ক্রস ফায়ার // দিব্যেন্দু দ্বীপ

follow-upnews
0 0

ছেলেটা আমায় কখনো কাছে যেতে দিল না,

আমার নাম ধরে পর্যন্ত ডাকতে জানে না,

একটা চোর ডাকাত গুণ্ডা বদমাসের এত অহংকার!

আমার নামটি সে মনেও রাখতে চায় না,

ওরা সাথে দেখা হয়েছে বহুবার, কথা হয়েছে অনেক,

সুখ দুঃখের কথা না, সম্ভোগের কথা না,

যন্ত্রণার কথা না, জীবনযাপনের কথাও না।

অথচ কত কথা!

তন্দ্রাচ্ছন্ন রাতের ফিনফিনে বাতাস

কান পেতে শুনেছে সেসব অর্থহীন কথা।

আবার ও উধাও, কোথাও নেই,

ফোন করি, ও চিনতে পারে না,

কথা বলতে চায় না।

মাঝে মাঝে ফোন করতাম,

কিন্তু কখনই ও আমাকে চিনতে পারে না।

আবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে,

কথায় কথায় ক্লান্ত হয়েছি,

কখন যে হঠাৎ চাঁদটা ডুবে গেল!

ও চলে গেল!

কোথায় গেল? বলে তো গেল না।

আর আমার সাথে দেখা হলো না।

কেউ খবর রাখে না,

কেউ ওর ঠিকানা জানে না,

আসলে ওদের তো ঠিকানা থাকেও না।

আমি হন্যে হয়ে খুঁজে

অবশেষে ওকে পেয়েছি পত্রিকার পাতায়।

আমি মরুভূমির মাঝে মরূদ্যান খুঁজে ফিরি,

ঐ সামাজিক অমানুষটার মাঝে মিলেছিল একটা মানুষ।

সমাজের সভ্য সুন্দর মানুষগুলো সেখানে

সামান্য, ম্লান, অনেক বেশি মলীন।

আমি বিস্মিত হইনি, এটাইতো হওয়ার কথা,

ওর পরিণতির কথা সবচেয়ে বেশি ও নিজেই জানত।

“মারব, মরে যাব,

এই বিস্তীর্ণ সাগরে জীবন বিপন্ন করাই তো আমাদের জীবন”

সোমালিয়ার জলদস্যুদের মতো

এই হয়েছিল ওর জীবন দর্শন।

তবে তা নিজের জন্য নয়,

ও ভেবেছিল

এভাবে হয়ত দূর করা যাবে সামাজিক সব অনাচার। 

ভীষণ দুঃখ পেয়ছিলাম আমি।

সময়ে, সম্ভোগে আবার সব ভুলেছি।

ওর একটি আস্তানা আমি চিনতাম,

সেখানে কয়েকটি রাত আমি কাটিয়েছিও।

ওর একটি ছোট্ট খাতা সেখানে পেয়েছি,

কাটাকুটি করে তাস খেলার হিসেব লেখা,

তারই এক পৃষ্ঠায়

‘বন্ধু’ সম্মোধনে নিচের লেখাটুকু পাই—

বন্ধু, তুমি আমায় চিনেছিলে,

আমিও তোমায় চিনতে ভুল করিনি,

ক্ষমা করো,

আমার ফেরার আর কোনো পথ নেই,

আমি ফিরতে চাইও না,

আমাকেও কেউ চায় না আর,

তোমাদের মতো কিছু দলছুট মানুষ ছাড়া। 

ফিরতে হলে 

আমাকে একটা বোঝা হয়ে ফিরতে হয়,

তোমাদের করুণায় বাঁচতে হয়।

তাও মেনে নিতাম,

কিন্তু তোমাদের সুস্থ সুখের 

এক চিলতেও আমি কেড়ে নিতে চাই না।

জীবনের আলো আধাঁরির খেলায় 

আধারই এখন আমার একমাত্র পথ,

তোমাদের কখনই আমি জড়াতে চাইনি।

হয়ত ঘৃণা করেছো,

মুর্খতার পরিচয় পেয়েছো।

তোমাদের সাথে একসাথে চলিনি,

নানান অজুহাতে তোমাদের এড়িয়ে চলেছি।

দাঁতে দাঁত চেপে

আমাদের ভালোবাসা ভুলতে হয়, ভুলেছিও সব। 

কখনো কখনো মনে পড়ে,

ক্ষণে ক্ষণে কার কথা ভেবে যেন

এখনো আমি আনমনা হই,

অনুমানে কিছু কষ্ট পাই,

অনুভবে এখনো আমার কিছু শিহরণ জাগে।

নাগাল পাই না,

নেশার ঘরে আবার সব ভুলে যাই।

বন্য হয়েছি, বিপন্ন হয়েছি,

সবচেয়ে বেশি তো ভালোবেসেছি।

পৃথিবীর একজন মানুষও তা জানলে

আমার মতো বুনো মানুষের পূর্ণ প্রাপ্তি হয়।

বন্ধু, ভালোবাসি বলেই তো তোমাদের এত ভুলি।

পুনশ্চঃ ওর লেখাটুকু আমি এখানে হুবহু তুলে দিয়েছি, তবে কিছু কিছু ব্যক্তিগত কথা বাদ দিয়েছি। বর্ষাকালে অলস দাঁতে ডাঁটা পিষে রস খেয়ে ছোবড়া ফেলে দেওয়ার মতো এদেশ, এদেশের রাজনীতি শাওনকে (ছদ্মনাম) হত্যা করেছে। 

Next Post

ছোটগল্পঃ ভয় // দিব্যেন্দু দ্বীপ

একবার মরুদেশ ফৈরাতে ভয়ঙ্কর কিছু রোগ দেখা দেয়। শিশুরা বাড়ছে না, নারীদের ত্বকে এবং চুলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেকে লিভার এবং কিডনি ফেইলিউর হয়ে মারা যেতে থাকে। সে অনেককাল আগের কথা। ৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের কথা। ফৈরাতের সরকার তখন বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। ফৈরাত তখন চলত একটি দ্বিস্তরের সরকার ব্যবস্থা […]
ভয়