেকে আপনার শরীরে শক্তির যোগান আসবে আবার পেটে কোনো সমস্যাও হবে না।


যা যা লাগবে

চালের ছাতু, পানি/ডাবের পানি, কলা, খেজুর (না হলেও চলবে), বাদাম/কাজু বাদাম, গুড়ো দুধ/গরুর দুধ, চিনি/মধু (চিনি ব্যবহার না করে পারলে ভালো, করলেও কম পরিমাণে)। আমের মৌসুমে একটি আম। 

পরিমাণ

চালের/ভুট্টার ছাতু: এক কাপ ঘরে বানান বলরর্ধক লাচ্চি

ফিল্টার পানি/ডাবের পানি: ১/২ (আধা) লিটার

কলা: বড় হলে ২টি, ছোট হলে ৪টি

খেজুর: ২/৪টি

বাদাম: চিনা বাদাম হলে ১৫/২০টি, কাজু বাদাম হলে ৮/১০টি

গুড়ো দুধ: দুই টেবিল চামচ, গরুর দুধ হলে এক কাপ (দুধের পরিবর্তে দধি ব্যবহার করতে পারেন)

মধু: চার টেবিল চামচ, চিনিও ব্যবহার করতে পারেন (মনে রাখতে হবে যে পরিশোধিত চিনি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর)

আমের সময় আম যোগ করতে পারেন। আখের রস যোগাড় করতে পারলে পানি বা ডাবের পানির পরিবর্তে আখের রস ব্যবহার করতে পারেন, সেক্ষেত্রে চিনি না দিলে চলবে, মধু ব্যবহার করবেন বলবর্ধক এবং রোগপ্রতিরোধক হিসেবে। 

তৈরির পদ্ধতি

সকল উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড করার পর যদি মনে হয় বেশি ঘন হয়ে গেছে তাহলে আপনার খাওয়ার সুবিধার্তে একটু পানি মেশাতে পারেন। মিষ্টি বেশি না খাওয়াই ভালো। চেষ্টা করবেন চিনি ব্যবহার না করে শুধু মধু (খাটি মধু) ব্যবহার করতে। 

এরপর আপনি এক গ্লাস খাবেন, বাকীটুকু ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন। এটি আপনি দিনে তিনবার খেতে পারেন। কমপক্ষে দুইবার আপনি খেতেই পারেন—১১/১২টার দিকে একবার, এবং বিকাল ৪/৫টার দিকে আরেকবার। এক বছর এবং তদুর্ধ বয়সের শিশুদের জন্য এটি একটি অসাধারণ খাবার। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশুদের এটি খাওয়ানো যেতে পারে। 

খাবার থেকে শরীরে আমরা যে শক্তির যোগান নিই, সেটি আমরা ক্যালরি হিসেবে নিই। যদি আপনি দিনে এই লাচ্চি তিন গ্লাস খান, তাহলে পাবেন ১৫০০ ক্যালরি, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মোট চাহিদার দুই তৃতিয়াংশ। পাশাপাশি সকাল দুপুর রাতে যখন খাবেন, খুব কম খাবেন — একটু সবজি, একটু মাছ বা এক পিচ মুরগীর মাংস, এভাবে খাবেন। সকালে একটি রুটি আর এক বাটি সবজি খেলেই যথেষ্ট, সাথে একটি ডিম খেতে পারেন। রাতের খাবারটা এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো, যদি না পারেন খুব হালকা কিছু খাবেন। দুপুরেও কম খাবেন, বিশেষ করে ভাত কম খাবেন, তেল চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না। নিরোগ হয়ে বাঁচার আনন্দ যে কত সেটি যার শরীরে নানান ধরনের রোগ বাসা বেধেছে সে জানে।  

সতর্কতা

কোনো খাবারে ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেদিকে খেয়াল রেখে উপকরণটি বাদ দিতে হবে। কেমিক্যালমুক্ত কলা, খেজুর ব্যবহার করতে হবে। যে বেলেন্ডারে বানানো হবে সেটি পরিষ্কার রাখতে হবে। 

আমাদের শরীরে ক্যালরির প্রভাব

  • শারীরিক চাহিদার চাইতে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন বাড়বে, কম ক্যালরি নিলে ওজন কমবে, আর সমান ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন ঠিক থাকবে।
  • ব্যায়াম করলে বা শারীরিক কাজ করলে, শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়ে শক্তি খরচ হয়, ফলে ক্যালরি বার্ন হয়। তাই খাবার গ্রহণের সাথে শারীরিক কসরতের সম্পর্ক রয়েছে, যারা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে শরীরে তাদের ক্যালরি বেশি প্রয়োজন। 
  • কম ক্যালরি খাওয়া ছাড়াও, ক্যালরি বার্ন করার একটি সহজ উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। এছাড়াও হাঁটা চলা করা, মানে শরীরটাকে কর্মঠ রাখা ইত্যাদি। এছাড়াও ঘরের কাজ বা নিজের কাজ করলেও কিছু ক্যালরি বার্ন হয়।
  • মাঝে মাঝেই আমরা অনেক ক্যালরির খাবার খেয়ে থাকি, যা ওজন বাড়ার কারণ। অতিরিক্ত ওজন বাড়লে, অনেক স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে হতে পারে। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, অবসাদ ইত্যাদি।
  • তাই এই অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে জমে ফ্যাট হয়ে যাতে ওজন না বাড়ে, তাই আমাদের উচিত কিছু ক্যালরি বার্ন করা, মানে শরীরচর্চা করা, হাঁটা।
  • এছাড়া নিয়মিত বেশি ক্যালরি যুক্ত খাবার, যেমন: চিনিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল, ঘি, মাখন যুক্ত খাবার ইত্যাদি বেশি খেলেও ওজন বাড়ে, বা ব্যায়াম করলেও ঠিক মতো ব্যায়ামের ফল পাওয়া যায় না বা ওজন কমে না।
  • গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে, নিয়মিত কম ক্যালরির খাবার খেলে আয়ু বাড়ে, দেখতে কম বয়স্ক মনে হয়, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, শারীরিক ফিটনেস বজায় থাকে এবং মনও প্রফুল্ল থাকে।
  • দৈনিক ১২০০ ক্যালরির কম খাবার খাওয়া ঠিক নয়, এতে শরীরের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়, মেটাবলিজম কমে যায়, শরীর ঠিক মতো পুষ্টি পায় না।
  • শারীরিক চাহিদার চাইতে খুব কম ক্যালরি অনেক দিন ধরে খেলে, শরীরের ওজন কমে যাবে, শরীর দুর্বল হবে, অঙ্গ-প্রত্বঙ্গগুলো ঠিক মতো কাজ করবে না এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।
  • আমরা যে খাবারের মাধ্যমে ক্যালরি পাই, তা আমরা সবই ব্যায়ামের মাধ্যমে বার্ন করবো না, আমাদের শরীরকে কাজ করার জন্য, যেমন: হৃদকম্পনের জন্য, শ্বাস নেয়ার জন্যও আমাদের কিছু ক্যালরির দরকার।
  • তাছাড়া দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের জন্যও, যেমন: হাঁটা চলা করা, ঘরের কাজ করা, ব্রেইনের কাজ করা ইত্যাদির জন্যেও আমাদের কিছু ক্যালরি দরকার। আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্বঙ্গগুলোর কাজ করার জন্যই অনেক ক্যালরি দরকার।

সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার প্রতিদিন ১৬০০-২৪০০ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিৎ, আর পুরুষদের ২০০০-৩০০০ ক্যালরি। (সন্তানসম্ভবা মায়েদের ক্যালরি ইনটেক বেশি প্রয়োজন।) একটি বাচ্চার ক্যালরি ইনটেক প্রতিদিন ১০০০ ক্যালরি, ১৬-১৮ বয়স যাদের, তাদের ৩২০০ ক্যালরি ও বয়স ১৯-২৫ যাদের তাদের জন্য ২০০০-২২০০ ক্যালরি। সাধারণত যত বয়স বাড়তে থাকে ক্যালরির প্রয়োজন তত কমতে থাকে কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিজম কমতে থাকে।

Next Post

পানি বিশুদ্ধ না হলে হতে পারে যেসব রোগ

পানিবাহিত রোগ (Water-borne Disease) হচ্ছে যে কোনো রোগ যা দূষিত পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বা ছড়িয়ে থাকে। মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর বিভিন্ন রোগের জন্য প্রধানত দায়ী কয়েক প্রকার রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস) এবং কয়েক রকমের পরজীবী। এ ধরনের সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবেরা নানা রকমের কৌশলের সাহায্যে পরিবেশে বেঁচে […]
পানিবাহিত রোগ